Suzuki Gixxer Fi ABS ১২,০০ কিলোমিটার রাইড- মেহেরাব হোসেন রিজন

This page was last updated on 27-Jul-2024 10:00pm , By Raihan Opu Bangla

আমি মেহেরাব হোসেন রিজন। আমি গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর উপজেলার বসবাস করি। আমি জীবনে প্রথম বাইক রাইড করি আমার চাচার বাইক দিয়ে । বাইক চালাতে পারতাম না প্রথম প্রথম, বাসা থেকে বকাবকি করত কিন্তু তবুও হাল ছাড়িনি। সেসব গল্পের সাথে আজ আমি আমার রাইড করা Suzuki Gixxer Fi ABS ১,২০০ কিলোমিটার রাইডের গল্প শেয়ার করব।

Suzuki Gixxer Fi ABS ১২,০০ কিলোমিটার রাইড

suzuki gixxer fi abs 2020 user লুকিয়ে লুকিয়ে বাইকের চাবি নিয়ে বেরিয়ে পড়তাম। শুধু জানতাম যে কিভাবে স্টার্ট করতে হয়। কিন্তু কিভাবে গিয়ার চেঞ্জ করতে হয় তা জানতাম না। টানা দু'দিন এরকম করার পর আমার এক বড় ভাই আমাকে গিয়ার ফালানো এবং উঠানো শেখায়। তারপর থেকেই শুরু হয় আমার যাত্রা। সালটা ছিল ২০১৫। পরে ধীরে ধীরে বাইকের প্রতি আরো টান চলে আসে। বাসায় বাইক না দিলে কান্নাকাটি শুরু করতাম। বাইক চালানোর পরে মনটা কেমন যেন এক অন্যরকম শান্তিতে ভরে যেত যা বলে প্রকাশ করতে পারবো না। বাইক চালিয়ে ভ্রমণ করতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। আমার স্বপ্ন বাইক দিয়ে আমি ছাড়া বাংলাদেশে ঘুরবো এবং স্বার্থ হলে আমি বাংলা দেশের বাইরের বিভিন্ন দেশেও ভ্রমণ করতে চাই। অবশেষে দীর্ঘ চার বছর চাচার বাইক চালানোর পর আমার চাচা আর আমার বাবা দুই জন মিলে আমাকে গত ১৪ জুলাই, আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর দিন গুলোর মধ্যে একটা এবং ১৫ ই জুলাই ছিল আমার জন্মদিন মানে আমার সবচেয়ে স্মরণীয় জন্মদিন।

gixxer fi abs in bangladesh 

আমি মূলত Yamaha MT15 বাইকটি কিনতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমার সামর্থ্ ততটুকু ছিলনা । পরে আমার এক বন্ধুর কোথায় আমি Suzuki Gixxer SF 155 2018 মডেল পছন্দ করি কিন্তু শোরুমে গিয়ে দেখি 2018 SF মডেলটি ছিল না। পরে দেখলাম 2019 Suzuki Gixxer Fi ABS এবং কার্বুরেট মডেলটি লঞ্চ করেছে ফলে আমার কাছে Suzuki Gixxer Fi ABS ভার্সন অনেক ভালো লেগেছে পরে আমি সাথে সাথে বাইকটি কিনেছি। বাইকের দাম ছিল ২,৩৯,৯৫০টাকা।

আমার Suzuki Gixxer Fi ABS বেছে নেওয়ার মূল কারণ হলো এর পারফরম্যান্স, ব্রেকিং সিস্টেম, মাইলেজ, সিঙ্গেল চ্যানেল এবিএস, লুকস ইত্যাদি। আমার চাচা বলছিল কার্বুরেটর কিনতে বাট আমার কাছে এফআই ভালো লেগেছিল ফলে তারা আমার পছন্দকেই প্রাধান্য দিয়ে এটাই কিনে দেয়। তাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমার স্বপ্নটা পূরণ করার জন্য। বাইকটি কেনার ২ মাস আগে থেকে আমি রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারতাম না কখন আমাকে একটি বাইক কিনে দিবে তারা এটা ভেবে। প্রতিদিন যখন এই বাইকটি নিয়ে বের হয় আমি আমার মনে অন্য রকম এক প্রশান্তি চলে আসে ইচ্ছে হয় চলে যাই দূর কোন অজানায়। বাইক চালালে মনটা খুশিতে ভরে যায় সব কষ্ট দূর হয়ে যায়। আমি আমার বাইক নিয়ে এখন পর্যন্ত ১২০০ কিলোমিটার পাড়ি জমিয়েছি এবং মাইলেজ পেয়েছি ৪৩+ কিলোমিটার প্রতি লিটার নিয়ে আমি খুবই সন্তুষ্ট।

