আমার প্রথম প্রেম ও একটি বন্ধুত্তের গল্প...DAYANG DY 100-15

This page was last updated on 06-Nov-2023 10:02pm , By Shuvo Bangla

ছোটবেলা থেকেই আমি মোটরসাইকেলের উপর আমার অনেক ঝোঁক ছিল। যখন থেকে আমি বুঝতে শুরু করি এবং আব্বুর সামনে মোটরসাইকেলের ট্যাঙ্কের উপর বসি তখন আমার আব্বুর একটা লাল রঙের হোন্ডা সিডি ৭০ মোটরসাইকেল ছিল। 

এভাবে চলতে চলতে আমি যখন ক্লাস ৭-এ পড়ি (১৯৯৬সন) এক বন্ধুর বাবার (ইয়ামাহা আর-এক্স-এস ১১৫) দিয়ে প্রথম দিনেই বিনা আছারে মোটরসাইকেল চালাই, লোকেশান টা ছিল খুলনা জিলা স্কুলের মাঠ। ওই দিনের পর থেকেই সুযোগ পেলেই একটুআধটু মোটরসাইকেল চালাই, পরবর্তীতে আব্বুকে বলার পরেই সে তার হেলমেট আর মোটরসাইকেলের চাবিটা আমাকে দিয়ে দেয়।

আমার প্রথম প্রেম ও একটি বন্ধুত্তের গল্প...DAYANG DY 100-15

 

ওই মুহূর্তটা আমার আমার জীবনের স্মরণীয় একটা মুহূর্ত ছিল। দেখতে দেখতে এস.এস.সি (১৯৯৯সন) এবং এইছ.এস.সি পাশ করার পর থেকে নিজের একটা মোটরসাইকেলের চাহিদা বাড়তে থাকল। প্রতিনিয়তই আব্বু আর আম্মুর কাছে আবদার আমাকে একটা মোটরসাইকেল কিনে দাও.. অতঃপর সব কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ২০০৩ সালের ৩১শে মে সকাল ১০.৫১ মিনিটে আমি নিজ মোটরসাইকেলের মালিক হই। মোটরসাইকেলটি ছিল রানার-এর DAYANG DY 100 -15। এটি ১০০সিসি ক্ষমতা সম্পন্ন একটা স্পোর্টস লুক মোটরসাইকেল যা ওই সময়ে যেকোনো মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য যথেষ্ট ছিল। বলা বাহুল্য মোটরসাইকেলটি এখনও (২০১৫সন) সহজ ভাবেই মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে যাচ্ছে। আজকে BikeBD- তে আমার অতি আদরের এই মোটরসাইকেলটির ছোট্ট একটা রিভিউ আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।

প্রথম চালানোর অনুভুতি

প্রথম থেকেই লো-হাইট জাপানী মোটরসাইকেল (আর-এক্স-এস ১১৫, হোন্ডা সিডি ৭০, ৮০, ১১০, সি.জি ১২৫,  ইয়ামাহা ডিলাক্স, সি-ডি-আই) চালিয়ে অভ্যাস কিন্তু ডায়াং মোটরসাইকেলটি ওগুলোর তুলনায় বেশ উঁচু ছিল, যেজন্য আমি ঠিক মত মাটিতে পা পাচ্ছিলাম না। যাই হোক তখন মনটা শুধুই ছটফট করছিল যে কখন চালাবো। অতঃপর চাবিটা দিয়ে ইগ্নিশন চালু করলাম, প্রথম সেলফ স্টার্ট, হাল্কা করে চাপ দিতেই গম্ভীর শব্দে মোটরসাইকেলটি স্টার্ট হয়ে গেল, (শব্দটা এখনও আমার কানে বাজে) ৪ গিয়ারের মোটরসাইকেলের সামনে আপ এবং পেছনে ডাউন ছিল।

dayang dy 100

অতঃপর গিয়ার শিফট করে চালানো শুরু করলাম। সে এক অন্য রকম অনুভুতি, এলয় রিম, ডিস্ক ব্রেক (ওই সময়ে যা ছিল সোনার হরিণের মত) থাকার কারনে ব্রেকিং টাও ছিল অসাধারণ। সেই সাথে ১২ভোল্টের হর্ন, পাসিং সুইচ, ইঙ্গিন কিল সুইচ, গিয়ার ইন্ডিকেটর, ট্রিপ মিটার ইত্যাদি। সব মিলিয়ে এমন একটা অনুভুতি ছিল যেমনটি হয়তো এখনকার সময় সি.বি.আর চালালেও আসেনা।

