Yamaha Saluto 125 ৯,৫০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ - নাইমা আকতার মিলি
This page was last updated on 31-Jul-2024 11:19am , By Ashik Mahmud Bangla
আমি নাঈমা আক্তার মিলি । আজ আমি আমার Yamaha Saluto 125 বাইকটি নিয়ে ৯,৫০০ কিলোমিটার পথ চলার কিছু গল্প শেয়ার করবো আপনাদের সাথে । সেই সাথে আমার অভিজ্ঞতা থেকে কিছু কথা শেয়ার করবো আমার বাইক এবং বাইকিং নিয়ে।
বাইক চালানোর সকল বাধা থেকে আমি স্বাধীনতা অর্জন করে আমার নাম দিয়েছি বিন্দাস মিলি। বিন্দাস অর্থ মুক্ত স্বাধীন বাধাহীন । আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মেয়ে। বাইকের জগতে পা রেখেছি আজ নয়বছর হয়ে গেল । আসলে প্রথমে বাইকের প্রতি ভালো লাগাটা আমার থেকে ই ছিলো আর ভালোবাসাটা বাবার উৎসাহে পেয়েছি । আমার আব্বা বাইক চালাচ্ছে আজ ৪২ বছরের বেশি। বাবা আমাকে দিয়ে প্রতিদিন বাসায় বাইক পার্কিং করাতেন এবং বলতেন বাইক চালানোটা শিখে ফেল কাজে আসবে । আমি বাবাকে বললাম বাবা কি কাজে আসবে । বাবা বললেন মেয়ে হয়েছ তো কি হয়েছে অনেক সময় বিপদে আপদে থাকলে বাইক দিয়ে তা অতিক্রম করতে পারবে । আমি রাজি হয়ে গেলাম এবং বাবার হাত ধরে বাইক শিখলাম । কখনো সমাজে কেউ খারাপ মন্তব্য করেনি কারণ আমি তখন ছোট ছিলাম। কিন্তু বর্তমানে বড় হয়েছি তাই মা অনেকটা এখন অমত ছিলেন কিন্তু কিছুদিন আগে মা আমাকে একটা বাইক উপহার দিয়েছে । বাইকটি হলো Yamaha Saluto 125।
এছাড়াও আমার অন্য বাইকও আছে, তবে এই বাইকটা আমার মায়ের দেওয়া উপহার তাই এই বাইকটি আমি অনেক বেশি ভালোবাসি। মা শত বাধা দেওয়ার পরেও বাইকের প্রতি প্রাণভরা ভালোবাসা দেখে ওনি আর আমাকে বাধা দিতে পারেনি, মা নিজেই আমাকে এই ইয়ামাহা স্যালুটো বাইকটা কিনে দিলো । আমি আমার বাইকটি কিনেছি মিরপুর ৬০ ফিট YAMAHA Crescent Enterprise থেকে । বাইকটি কিনতে যাওয়ার সময় অনেক আনন্দ লাগতে ছিলো, কারণ যেদিন আমি বাইক কেনার জন্য টাকা জমা দিয়েছি সেদিন আমার পছন্দের কালারটি স্টকে ছিলো না।
Click To See The Yamaha Saluto 125 Test Ride Review
পরের দিন নিতে আসলাম সব কিছু ফাইনাল হওয়ার পরে আমার হাতে চাবি তুলে দেওয়া হলো । হাসিমুখে বাইকটিতে চাবি দিলাম এবং স্টার্ট দিয়ে ইঞ্জিন অন করলাম । ওইদিনের সেই আনন্দের কথা কি আর লিখে প্রকাশ করা যায় । শো রুমের কর্তৃপক্ষ সবাই অভিনন্দন জানালো সাথে গিফট পেয়েছিলাম রেইনকোর্ট একদিকে বাইক কেনার আনন্দ আরেকদিকে গিফট পাওয়ার আনন্দ, আমি তখন খুব খুশি ছিলাম ।
