Shares 2

Bajaj Pulsar 150 ৬০,০০০ কিলোমিটার মালিকানা রিভিউ - সুজন

Last updated on 05-Dec-2022 , By Raihan Opu Bangla

আমার নাম এনায়েত হোসেন সুজন (SUJON BBR)। আমার বাসা নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম থানায়। আমি বর্তমানে Bajaj Pulsar 150 বাইকটি ব্যবহার করছি। আজ আমি আমার বাইকটি নিয়ে কিছু অভিজ্ঞতার কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।

Bajaj Pulsar 150 ৬০,০০০ কিমি মালিকানা রিভিউ

বাইক ভালোবাসি এর কারন আমি আল্লাহর অপরূপ সৃষ্টি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে এবং ট্যুর করতে ভালবাসি। ট্যুরের ক্ষেত্রে বাইক এর কোন বিকল্প নেই। আমার জীবনের প্রথম বাইক ছিল Bajaj CT-100

আমি বাইক চালানো শিখেছিলাম 2006 সালের দিকে একটি জংসন 50 সিসি মোটরসাইকেল দিয়ে, মোটরসাইকেলটি ছিল আমার এক বড় ভাইয়ের। মজার বিষয় হলো আমাকে কেউ হাতে ধরে বাইক চালানোর শেখায় নি আমি জাস্ট ভালো সাইকেল চালাতে জানতাম আর বাইক চালানোর নিয়ম গুলো জানতাম। সুযোগ পেলেই আত্মীয়-স্বজন এর বাইক চালানোর ট্রাই করতাম, এভাবেই 2006 সাল থেকে 2009 সাল পর্যন্ত চললো। এরপরে আসলো সেই শুভ দিন মানে আমার বাইক কেনার দিন।

ছোটবেলা থেকেই কেন জানিনা পালসার বাইকের প্রতি একটু দুর্বলতা কাজ করতো মনে-মনে পালসার ভালবাসলেও সেই সময় পালসার কেনাটা সম্ভব হয়ে ওঠেনি । কেনা হলো বাজাজ CT-100 , বাইকটি আমার ফ্যামিলিগত বাইক ছিল, তো তখন থেকেই আমি আমার পকেট মানি বাঁচিয়ে চলার চেষ্টা করতাম এবং ছোটবেলা থেকেই আমার ফ্যামিলিগত একটি ব্যবসা আছে সে ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলাম তখন থেকে টাকা জমিয়ে জমিয়ে আমি 2017 সালে আমার নিজের টাকায় নিজে একটি পালসার বাইক কিনি। বাইক কিনতে গিয়েও পড়েছি এক বিরম্বনায় আমার পছন্দ ছিল 2015-16 মডেলের নিল-কালো রঙের পালসার বাইক,কিন্তু 17 সালে এসে 2016 সালের মডেলের পালসার আমি আর কোথাও পাচ্ছিলাম না অনেক খোঁজাখুঁজি করে জানা গেল যে 2016 মডেল নীল কালারের এই বাইকটি আছে রাজশাহীর একটি শোরুমে।

আমি আর দেরি না করে চলে গেলাম রাজশাহী,যা আমার বাসা থেকে প্রায় 80 কিলোমিটার দূরে,তখন বাইকের দাম ছিল ১,৭৭,৫০০ টাকা। আমি সেখানে কোন প্রকার দামাদামি না করেই বাইকটি নিয়ে নিলাম এবং হয়ে গেল আমার স্বপ্ন পূরণ। আমি যখন আমার বাইকটি প্রথম চালাচ্ছিলাম মনে হচ্ছিল নিজের ভেতরে অন্য রকম একটা অনুভূতি কাজ করছে। আমি মনে করি প্রতিটা ছেলেরই বাইক একটা স্বপ্ন আর সে স্বপ্ন আমারও ছিল,সেটা পূরণ হয়েছে তাও আমার নিজের টাকায় সেটা এমন এক অনুভূতি যা বলে বোঝানো সম্ভব না।

বাংলাদেশে বাজাজ পালসার একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় বাইক। পালসার বাইকটি বাংলাদেশের 150cc সেগমেন্টের একটি বাইক যাতে রয়েছে শক্তিশালী DTSi ইঞ্জিন। নতুন অবস্থায় আমি বাজাজ শোরুম এর সার্ভিসিং সেন্টারে সার্ভিস করিয়েছি, এবং ওয়ারেন্টি পার হওয়ার পরে আমার এলাকার একটি গ্যারেজে প্রয়োজন অনুযায়ী সার্ভিসিং করাই।

