সইচিরো হোন্ডা - জীবনযুদ্ধে জয়ী এক সৈনিক

This page was last updated on 27-Dec-2022 01:46pm , By Shuvo Bangla

১৯০৬ সালের কথা জাপানের ফুজি পাহাড়ের নিচে ছোট্ট একটি গ্রামে জন্ম সইচিরো হোন্ডার। একজন সাইকেল মেরামতকারীর সন্তান হিসেবে বেড়ে ওঠেন সইচিরো হোন্ডা। কাপড় বোনার কাজ করতেন হোন্ডার মা। দিনটি কেমন হবে সেটি যেমন সূর্যের প্রথম কিরণই বলে দেয়, ঠিক তেমনি হোন্ডার ছেলেবেলার কাজকর্ম তার স্বপ্নের কথা জানান দেয়। ছোটবেলা থেকেই কলকব্জা নিয়ে কাজ করতে ভালোবাসতেন হোন্ডা। 

সইচিরো হোন্ডা - জীবনযুদ্ধে জয়ী এক সৈনিক

সইচিরো হোন্ডা 

হোন্ডাকে যে স্কুলে পড়তে পাঠানো হয়েছিল তাতে ছাত্রছাত্রীদের রিপোর্ট কার্ড বাবা-মায়ের কাছে পাঠানো হতো এই শর্তে যে, পরিবারের যে কোনো অভিভাবক তা দেখবেন এবং দেখে প্রমাণস্বরূপ পারিবারিক সিল দিয়ে আবার ফেরত দেবেন। ছোট্ট হোন্ডার এসব রীতিনীতি ভালো লাগত না। বাবা-মাকে নিজের দুরন্তপনার খবর থেকে দূরে রাখতে নিজেই নিজের অভিভাবক হয়ে গেলেন।

সাইকেল মেরামতের সরঞ্জাম থেকে পারিবারিক সিল বানিয়ে ফেলেন। শুধু নিজের জন্যই না, সিল বানিয়েছিলেন অন্য বাচ্চাদের জন্যও। যা পরে ধরা পড়ে যায় একসময়। এমনকি এক স্মৃতিচারণে সইচিরো হোন্ডা বলেছিলেন, 'তখন কেবল হাঁটতে শিখেছিলেন যখন তিনি তার জীবনে প্রথম গাড়ি দেখেছিলেন। সেই গাড়ির ধোঁয়ার গন্ধ তিনি কখনও ভুলতে পারবেন না।'

১৫ বছর বয়সে, কোনো রকম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়া হোন্ডা বাড়ি থেকে বের হয়ে যান কাজের খোঁজে। চলে যান রাজধানী টোকিও। কাজ নেন গ্যারেজে, যেখানে কলকব্জা পরিষ্কার করা এবং মালিকের বাচ্চার দেখাশোনা করা ছিল তার কাজ। কিন্তু এই জীবন চাননি সইচিরো হোন্ডা। ১৯২৩ সাল।

ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পে প্রায় ১ লাখ মানুষ মারা যায় টোকিওতে। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় হোন্ডার মালিকের দোকানও। অনেক মেকানিক চাকরি ছেড়ে চলে যায়, সুযোগ আসে হোন্ডার। হয়ে যান প্রধান মেকানিক। ২১ বছর বয়সে মাত্র একজন কর্মী নিয়ে খোলেন নিজের গাড়ি মেরামতের দোকান। প্রথমে হোঁচট খেয়েছেন কিন্তু পরে তার গ্রহণযোগ্যতা বেড়ে যায়। একজন থেকে কর্মী সংখ্যা ১৫ জনে দাঁড়ায়। 

soichiro honda 

জাপান, একটি ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। এখানে মজবুত গাঁথুনি ছাড়া টিকে থাকা যে অসম্ভব তা হোন্ডা বুঝতে পেরেছিলেন। তার উদ্ভাবনী সম্ভারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদ্ভাবন লোহার ছাঁচ। আগে কাঠের ছাঁচে চাকা আটকে বিভিন্ন কাজ করা হতো, কিন্তু হোন্ডার লোহার ছাঁচটি ছিল আগের চেয়ে অনেক বেশি মজবুত এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য। জনপ্রিয় হয়ে ওঠে হোন্ডার উদ্ভাবন।

জাপানের জাতীয় ইন্ডাস্ট্রিয়াল সম্মেলনে জয়জয়কার হয় তার। বিদেশে রফতানিও করেন হোন্ডা, কিন্তু পথ পাড়ি দিতে হবে অনেক। ১৯৩৭ সাল, টয়োটা কোম্পানি সবে যাত্রা শুরু করে। এদিকে গাড়ির পিস্টন রিং বানানোর কাজে হাত দেন হোন্ডা। উদ্দেশ্য টয়োটা কোম্পানিতে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি না হোক অন্তত তাদের সাপ্লায়ার হিসেবে যেন কাজ করার সুযোগ পান। কিন্তু তার ডিজাইন দেখে টয়োটা তাকে তাদের যোগ্য ভাবলেন না।