বাইকটি প্রথমবার চালানোর অনুভুতিটা ছিলো অনেকটায় অভিজ্ঞতাসম্পূর্ণ ও আনন্দদায়ক । বাইকটি রাইড করা মাত্রই একটু ভয় লাগছিল। আসলে ভয়টা বেশি আনন্দের জন্যই ছিলো । বাইকটি খুব স্মুথ এবং আমার ফিটনেস এর সাথে খুব পারফেক্ট । বাইকটিতে কন্ট্রোল এবং ব্যালেন্স রাখতে আমার কোণ প্রকার প্রব্লেম মনে হয়নি । আমি খুব কনফিডেন্স নিয়ে বাইকটি চালাতে পেরেছিলাম । বাইকটিতে আমি সঠিক ভাবে ব্রেকিং পিরিয়ড শেষ করি । বাইকটিতে এখন পর্যন্ত আমি ৪ বার সার্ভিস করাই । আমি প্রথম ১০০০ কিলোমিটার চালিয়ে শো রুম কর্তৃপক্ষ থেকে ফ্রি সার্ভিসিং নিয়েছিলাম । দূরত্বের কারনে পরে বাহিরের গ্যারেজ থেকে ২ বার সার্ভিস করিয়েছি । সার্ভিস নিয়ে আমি খুবি খুশি । এই ৯০০০ কিলোমিটার এ আমার বাইকটি একবারের জন্যও আমকে নিরাশ করেনি । সার্ভিস নিয়ে কোন প্রকার সমস্যা করেনি । বর্তমানে বাইকটি এখন ৯৫০০ কিলোমিটার এ আছে চতুর্থ সার্ভিসটি আমি আবারও Yamaha Crescent থেকেই নিলাম ।
এখন পর্যন্ত কোনো পার্টস পরিবর্তন করতে হয়নি শুধু এয়ার ফিলটারটি পরিবর্তন করলাম ৯০০০ কিলোমিটার চালিয়ে । বাইকটি এখন সব মিলিয়ে আমার কাছে আমার মনের মতই আছে । ঠিক যেমন আমার চাওয়া ছিল । বাইকটির উভয় চাকা টিউবলেস। স্যালুটোর সামনে ও পেছনের দুটি সাসপেনশনই বেশ ভালো । এর সামনের ব্রেক হাইড্রলিক ডিস্ক ব্রেক, আর পেছনে ড্রাম ব্রেক। দুটো ব্রেকই সিটি, হাইওয়ে চলার মতো উপযোগী ।
আরও পড়ুনঃ ইয়ামাহা স্যালুটো টেষ্টরাইড রিভিউ
প্রথম ২৫০০ কিলোমিটার বাইকটি চালানোর আগে মাইলেজ পেতাম ৭০ কিলোমিটার প্রতি লিটার এর মত । ২৫০০ কিলোমিটার পর এখনো হাইওয়েতে ৭০ ই পাচ্ছি , কিন্তু সিটিতে ৬০-৬৫ কিলোমিটার প্রতি লিটার এমন মাইলেজ পাচ্ছি । আমি মনে করি এই মাইলেজ এই বাইকে অনেক বড় একটা এডভান্টেজ । আশার থেকেও অনেক বেশি মাইলেজ পাচ্ছি আমি ।
বাইকটিতে আমি কিছু মডিফাই করেছিঃ
- চাকার রিমগুলো ক্রোম কালার করেছি
- দুটি লুকিং গ্লাস এড করেছি
- কিছু লাইটিং করেছি-ব্রেকিং লাইট ও চেইন বক্সের উপর
বাইকটির কিছু সুবিধার দিক হলঃ
- ১২৫ সিসি হলেও টপ স্পিড পেয়েছি ১১০
- বাইকটি মাইলেজের ক্ষেত্রে জাদুর বাক্স হাইওয়েতে ৭০ মাইলেজ পেয়েছি
- বাইকটির সিট অনেক আরামদায়ক , রাইডিং এর সময় এ ক্লান্তি লাগেনা
- বাইকটি দেখতে লেটেস্ট মডেল, কালার গুলো আমার খুব পছন্দের
- বাইকটির তে ইয়ামালুব ইঞ্জিন ওয়েল ও অকটেন ব্যবহার করলে ভালো পারফর্মেন্স পাওয়া যায়
বাইকটির কিছু অসুবিধা হলঃ
- হেডলাইটের আলো অনেক কম,তাই আমি ফগ লাইট ব্যবহার করছি
- বাইকটির মিটার হচ্ছে এনালগ মিটার
- বাইকের টায়ারটি চিকন এতে স্কিড হওয়ার সম্ভাবনা বেশি
