বাইক ব্রেক ইন পিরিয়ড কি ? ব্রেক ইন পিরিয়ড নিয়ে পরামর্শ । জানুন বিস্তারিত
This page was last updated on 01-Feb-2022 11:13am , By Shuvo Bangla
বাইক ব্রেক ইন পিরিয়ড কি ? এটা হচ্ছে সেই সময় যখন ইঞ্জিন একেবারে নতুন থাকে, বিশেষত প্রথম কয়েকশো বা হাজার (০—১০০০) কিমি। এ সময়টাতে ইঞ্জিনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ যেমন পিস্টন রিং, ভাল্ব ও সিলিন্ডার বোর খসখসে থাকে, যেটা যথাযথ প্রক্রিয়ায় দূর করতে হয়। সেজন্য বাইকারকে এ সময়ে বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয় যাতে ইঞ্জিনের ওই যন্ত্রাংশগুলো মসৃণ হয় এবং বাইক যথাযথ মাইলেজ ও সার্ভিস দিতে পারে।
[caption id="attachment_3612" align="aligncenter" width="800"] নতুন সিলিন্ডার ও ব্রেক ইন পরবর্তী সিলিন্ডারের চিত্র[/caption]

ধৈর্যশীল হতে হবে :
সাধারণত নতুন বাইক কিনেই আমরা খুব উত্তেজিত হয়ে পড়ি। কিন্তু যেহেতু প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় আমাদের দেশে বাইকের দাম বেশি এবং বাইকটি থেকে আমরা ভালো মাইলেজ ও দীর্ঘ স্থায়িত্ব প্রত্যাশা করি, সেজন্য ব্রেক ইন পিরিয়ড পার না হওয়া পর্যন্ত ধৈর্যবান হতে হবে। আবেগের বশে বাইক চালালে হবে না, বরং নিয়ম মেনে চলতে হবে। তা না হলে অতি ভালোবাসার বাইকটির ইঞ্জিন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

প্রথম চিত্রের সিলিন্ডারটির ব্রেক ইন যথাযথ হয়নি এবং দ্বিতীয়টির ব্রেক ইন নিয়ম মতো হয়েছে। (হোন্ডা এফ৩ পিস্টন)
বাইক ব্রেক ইন পিরিয়ড এর সময় কী করতে হবে?

বাংলাদেশে সব বাইক (বাজাজ পালসার, টিভিএস অ্যাপাচি আরটিআর, হিরো সিবিজেড, ইয়ামাহা এফজেডএস, ফেজার) মূলত ভারত থেকে আমদানি করা হয়। তাই আমি ইঞ্জিন ব্রেক ইনের সেসব নিয়মগুলোই বলবো, যেগুলো ভারতীয় বাইক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মেনে চলতে বলে। এখানে কয়েক কিমি কম-বেশি হতে পারে, তবে ব্রেক ইন শেষে আপনি পাবেন জ্বালানি সাশ্রয়ী ও দীর্ঘস্থায়ী ইঞ্জিন।
১. কেউ চাইলে দুই ভাগে ব্রেক ইন পিরিয়ড পার করতে পারেন, প্রথমে ০ থেকে ৫০০ কিমি ও পরে ৫০১ থেকে ১০০০ কিমি।
২. ব্রেক ইনের সময় উচ্চ আরপিএমে ইঞ্জিন চালু করবেন না।
৩. ইঞ্জিন চালু করে কমপক্ষে ১ মিনিট অপেক্ষা করুন।
৪. যতো দ্রুত সম্ভব (৩০০—৪০০ কিমি) প্রথমবার ইঞ্জিন ওয়েল পরিবর্তন করুন। ওয়েল ফিল্টারও পাল্টিয়ে ফেলুন। এটা পাল্টানো তেমন কঠিন কিছু না। দ্বিতীয়বার ১০০০ কিমি এ গিয়ে ইঞ্জিন ওয়েল ও ওয়েল ফিল্টার পাল্টিয়ে ফেলুন। তবে সার্ভিস সেন্টারের ইঞ্জিনিয়ার প্রথমবার এতো দ্রুত ইঞ্জিন ওয়েল ও ফিল্টার পাল্টানোর ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করতে পারে, টিভিএস এর সার্ভিস সেন্টারে আমি এটা দেখেছি। কিন্তু বিশ্বাস করুন, ভারতের সার্ভিস সেন্টারগুলোতে এটেই করা হয়।
৫. ব্রেক ইন পিরিয়ডের প্রথম ৫০০ কিমি-এ কোনো গিয়ারেই ৪৫০০ আরপিএম অতিক্রম করা ঠিক হবে না। তাছাড়া উচ্চ গিয়ারে কম আরপিএম এও চালাবেন না, যেমন : ৫ম গিয়ারে ২০০০ আরপিএম। এতে ইঞ্জিনের উপর বেশি চাপ পড়ে।
৬. ব্রেক ইনের সময় হাইওয়েতে দূর পাল্লার ভ্রমণে বের হবেন না।
৭. অধিক ওজন (পিলিয়ন) নিয়ে বাইক চালাবেন না, চেষ্টা করুন একাই চড়ার।
৮. ব্রেক ইনের দ্বিতীয়ার্ধে অর্থাৎ ৫০০—১০০০ কিমি এ অনেক বাইক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান (ইয়ামাহা) বলতে পারে ৬০০০ আরপিএমে চালালেও সমস্যা নেই। কিন্তু তার পরও ৪৫০০ আরপিএম অতিক্রম না করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। তাছাড়া বেশিক্ষণ একই আরপিএমেও বাইক চালানো ঠিক হবে না।
৯. একটানা ৩০ মিনিট বা ৩০ কিমি চালানোর পর কিছুক্ষণ থামা উচিৎ। এতে বাইকের ইঞ্জিন ঠাণ্ডা হওয়ার সময় পাবে।
১০. ব্রেক ইন পিরিয়ডে খুব বেশি অ্যাক্সিলারেশন তোলা ঠিক নয়।
১১. ব্রেক ইন পিরিয়ডে ইঞ্জিন ওয়েল পরিবর্তন করতে শুধু খনিজ ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার করুন। সিনথেটিক ইঞ্জিন ওয়েল এ সময়ে পরিহার করে চলুন।
১২. ব্রেক ইন শেষে বাইকের সর্বোচ্চ আরপিএমে তোলা উচিৎ।
বাইক ব্রেক ইন পিরিয়ড নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা :
আমি সম্প্রতি টিভিএস অ্যাপাচি আরটিআর কিনেছি এবং ব্রেক ইনের সময় উপরের নিয়মগুলো মেনে চলেছি। যার ফলে বাইকটি এখন পর্যন্ত ৭১১ কিমি চালিয়ে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হইনি। বরং প্রতিদিনই বাইকটি আরো স্মুথ হয়ে উঠছে। তাই বলা যায়, যেকোনো বাইক ব্যবহারকারীই (১০০, ১৫০ বা যেকোনো সিসির) মোটরসাইকেলের ব্রেক ইনের সময় এ নিয়মগুলো মেনে চললে লাভবান হবেন। ভালো থাকুন এবং সাবধানে বাইক চালান।
-By Tayear Chowdhury