সাজেক ট্যুর টিম সাওয়ারি - দ্বিতীয় পর্ব

This page was last updated on 05-Oct-2023 12:28pm , By Saleh Bangla

কেউ-ই শান্তির ঘুম ছেড়ে উঠতে চাইলোনা, অগত্যা আমি আর আতিক বের হয়ে পড়লাম। মিশন..  যেভাবেই হোক সাজেক এর সূর্যোদয় মিস করা যাবেনা। সূর্য মামার উঠতে তখনো কিছুটা বাকী আছে। আমরা দু'জনে কিছুটা ফাকা জায়গার আশায় হাটতে থাকলাম।এক কালে যখন মাত্র কয়েকটা রিসোর্ট ছিলো তখন যে কোনো স্থানে দাড়িয়েই সাজেকের অপরুপ সৌন্দর্য দেখা যেতো। কিন্তু এখন নাকি প্রায় ১০০+ রিসোর্ট। তাই এখন কংলাক পাহাড়,হ্যালিপ্যাড বা একটু ফাকা জায়গাই ভরসা।

সাজেক ট্যুর টিম সাওয়ারি - দ্বিতীয় পর্ব

সাজেক পর্যটকের চাপ থাকায় আমরা পছন্দসই স্থানে থাকতে পারিনি।নয়তো পাহাড়ে কোলঘেষে যে ছোটো ছোটো রিসোর্ট গুলো আছে সেখানে বসেই উপভোগ করা যায় প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য। যাই হোক আমরা কিছুদূর যেতেই পা যেনো আটকে গেলো। এ কি! সামনে কি কুয়াশা নাকি মেঘ! আমরা মেঘের এত উপরে। বুঝলাম মানুষ কেনো এত সাজেক সাজেক করে। মূলত বর্ষাকালেই সাজেক অপরুপ সাজে সজ্জিত হয়। কিন্তু যাকে মেঘের স্বর্গ রাজ্য বলা হয় সে তো সব সময়-ই অপরুপ! আমদের দুজনকেই যেনো রুপকথার কোনো জাদুকর তার মায়াজালে সম্মোহিত করে রেখেছে। আগেও বিমান থেকে মেঘের খেলা দেখেছি কিন্তু এখন যে আমি মেঘের উপর দাঁড়িয়ে! ভাবছিলাম..ইশ। যদি একটু মেঘ ছুয়ে দেখতে পারতাম।

এর ভেতরেই দেখলাম সেই অপরুপ দৃশ্যটি! মনে হলো যে হটাৎ করে সূয্যি মামা কোথা থেকে যেনো উদয় হলো। মনে হচ্ছিলো সে যেনো এতক্ষন মেঘের আড়ালে ডুব দিয়ে থেকে আমাদের সাথে লুকোচুরি খেলছিলো। আমার তো একবার মনে হলো সূর্য মামা বুঝি পাহাড়ের নিচেই ছিলো.. হাহা। আগেও খেয়াল করেছি পাহাড়ি অঞ্চলে কেমন যেনো হুট করে সন্ধা নেমে যায় আবার হুট করে সূর্যোদয় হয়..কি জানি। হয়তো আমার মনের ভূল, কিংবা এর কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও থাকতে পারে। ধীরে ধীরে আলো বাড়তে থাকল আর দূরে পাহাড় পর্বতে ঘেরা মিজোরাম রাজ্যও দৃষ্টিগোচর হলো। বহু দূর থেকে মিজোরাম কেমন জানি রহস্যময় লাগলো। মনে হলো রাজ্যটি মনে হয় কোনো রুপকথার দেশ, হয়তো সেখানে গেলে পেয়ে যাবো লাল পরী,নীল পরীকে। মনে মনে হাসলাম, কি সব ভাবছি! হুম। ধীরে ধীরে রোদ বাড়তে থাকলো আর সাজেকের নিস্তব্ধ রাস্তায় এক এক করে জন সমাগম বাড়তে থাকলো। আমার আবার একেবারেই নির্জন মূহুর্তে প্রকৃতি উপভোগ করার অভ্যাস। তাই আমাদের রিসোর্টের দিকে ফিরতি পথ ধরলাম। সাজেক ২ রিসোর্টে যেয়ে দেখি আমার সঙ্গী সাথীরা সবাই তখনো ঘুম। যাই হোক ঘন্টা খানেকের ভেতর সবাই তৈরি হয়ে বের হয়ে পড়লাম সাজেকের পুরোটা ঘুরে দেখবো বলে।প্রথমেই স্থানীয় এক রেস্তোরাঁয় নাস্তা করে নিলাম সবাই।পরোটা,ডিম ভাজি আর ডাল দিয়ে ভালোই নাস্তা করলাম।রাতের ঘুমের কারণে সবার শরীর এখন তরতাজা তাই সবাই বাইক নিয়ে ধীরে ধীরে কংলাক পাহাড়ের দিকে রওনা দিলাম। কংলাক পাহাড় সাজেকের সব চেয়ে উচু পাহাড়। 