পৃথিবীতে যারা সফল হয়েছেন, তারা প্রত্যেকেই নিজেদের দুর্বলতাকে স্বীকার করেছেন এবং পরবর্তীতে দুর্বলতাকে শক্তিতে রূপান্তরিত করেছেন। ৩০ বছর বয়সে আবার স্কুলে ভর্তি হলেন হোন্ডা। চারপাশে ছোট বাচ্চাদের সঙ্গে পড়তে গিয়ে কতই না লাঞ্ছনা সইতে হয়েছে তাকে! কিন্তু থেমে যাননি। টয়োটা থেকে 'না' শুনে বানিয়েছিলেন দ্রুতগতিসম্পন্ন 'রেসিং কার'। কিন্তু প্রতিযোগিতায় সেটি দুর্ঘটনার শিকার হয়।

ক্ষতিগ্রস্ত হয় হোন্ডার কাঁধ ও মুখ। পড়ে যান অর্থকষ্টে। অর্থের জোগান দিতে বিক্রি করে দেন স্ত্রীর অলঙ্কারও। লাঞ্ছনা, দরিদ্রতা, শারীরিক কষ্ট সব কিছুর পরও হোন্ডা চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকেন। নিজের বানানো ৩০ হাজার পিস্টন রিং থেকে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ৫০টি নিয়ে আবার ধরনা দেন টয়োটা অফিসে। যদি বিক্রি হয়? কিছু টাকার ব্যবস্থা হবে। কিন্তু মাত্র তিনটি পিস্টন রিং প্রাথমিকভাবে গ্রহণ করা হয়।

১৯৪২ সাল, সইচিরো হোন্ডা যোগ দেন টয়োটাতে। খুব দ্রুত হয়ে যান প্রধান নির্বাহী পরিচালক। কিন্তু কপালের ফের। ১৯৪৫ সালের দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে ধ্বংস হয়ে যায় পুরো জাপান। বেঁচে থাকাই যেখানে কষ্টসাধ্য, সেখানে হোন্ডা স্বপ্ন দেখেতে শুরু করেন আবারও।

পরিবারের খাবার কেনার সাধ্য ছিল না তার, কিন্তু কীভাবে সুলভ মূল্যে সবার কাছে যোগাযোগ করা যায় তা ভাবতেন তিনি। ১৯৪৬ সালে অবশেষে তৈরি করে ফেললেন মোটরচালিত সাইকেল। এবং ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন 'হোন্ডা মোটর কোম্পানি'। যার মূলমন্ত্র 'স্বপ্নের শক্তি'।

যে কোম্পানি মোটরসাইকেলের পাশাপাশি এক সময় জেট বিমান নির্মাণের কাজেও হাত দেয় এবং সফলও হয়। শ্রম ও একনিষ্ঠতার বদৌলতে এই কোম্পানিই পরবর্তীতে হয়ে ওঠে বিশ্ববিখ্যাত হোন্ডা কোম্পানি। অনেকে এখনো ‘হোন্ডা’ বলতে মোটরসাইকেলকেই বোঝান।

১৯৫৯ সাল থেকেই বিশ্বের শীর্ষ মোটরসাইকেল নির্মাতার মুকুটটা হোন্ডার দখলে। ১৯৯১ সালে এই মহানায়কের জীবনযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। প্রতিটি গল্পের নায়ক আমাদের কিছু শিক্ষা দিয়ে যান, সইচিরো হোন্ডা ও তার ব্যতিক্রম নন। তিনি বলে গেছেন, 'যে কোনো সাফল্যের ১ শতাংশ কাজ, বাকি ৯৯ শতাংশ ব্যর্থতা।' অর্থাৎ, পরাজয়ই জয়ের একমাত্র পথ।

লেখা : Jahinur Rahaman

Best Bikes

Honda CB Hornet 160R

Honda CB Hornet 160R

Price: 169800.00

Honda CB Hornet 160R ABS

Honda CB Hornet 160R ABS

Price: 255000.00

Honda CB Hornet 160R CBS

Honda CB Hornet 160R CBS

Price: 212000.00

View all Best Bikes

Latest Bikes

Honda SP160 (Single Disc)

Honda SP160 (Single Disc)

Price: 197000.00

Lifan Blues 150

Lifan Blues 150

Price: 0.00

Lifan KPV350

Lifan KPV350

Price: 0.00

View all Sports Bikes

Upcoming Bikes

Bajaj Freedom 125

Bajaj Freedom 125

Price: 0.00

Lifan K29

Lifan K29

Price: 0.00

455500

455500

Price: 0.00

View all Upcoming Bikes