আমার বাইকের জ্বালানি হিসেবে আমি সবসময় পেট্রোল ব্যবহার করতাম এবং মাইলেজ আলহামদুলিল্লাহ ভালো পেয়েছি, হাইওয়েতে ৪৩ থেকে ৪৫ এবং সিটিতে ৩৮ থেকে ৪২ যাতে আমি সন্তুষ্ট। আমার আপন বড় ভাইয়ের একটি ব্যবসা রয়েছে যা আমি নিজেই দেখাশোনা করি সেই সুবাদে আমার বাইকটি একটু বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে এবং ব্যবসার ফাঁকে একটু সময় পেলেই আমি বেরিয়ে পড়ি বাইক নিয়ে লং ট্যুরে দেশ ভ্রমণের উদ্দেশ্যে। বর্তমানে আমার বাইকটি ৬৬,০০০ কিলোমিটার চলেছে, যার অধিকাংশই ব্যবহার হয়েছে ব্যবসায়ীক কাজে এবং আমার ট্যুর দেয়ার মাধ্যমে, আমি এই ৬৬,০০০ কিলোমিটার চালানোর মধ্যে সম্পূর্ণটাই পেট্রোল ব্যবহার করেছি ইঞ্জিন অয়েল হিসেবে ব্যবহার করেছি বাজাজের রিকমেন্ড কৃত গ্রেড 20w50।

তিন ধরনের কোম্পানির ইঞ্জিনঅয়েল আমি ব্যবহার করেছি, প্রথমে Visco 3000 তারপর Ptt Challenger এবং পরবর্তীতে GTS Super 4t সবগুলোই ছিল মিনারেল যার প্রত্যেকটির পারফরমেন্সেই আমি বেশ ভালো পেয়েছি। বাইকের মডিফিকেশন তেমন কিছু করিনি শুধুমাত্র স্টক টায়ার থেকে একটু মোটা সাইজের টায়ার ব্যবহার করেছি। সামনে ছিল 80/100-17 আমি সেটি পরিবর্তন করে 90/90-17 এবং পেছনে 100/90-17 এর পরিবর্তে 110/80-17 সাইজের টায়ার ব্যবহার করেছি। টায়ার পরিবর্তন এর কারনে কম্ফোর্ট এবং কন্ট্রোলিং আগের তুলনায় বেশি মনে হয়েছে। স্টক টায়ার থেকে মোটা টায়ার লাগানোর পরেও আমি আমার বাইকটিতে টপ স্পিড পেয়েছি ১৩৬ যা কোন প্রকার ইঞ্জিন মডিফিকেশন ছাড়াই।

অনেক বেশি কিলোমিটার চালানোর কারণে আমার বাইকের কিছু স্টক পার্টস পরিবর্তন করতে হয়েছে যার মধ্যে সাধারণ পার্স বলতে আমি প্রতি ১০-১৫ হাজার কিলোমিটার পর পর স্পার্ক প্লাগ, এয়ার ফিল্টার, ক্লাস কেবল, পিকআপ কেবল, সামনের এবং পেছনের চাকার ব্রেক সু, এগুলো পরিবর্তন করি। শুধুমাত্র নিজের কমফোর্ট এর জন্য ২২-২৫ হাজার কিলোমিটার পর পর আমাকে চেইন সেট পরিবর্তন করতে হয়েছে। এবং ৪০,০০০ কিলোমিটার চালানোর পর আমি বাইকের ইঞ্জিনের বেশকিছু পার্টস পরিবর্তন করেছি যেমন - সিলিন্ডার, ভাল্ব, টাইমিং চেইন, টাইমিং চেইন রাডার, ক্লাসপ্লেট, ব্যালেন্স পিনিয়াম ইত্যাদি এগুলো পরিবর্তন এর অন্যতম কারণ ছিল বাইকের সাউন্ড খারাপ হয়ে গিয়েছিল বাইকের আরপিএম অনুযায়ী স্পিড পাচ্ছিলাম না। ইঞ্জিন অয়েল ড্রেইন দেয়ার সময় তুলনামূলক কম পরিমাণে পেতাম , আমি এই পার্সগুলো পাল্টানোর সাথে সাথেই সমস্যাগুলো দূর হয়ে যায় এবং আবার আগের মতো পারফর্মেন্স পেতে থাকি। এবার আসি বাইকের কিছু ভাল দিক নিয়ে, বাইকের যেই জিনিসটা আমার কাছে সবচাইতে ভালো লেগেছে সেটি হল এটির সিটিং পসিশন। আমি অনেক লং ট্যুর করেছি, কিন্তু আমার কাছে কখনোই বিরক্তিকর মনে হয় নাই বা কখনও কোন পেইন মনে হয়নি।