গঠন ও লুক

আগেই বলেছি মোটরসাইকেলটি তথকালীন সময়ের প্রাপ্য মোটরসাইকেল সমূহের থেকে উঁচু, ১৬ লিটারের বড় ট্যাঙ্ক, গম্ভীর শব্দ, স্পোর্টস লুক, সাথে স্পোর্টী হলুদ রঙ, এলয় রিমের সাথে ডিস্ক ব্রেক থাকার কারনে সকলের নজর কাড়তো। খুলনা শহরের এমন কেউ ছিলোনা যে মোটরসাইকেলটীকে চিনে না।

“চায়না বেশি দিন যায়না” কথাটি আমি কোন ভাবেই মানতে পারিনা, আমার ডায়াং মোটরসাইকেলটি ওজনে ছিল ১২১কেজি (ড্রাই ওয়েট) এবং এখন (নভেম্বর ২০১৫) পর্যন্ত ক্লাচ প্লেট আর সিডিআই ইউনিট টা ছাড়া আর কোন কেছুই বদলাতে হয়নাই (উল্লেখ্য বাল্ব, ব্রেক-শু, হ্যান্ডল গ্রিপ, টায়ার, ক্লাচ প্লেট, মিটার কেব্‌ল, পিকআপ এবং ক্লাচ কেব্‌ল এগুলা বাদে :p)

dayang  in bangladesh

কোয়ালিটি এবং ডিউরেবিলিটি

মোটরসাইকেলটির প্রতিটা পার্টস খুবই উন্নত মানের ব্যাবহার করা হয়েছে। আজ ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও ৮৫% পার্টস স্টক পার্টসেই চলছে। ইঞ্জিন এখন পর্যন্ত খোলা হয়নি। গত বছর জাস্ট ডিস্ক ব্রেক সু টা রিপ্লেস করেছি, রানারে না পাওয়ার কারনে অরিজিনাল অ্যাপাচি আর.টি.আর-এর টা লাগাতে হয়েছে (দুইটাই একই সাইজ)।  আর ৩৫,০০০ কিলো এবং ৫৫,০০০ কিলো-তে দুবার ক্লাচ প্লেট পালটিয়েছি, মিটার কেব্‌ল একবার পালটিয়েছি, পিকআপ এবং ক্লাচ কেব্‌ল বদল করেছি সুধুমাত্র স্মুথনেস মোড অ্যাক্টিভ রাখার জন্য। একটা কথা বলে রাখা ভাল, আমি কখনই বাজারের নকল পার্টস ব্যাবহারের পক্ষপাতি না। 

ইঞ্জিন শক্তি ও গতি

প্রথম থেকেই একটা বিষয় লক্ষ করেছি যে, ৮.২ বি.এইছ.পি @৭৫০০ আর.পি.এম মোটরসাইকেলটির গতি শুরুর দিকে কম থাকলেও টপ গিয়ারে গতি ভাল পাওয়া যেত। মোটরসাইকেলটির গায়ে এবং কাগজপত্রে ১০০সিসি উল্লেখ থাকলেও নিঃসন্দেহে এটি ১০০সিসি মোটরসাইকেলের থেকে অনেক ভাল পারফর্ম করত। বলা বাহুল্য ১০০সিসি ইঞ্জিন ক্ষমতা বিশিষ্ট এই মোটরসাইকেলটি থেকে আমি ১১৪ কে.এম.পি.এইচ (সিঙ্গেল) সর্বচ্চ গতি পেয়েছি। তবে লক্ষণীয় ১গিয়ারে দারিয়ে থাকা অবস্থায় পেছনের ক্যারিয়ার ধরে রেখে আমার বন্ধুদের কেউ, এমন কি ২জন মিলেও মোটরসাইকেলটি থামিয়ে রাখতে পারত না।

Also read: আমার মোটরসাইকেল চালানোর শুরু ও Cafe Racer বানানোর গল্প

dayang bike in bd

মাইলেজ

শোরুমের ভাষ্য মতে মোটরসাইকেলটি থেকে প্রতি লিটারে ৫৫-৬০ মাইলেজ পাওয়ার কথা তবে আগে ৪৫-৫০ কে.এম.পি.এল এর বেশি পেয়েছি বলে মনে পরেনা। আর বর্তমানে মোটরসাইকেলটি থেকে আমি ৩২-৩৫ কে.এম.পি.এল এর বেশি মাইলেজ পাচ্ছি না। উল্লেখ্য আমি এখনও স্টক কারবুরেটরের সাথেই আছি।