Also Read: মোটরসাইকেল নিয়ে কাশ্মীর ভ্রমন অভিজ্ঞতা (পর্ব৩)

এটা সাজেকের-ই ভেতর। ২-২.৫ কিঃ মিঃ সামনে এগোলেই ইট বিছানো রাস্তা এর পরেই কংলাক পাহাড়।পথে আমরা সাজেকের বিখ্যাত সেই লাল দালানে কিছু ছবি তুললাম। পরে সাজেক যেখানে ০০ কিলো সেখানে বাইকের সাথে আর আমাদের কিছু গ্রুপ ছবি তুললাম। এর পর সবাই এক টানে হ্যালিপ্যাডে উঠে পড়লাম। উঠেই বিপত্তি। সাথে সাথে বিজিবির সদস্যরা বাশি বাজানো শুরু করলো। এখন যে বাইক নিয়ে হ্যালিপ্যাডে ওঠা নিষেধ সেই সাইনবোর্ডটা খেয়াল-ই করিনি। তাড়াতাড়ি কয়েকটা ছবি তুলে নেমে আসলাম।বাইক নিয়ে আর হ্যালিপ্যাডে বেশিক্ষন থাকা হলোনা। এর পর আমরা কংলাক পাহাড়ের পথ ধরলাম। সাজেক ১ পথ যেখানে শেষ সেখানে একটা চায়ের দোকান আছে অনেক বাইকাররা সাধারণত সেখানেই বাইক রেখে ট্রাকিং করে পাহাড়ে ওঠেন। মূলত পাহাড়ে উঠতে হলে খাড়া ঢাল বেয়ে উঠতে হবে, সে সমস্যা নয়। গতকাল তো এর চেয়ে খাড়া খাড়া আর উচু ঢাল বেয়েই সাজেকে আসলাম। কিন্তু সমস্য হলো সেগুলো ছিলো পিচঢালা পথ আর এটা পুরোটাই বালুময়। একটু ঢোক গিললাম। কিন্তু যখন দেখলাম সবাই ঢাল বেয়ে উঠা শুরু করেছে তখন আমিও উঠা শুরু করলাম। প্রায় ৫-৬ ইঞ্চি সমান বালুময় ঢালে আমাদের উঠতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে। 