বাইকটি দেখতে আমার কাছে অসাধারণ লাগে। এই বাইকটিতে ছেলে-বুড়ো সবাইকেই মানায়, এই বাইকের ব্রেক কন্ট্রোলিং আমার কাছে খুবই ভাল মনে হয়েছে। এই বাইকের স্পেয়ার পার্টস সব জায়গাতেই পাওয়া যায় এবং দাম অন্যান্য বাইকের স্পেয়ার পার্টস এর থেকে তুলনামূলক অনেক কম আমি অন্যান্য কোম্পানির ১৫০ সিসি বাইকের সাথে তুলনা করে দেখেছি এর ফাস্ট পিকআপ এবং টপ স্পিড রেসপন্স খুবই ভালো।

Bajaj Pulsar 150 বাইকের কিছু খারপ দিক -

সব বাইকেরই কিছু না কিছু খারাপ দিক থাকবেই তেমন পালসার এর ও আছে সবচাইতে আমার কাছে যেটি খারাপ লেগেছে সেটা হলো এই বাইকের সাউন্ড নষ্ট হয়ে যাওয়া। প্রথম অবস্থায় বাইকের সাউন্ডটি খুব ভালোলাগে কিছুদূর চালানোর পর এই বাইকের ভেতর থেকে আস্তে আস্তে বাজে আওয়াজ আসতে থাকে যা খুবই বিরক্তিকর।
রাতে রাইড করার জন্য এই বাইকের স্টক লাইটের আলো আমার কাছে খুবই সীমিত মনে হয়েছে , যার কারণে আমার এক্সট্রা দুটি ফগ লাইট ব্যবহার করতে হয়েছে।
মাত্র ১৫ হাজার কিলোমিটার চালানোর পর কোন কারন ছাড়াই আমার বাইকের পিছনের সাসপেনশন থেকে বাজে ধরনের শব্দ আসতে থাকে আর ঝাকি আসতে শুরু করে এবং সাসপেনশন থেকে অয়েল বের হতে থাকে। যার ফলে আমাকে সাসপেনশন জোড়া পরিবর্তন করতে হয়, যা আমাকে খুবই হতাশ করেছে।এ বাইকের স্পেয়ার পার্টস গুলোর কর্মক্ষমতা খুবই সীমিত মনে হয়েছে, যার ফলে বার বার আমাকে এসব পার্টস গুলো পরিবর্তন করতে হয়েছে, ব্রেকিং এর ক্ষেত্রে এই বাইকের পিছনের চাকায় স্কিড করার প্রবণতা রয়েছে যা রাইডারের জন্য কিছুটা বিপদজনক।


বাইকটি নিয়ে বাংলাদেশের প্রায় ৫০ টি জেলা ভ্রমণ করেছি, কখনোই বাইকটি আমাকে নিরাশ করেনি। আমার ইচ্ছা আমি বাইক নিয়ে সমগ্র বাংলাদেশ ভ্রমণ করব এবং একসময় দেশের সীমানা পেরিয়ে দেশের বাইরেও ভ্রমণ করব।আমি বাইক নিয়ে ট্যুর করার জন্য এবং সেফটি মেইনটিন করে বাইক চালানোর জন্য সবাইকে আগ্রহী করার জন্য বড়াইগ্রাম বাইক রাইডার্স BBR নামে একটি গ্রুপ তৈরি করেছি।
পরিশেষে বলতে চাই পালসার এমন একটি বাইক যে বাইকটিতে সবাইকেই মানায়, আপনি যদি মনে মনে একটি পালসার বাইক কেনার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন তাহলে আমি বলব আপনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সাবধানে রাইড করলে এবং যত্ন নিলে বেশ ভালো পারফর্মেন্স পাবেন আশা করি । সবাই সাবধানে রাইড করবেন এবং অবশ্যই সেফটি মেইনটেন করে বাইক চালাবেন সবার প্রতি রইল অনেক অনেক শুভকামনা । ধন্যবাদ।

লিখেছেনঃ এনায়েত হোসেন সুজন

আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।

Published by Raihan Opu Bangla

Best Bikes

Honda CB Hornet 160R

Honda CB Hornet 160R

Price: 169800.00

Honda CB Hornet 160R ABS

Honda CB Hornet 160R ABS

Price: 255000.00

Honda CB Hornet 160R CBS

Honda CB Hornet 160R CBS

Price: 212000.00

View all Best Bikes

Upcoming Bikes

Bajaj Pulsar NS150

Bajaj Pulsar NS150

Price: 0.00

Bajaj Pulsar 400

Bajaj Pulsar 400

Price: 0.00

CFMoto 300SS

CFMoto 300SS

Price: 510000.00

View all Upcoming Bikes