ব্যাল্যান্স এবং ব্রেকিং

মমহান আল্লাহ পাকের অশেষ রহমতে আমি আর আমার আব্বু দুজনে বিগত সময়ে বেশ অনেক কয়টা মোটরসাইকেলের মালিক হয়েছি, একের পর এক কেনা, বিক্রয় করা আবার কেনা চলতে থাকলেও কেন জানি এই মোটরসাইকেলটি আমি বিক্রয় করতে পারিনি, হয়তো এটা অনেক দিন চালানোর ফল কিন্তু গত ১২ বছর ব্যাবহারকালে এই মোটরসাইকেলটি নিয়ে আমি কোনদিন কোন দুর্ঘটনার শিকার হইনি। তবে হ্যাঁ, অনেক কঠিন তর পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হয়েছে কিন্তু ঠিকই বের হয়ে এসেছি।

dayang

ডাইমণ্ড চেসিস, হ্যান্ডেলটি পাইপের এবং বড় হবার কারনে মোটরসাইকেলটির ব্যাল্যান্সিং এবং ব্রেকিং খুব ভাল। ড্রাইভার এবং একজন পিলিওনের জন্য সিটিং পজিশন খুব ভাল, তবে ৩জন বসা খুবই কষ্টসাধ্য (যদিও আমি কখনই ২জন পিলিওন নিয়ে রাইড করিনা)। ডিস্ক ব্রেকের পারফরম্যান্স ভাল, বৃষ্টিতে ভিজে অনেক চালিয়েছি, কিন্তু পানি লেগে ডিস্ক কখনই আক্সিডেন্টাল লক হয়নি। স্পীড যতই থাক কখনই হার্ড ব্রেক করে সমস্যায় পড়িনি। ওভারঅল মোটরসাইকেলটি চালিয়ে আমি খুবই সন্তুষ্ট।

daynag bike price in bd

Also read: ট্রাফিক পুলিশের সাথে ইফতারের আয়োজন!

লং রাইড

যেহেতু আমার বাড়ি খুলনাতে কিন্তু থাকি ঢাকায় সেহেতু মাঝে মধ্যেই মোটরসাইকেল নিয়ে আমাকে ঢাকা খুলনা যাতায়াত করতে হয়, সেক্ষেত্রে সুযোগ পেলেই জার্নির জন্য আমি মোটরসাইকেলকে বেশি প্রাধান্য দেই। বর্তমানে আমি একটা লাস্ট মডেলের সি.বি.যেড ১৫০সিসি মোটরসাইকেল ব্যাবহার করছি যেটা দিয়ে ২২০ কিলো (আপ) চালাতে গেলে ঘাড়ের কাছে এক ধরনের ব্যাথা অনুভব করি, যেটা আমি আগে পালসার ১৫০ তেও অনুভব করেছি। কিন্তু হাঙ্ক/ এফ।যেড/ কীওয়ে আর.কে.ভি/ হিরো স্প্লেন্ডার+ এবং এই ডায়াং টায় কখন কোন ব্যাথা অনুভব করিনি। যদিও মোটরসাইকেলটি এখন আগের মত শক্তিশালী নেই তবুও গত ঈদে ঢাকায় আসার সময় টপ স্পীড ৮৭ টাচ করেছি। আর ইঞ্জিন ওভারহিট জাতীয় কোন প্রব্লেম কখনো ফেস করিনি। 

এক নজরে মোটরসাইকেলটির ভাল ও খারাপ দিক সমুহ

সব কিছুরই ভাল খারাপ আছে, এই মোটরসাইকেলটি ও তার উরধে নয়। ১২ বছরে মোটরসাইকেলটির যে ভাল এবং খারাপ দিক গুলো আমি পেয়েছি তা বর্ণনা করার চেষ্টা করছি।

ভালো দিকঃ

১। মজবুত গঠনের সাথে স্পোর্টি লুক,

২। পাসিং সুইচ, গিয়ার ইন্ডীকেটর, ট্রিপ মিটার, ইঞ্জিন কিল্ সুইচ, ইলেক্ট্রিক/ কিক স্টার্ট,