Also Read: মোটরসাইকেল নিয়ে খরদুংলা ভ্রমন ও মৃত্যুর কাছাকাছি

তারপরেও নিরপদেই কোনো দূর্ঘটনা ছাড়াই চূড়ায় পৌছালাম! এখান থেকে দূরে ইন্ডিয়ান পাহাড় গুলো আরো স্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছিলো। কিন্তু এদিকে সূর্যের তাপ এত-ই প্রখর ছিলো যে আমরা সানগ্লাস পরেও ঠিক মত তাকাতে পারছিলাম না। তাই কিছু ছবি তুলে, প্রকৃতি কিছুটা উপভোগ করে ফিরতি পথ ধরলাম। এবারো আল্লাহর রহমতে নিরপদে নেমে আসলাম। এর পর মোটামুটি দুপুর ১ টার ভেতর আমরা রিসোর্টে ফিরে আসি। আমাদের সিদ্ধান্ত হয় যে আমরা দুপুর ৩:৩০ মিনিটের স্কটে খাগড়াছড়ি ফিরে যাবো। রিসোর্টের রুম আগেই ছেড়ে দিয়েছিলাম আর আমাদের ব্যাগেজ গুলো রিসোর্টের স্টোর রুমে রেখে গিয়েছিলাম। রিসোর্টের মালিক একজন চাকমা আর এই একদিনেই আমাদের সাথে যথেষ্ট আন্তরিক সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিলো। সাজেকের নিয়ম হলো আপনাকে আগেই খাবারের অর্ডার দিয়ে রাখতে হবে নয়তো পরের বেলায় অভুক্ত থাকতে হতে পারে। খাবারের অর্ডার আগেই দেয়া ছিলো। কিছুক্ষনের ভেতরেই খাবারের ডাক আসল। সাজেক এসেছি আর যদি ব্যাম্বু চিকেন শুদ্ধ বাংলায় বাশ মুরগীর স্বাদ না নেই তা কি করে হয়? সাজেক খাবার এবারের খাবারের তালিকায় ছিলো সাদা ভাত,ডাল,সেই জিভে জল আনা মাছ আর পাহাড়ি সবজির মিশ্রন আর ব্যাম্বু চিকেন।ব্যা ম্বু চিকেনের কথা আলাদা ভাবে বলতেই হয়। ফাপা বাশের দু'পাশ আটকিয়ে ভেতরে অদ্ভুদ ভাবে মুরগীর মাংস রাখা হয়। আগে কোনো দিন খাইনি কিন্তু অনেক সুনাম শুনেছি তাই চেখে দেখার জন্য আর তর সইছিলোনা। খাওয়ার পরে বুঝলাম মানুষ বিনা কারণে এত প্রশংসা করেনা। অদ্ভুত সুন্দর সেই স্বাদ এখনো জিভে লেগে আছে। আরেকটা ভূড়িভোজন পর্ব শেষ হলো। এর পর আমরা দ্রুত পোশাক বদলিয়ে তৈরি হয়ে নিলাম। স্কটের তখনো ৩০ মিনিটের মত বাকী। তাই বাকী সময়টুকু সবাই আড্ডা,গল্পে কাটিয়ে দিলাম। অবশেষে আর্মিদের ডাকে সবাই বাইকে উঠে বসলাম। এবার বিদায় নেবার পালা। মনটা কেমন যেনো খারাপ হয়ে গেলো। পাহার-মেঘের এই অপরুপ রাজ্য ছেড়ে কারোর-ই যেনো যেতে মন চাচ্ছিলোনা। কিন্তু বিদায় তো নিতেই হবে! কিন্তু মনে মনে সংকল্প করে ফেললাম..আমি আবারো আসব, ইনশাআল্লাহ বার বার ফিরে আসব এই স্বর্গ রাজ্যে। 


আবারো শুরু হলো দু'পাশের অপরুপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে সেই রোমাঞ্চকর রাইডিং। কোনো রকম সমস্যা ছাড়াই বাঘাইছড়ি,দীঘিনালা পার হয়ে আমরা সন্ধার ভেতরেই খাগড়াছড়ি পৌছালাম। আমাদের বাইক গুলোর কথা আলাদা ভাবে বলতেই হয়। Bajaj Pulsar AS 150 মূলত ভ্রমণ উপযোগী করেই তৈরি করা হয়েছে। তাছাড়া অত্যান্ত শক্তিশালী ইঞ্জিনের কারণে খুব সাবলীল ভাবেই পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়েছে। আর আমাদের টিমে ছিলো তিনটি Lifan KPR। চায়না বাইক হলেও আমি কোনোদিন-ই গতানুগতিক চায়না বাইকের খাতায় বাইকটিকে ফেলিনি। সম্পূর্ন ট্যুরে বাইক গুলোর দূর্দান্ত পারফর্মেন্স তার-ই প্রমান। আর আমার Hero Hunk এর কথা কি বলব? আমি একে ভারী মানুষ তার উপর পিলিয়ন এবং ব্যাগেজ সহ আমার প্রায় ৫০ হাজার কিলো চলা বুড়ো হাংক স্টক ক্লাচপ্লেট আর পিস্টন নিয়ে যেভাবে সাজেকের পাহাড়ে উঠেছে তা দেখে আমি নিজেই হতবাক। জীবনে তখন আরেকবারের মত হাংকের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম...(চলবে)


 লিখেছেনঃ মঞ্জুরুল আল হাসান মুন্না

Best Bikes

Honda CB Hornet 160R

Honda CB Hornet 160R

Price: 169800.00

Honda CB Hornet 160R ABS

Honda CB Hornet 160R ABS

Price: 255000.00

Honda CB Hornet 160R CBS

Honda CB Hornet 160R CBS

Price: 212000.00

View all Best Bikes

Latest Bikes

Cyborg Avant

Cyborg Avant

Price: 0.00

Cyborg Armour

Cyborg Armour

Price: 0.00

View all Sports Bikes

Upcoming Bikes

CF Moto 250CL-C

CF Moto 250CL-C

Price: 429999.00

AIMA AM-Snow Leopard

AIMA AM-Snow Leopard

Price: 0.00

AIMA AM-MINE

AIMA AM-MINE

Price: 0.00

View all Upcoming Bikes