gixxer fi abs speedometer 

এই পর্যন্ত চালানোর পর আমি আমার বাইকে একটি মাত্র সার্ভিস নিয়েছি। প্রথম সার্ভিসটি নেওয়ার পর আমার বাইকটি আরো স্মুথ হয়ে যায়। আমি আমার বাইকটি নিয়ে যথেষ্ট সন্তুষ্ট। আমি প্রতি সপ্তাহে অন্তত দুইবার আমার বাইক ওয়াশ করি নিজে নিজেই। আমি বাইক ওয়াশ করার জন্য মটর কিনে নিয়েছি যাতে আমার কষ্ট কম হয় এবং সুন্দরভাবে একটি ওয়াশ করতে পারি। তাছাড়া প্রতিদিন বাইকটি বের করার সময় আমি ভালোভাবে মুছে নেই এবং রাতে রাখার সময় আবার ভালোভাবে মুছে বাইকের কভার দিয়ে ঢেকে রাখি যাতে আমার বাইকটি সুন্দর পরিষ্কার থাকে।

আমি এই পর্যন্ত দুইবার ইঞ্জিন ওয়েল পরিবর্তন করেছি। দুইটাই ছিল মতুল। একটি আমাকে শোরুম থেকে দিয়েছিল অন্যটি আমি বাহির থেকে কিনে নিয়েছিলাম। আমি যথেষ্ট নিয়ম-কানুনের ভিতর দিয়ে আমার ব্রেকিং পিরিয়ড সম্পন্ন করেছি, এখনো ৯০০ কিলোমিটার বাকি আছে তাই আমি আমার বাইকের টপ স্পিড চেক করতে পারিনি ইনশাআল্লাহ ব্রেক ইন পিরিয়ড শেষ হবার পর আমি আমার টপ স্পিড চেক করতে পারব। বাইক নতুন হবার কারণে আমি এখনো তেমন কোনো মডিফিকেশন করতে পারিনি কারণ আমি বাইক নিয়ে বেশি দূর যেতে পারি না আমার বাইকের এখনো নাম্বার প্লেট আসেনি। তবুও আমার বাইক দিয়ে আমার সর্বোচ্চ জার্নি ছিল ৭০ কিলোমিটার।

বাইকটির পাঁচটি ভালো দিক হলঃ

  • বাইকটি দেখতে খুবই সুন্দর
  • বাইকটির পারফরম্যান্স, ব্রেকিং সিস্টেম খুবই ভালো
  • প্রতি লিটারে মাইলেজ ৪৩+ কিলোমিটার পেয়েছি
  • সিঙ্গেল চ্যানেল এবিএস থাকার কারণে ব্রেক ধরে খুবই কমফোর্ট ফিল করি
  • এর সিটিং পসিশন খুবই আরামদায়ক

বাইকটি বেশিদিন ব্যবহার করা হয়নি তবুও বাইকের যেদিক গুলো আমার কাছে খারাপ মনে হয়েছে সেগুলো হলোঃ

  • এর দামটা একটু বেশি
  • দামের সাপেক্ষে এর ইঞ্জিনটা যদি ওয়ল কুল করতো তবে হয়তো একটু বেশি ভালো হতো
  • এর ইঞ্জিন খুব তাড়াতাড়ি গরম হয়ে যায়

আপাতত এই বাইকের আর কোন খারাপ দিক আমার চোখে পড়েনি। আমার বাইকটির বয়স আমার কাছে ৪০ দিন। ইনশাআল্লাহ এর পারফর্মেন্স, সিটিং পজিশন, মাইলেজ ইত্যাদি দেখে আমি খুবই সন্তুষ্ট এবং আমি চাই এটা দিয়ে আমি সারা বাংলাদেশে প্রমাণ করব। দোয়া করবেন। লেখায় কোন ভুল ত্রুটি থেকে থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ।ধন্যবাদ।

লিখেছেনঃ মেহেরাব হোসেন রিজন

আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।