৩। এলয় হুইল, মোটা চাকা, ডিস্ক ব্রেক,

৪। ১৬ লিটারের বড় ট্যাঙ্ক,

৫। আরামদায়ক সিটিং পজিসন,

৬। কম্ফোরটেবল রাইডিং,

৭। রানার, যা বাংলাদেশের ভেতর নাম করা সার্ভিস সেন্টার,

৮। সহজপ্রাপ্য এবং সহজলভ্য পার্টস,

৯, ডিসি ৩৫ ভোল্ট হেডলাইট যা থেকে ০ পিকআপেও সম্পূর্ণ আলো পাওয়া যায়,

১০। মোটরসাইকেলটিতে ১২ ভোল্ট ৯ আম্পিআর ব্যাটারি ব্যাবহার করা হয়েছে,

১১। চওড়া এবং ওয়েল অ্যাডজাস্টাএবল রেয়ার ভিউ মিরর, যা থেকে পেছনের কোন কিছুই লুকাতে পারেনা,

১২। রিজেনবল দাম, ২০০৩ সালে শোরুম মূল্য ছিল মাত্র ৬৫,০০০ টাকা।

খারাপ দিকঃ

১। টারনিং রেডিয়াস কম, অল্প জাইগায় ঘুরানো যায়না,

২। সিট ছোট হওয়ায় এই বাইকে ২ জনের বেশি নেয়া বেশ কষ্টসাধ্য,

৩। জ্বালানী সাশ্রয়ী নয়,

৪। টিউবের টায়ার, পাংচার হওয়ার ঝামেলা থেকেই যায়,

৫। গ্রউন্ড ক্লিয়ারেন্স তুলনামুলক কম।

মোটরসাইকেলটীকে যদি ১০-এর ভেতর রেট করতে বলা হয় তাহলে আমি ওভারঅল ৭.৫ দিব (এটি একান্তই আমার নিজেস্ব মত)।

dayang dy 100-15 review

১২ বছরে ফিরে দেখা

১২ বছরে এই মোটরসাইকেলটি আমাকে অনেক কেছুই দিয়েছে, একেতো নিজের প্রথম মোটরসাইকেল, তার পড়ে কলেজের প্রথম পা ফেলা। আমার সব কটা বন্ধুরই মোটরসাইকেল আছে এবং আল্লাহ্‌র রহমতে আমরা সবাই সেই মাপের আড্ডাবাজ। মোটরসাইকেলটীকে নিয়ে অনেক জাইগায় গিয়েছি, অনেক স্মৃতি। যা কোন দিনও ভুলতে পারব না। শুধু আমি না, রিভিউ টা যারা আই মুহূর্তে পরছেন তাদের মধ্য অনেকরই এই মোটরসাইকেলটির সাথে সুন্দর মুহূর্তের স্মৃতি রয়েছে। ৮০,০০০+ কিলোমিটার পথ চলায় কখনো এই মোটরসাইকেলটি আমাকে লজ্জায় ফেলেনি। নীচে আমি এই ১২ বছরের কিছু ছবি একসাথে দেখানোর চেষ্টা করলাম।

dayang bangladesh review

সত্যি বলতে রিভিউ লেখার মত সময় আমার হয়ে উঠেনা, অফিস করে বাসায় ফেরার পর ছেলে ঘারের উপর উঠে বসে থাকে :p কিন্ত এই মোটরসাইকেলটা এমনই একটা মোটরসাইকেল যেটাকে আমি যদি বাংলাদেশের বাইক কমিউনিটির সাথে পরিচয় করিয়ে ’না দেই তাহলে নিজের কাছেই অপরাধী হয়ে থাকব। এসব কথা চিন্তা করে গত ১ দিনেই আমি এই ছোট্ট রিভিউটা প্রস্তুত করি। জীবনের ১ম এজাতীয় লেখালেখি, তাই কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন, ধন্যবাদ।


Best Bikes

Honda CB Hornet 160R

Honda CB Hornet 160R

Price: 169800.00

Honda CB Hornet 160R ABS

Honda CB Hornet 160R ABS

Price: 255000.00

Honda CB Hornet 160R CBS

Honda CB Hornet 160R CBS

Price: 212000.00

View all Best Bikes

Latest Bikes

Lifan KPX250

Lifan KPX250

Price: 0.00

Lifan Jojo 110

Lifan Jojo 110

Price: 0.00

Lifan Hunter 150

Lifan Hunter 150

Price: 0.00

View all Sports Bikes

Upcoming Bikes

Bajaj Pulsar NS150

Bajaj Pulsar NS150

Price: 0.00

Bajaj Pulsar 400

Bajaj Pulsar 400

Price: 0.00

CFMoto 300SS

CFMoto 300SS

Price: 510000.00

View all Upcoming Bikes