- ওডোমিটারে কোন রেভ কাউন্টার নাই
- পেছনের ব্রেকটা তুলনামুলকভাবে সামনের ব্রেকের মত না
আমি বাইকটি নিয়ে আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে কক্সবাজার ২৫৫ কিলোমিটার এর ট্যুর করি । হাইওয়ের রাস্তায় মাইলেজ পেয়েছি ৭০ কিলোমিটার প্রতি লিটার । লং ট্যুরে রাস্তায় কোনো প্রব্লেম হয়নি । পারফর্মেন্স অনেক ভালো পেয়েছি । আমি বাইকটি নিয়ে খুব ভালো আছি খুশি আছি আলহামদুলিল্লাহ ।
লেডিবাইকাদের উদ্দেশ্য আমার কিছু কথা শেয়ার করিঃ
সমাজ এমন একটা জিনিস যেখানে মেয়েদেরকে সব দিকে অধিকার দেওয়া হয়না । আবার কোনো মেয়ে যদি নিজের থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয় তাহলে সেটাকে সমাজের মানুষ আড়চোখে দেখে, বাজে মন্তব্য করবে এটাই স্বাভাবিক । কিন্তু এমন মন্তব্যতে কান দিয়ে নিজেকে থামিয়ে রাখা একটা বোকামি । আবার পারবোনা বা সম্ভবনা এমন চিন্তা ভাবনায় অচল হয়ে পড়াও একটা পাগলামি । আমি তুলনা বা চ্যালেঞ্জ করছিনা । একটা মেয়ে অনেক কষ্ট সহ্য করে মাতৃত্তকে ধরে রাখতে পারে যা একজন পুরুষের দ্বারা সম্ভব নই । একটা মেয়ে তার চাওয়া পাওয়াকে এমন ভাবে সাজিয়ে তুলতে পারে যা একটা পুরুষ এভাবে গুছাতে পারেনা । তাহলে অবশ্যই একটা মেয়ে তার প্রতিনিয়ত পথচলার জন্য বাইক চালাতে পারবে । সমালোচনা শুনতে হবে এটা হোক ভালো হোক মন্দ । কখনই নিজেকে ছোট করে দেখা যাবেনা নিজেকে নিজে চিনতে পারলে আর সক্ষম ভাবলে এসব বাজে সমালোচনা গুলো একদিন নিরাময় হয়ে যায় । আমি কখনই এমন কিছু পাইনি কিন্তু অনেক মেয়েদের থেকে এমন কিছুই শুনেছি আসলে এসব বিষয় গুলো নিজে এড়িয়ে না চললে স্বাধীন বাইকার হওয়া যাবেনা ।
Also Read: Yamaha Saluto এর মালিকানা রিভিউ - লিখেছেন মিজানুর
বর্তমানে আমাদের দেশে অনেক লেডি বাইকার আছেন সবাইকে আমি শ্রদ্ধা ও সালাম জানাচ্ছি । আপনারাও এমন সমালোচনাকে এড়িয়ে নিজের মনের আনন্দে বাইক চালাবেন । জয় আপনারই থাকবে যদি তা নিজের মাঝে শক্তি সাহস দিয়ে লালন করেন । পরের কথায় কি আসে যায় । সবশেষে Yamaha Saluto নিয়ে বলতে গেলে এটাই বলবো আপনি যদি নিশ্চিন্তে একটি বাইক নিয়ে হ্যাপি লাইফ কাটাতে চান তাহলে ১২৫ সিসি সেগমেন্ট এর মধ্যে Yamaha Saluto ই হবে আপনার জন্য পারফেক্ট একটি বাইক । ১২৫সিসি সেগমেন্ট দাম তুলনামুলক বেশি । দাম যার একটু বেশি জিনিষ ও সেটা একটু বেশিই ভালো হয় । লেখাটি পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ । লিখেছেনঃ নাইমা আকতার মিলি আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।