সিসি লিমিট বৃদ্ধির পর কম সিসির বাইকের ভবিষ্যৎ কি?

This page was last updated on 22-Jun-2025 01:09pm , By Badhan Roy

বাংলাদেশে সিসি লিমিট ১৬৫ সিসি থেকে বেড়ে ৩৫০ সিসি পর্যন্ত হয়েছে – এটি বেশ পুরাতন খবর। বাইকারদের মধ্যে ইতিমধ্যেই ১৮৫, ২৫০ ও ৩৫০ সিসির বিভিন্ন সেগমেন্ট, ক্যাটাগরি ও ব্র্যান্ড এর বাইকগুলো জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

সেকেন্ড হ্যান্ড মার্কেটপ্লেসেও এই কারনে ১৫০-১৬৫ সিসির অনেক পুরাতন বাইকের রিসেল ভ্যালু কমে যাওয়ার মত ঘটনাও কিন্তু দেখা গিয়েছে। কিন্তু অনেকের মনেই একটি প্রশ্ন আসতে পারে তা হচ্ছে, ১৫০ সিসির নিচে যে বাইকগুলো আছে সেগুলোর ভবিষ্যৎ কি হবে? 

 

সিসি লিমিট বৃদ্ধির পর কম সিসির বাইকের ভবিষ্যৎ কি?

তো আমরা আজকের এই আর্টিকেলে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে মোটরসাইকেলের বর্তমান সিসি লিমিট বৃদ্ধির পর কম সিসির বাইক হিসেবে পরিচিত, অর্থাৎ ৮০-১২৫ সিসি বা “হ” সিরিজের বাইকের বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে একটা কেস স্টাডি আকারে আলোচনা করব। 

 

কম দাম - যেহেতু বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশ, তাই আর্থসামাজিক অবস্থার সাথে সামঞ্জস্য রেখে অনেকেই ৮০-১২৫ সিসি বাইক বেছে নেওয়ার কথা ভাবেন কারন এই বাইকগুলোর দাম কম। সাধারণত ৮০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকার মধ্যে বাইকগুলো বাংলাদেশের বাজারে এভেইলেবল। 

রেজিস্ট্রেশন খরচ – যেহেতু ৮০-১২৫ সিসি পর্যন্ত বাইকগুলো “হ” সিরিজের আওতাভুক্ত, তাই ৮০-৯৯ সিসি এবং ১০০-১২৫ সিসির রেজিস্ট্রেশন খরচ ১৫০-৩৫০ সিসির তুলনায় কিছুটা কম হয়ে থাকে। অনেকে এই দিকটিও বিবেচনায় নিয়ে থাকেন বাইক কেনার সময়। 

জ্বালানীর খরচ কমানো- অধিকাংশ মানুষের বসবাস গ্রাম ও উপজেলা এলাকায় হওয়াতে দেখা যায় চাকরি, পড়াশোনা বা ব্যাবসার কাজে তাদের প্রতিদিন অনেক দূরত্ব পাড়ি দিতে হয়। কম সিসির বাইকগুলো জ্বালানীর দিক থেকে অনেক সাশ্রয়ী হওয়ায় এই বাইকগুলো ব্যাবহারকারীদের পছন্দের শুরুর দিকে রয়েছে। 

সাধারণত দেখা গেছে, গড়ে এই বাইকগুলো প্রতি লিটারে সর্বনিম্ন ৬০ কি.মি. থেকে ক্ষেত্রবিশেষে ৮৫ কি.মি বা তার ও অধিক মাইলেজ প্রদান করে থাকে। যা বলা যায় বেশি সিসির বাইকের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। ফলে জ্বালানী খরচের একটা বড় অংশ সাশ্রয় করা সম্ভব। 

মেইনটেইনেন্স খরচ কম- কম সিসির বাইকগুলো সাধারণত বানানো হয় লং টার্ম কম্যুটিং এর কথা চিন্তা করে। যার কারনে এই বাইকগুলো একটু কম যত্ন করলেও দীর্ঘদিন ভাল সার্ভিস দিয়ে থাকে এবং ভালভাবে মেইনটেইন করলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম রাস্তায় দাপটের সাথে চলতে পারে। এই বাইকগুলোর পার্টস এর দাম ও যেমন তুলনামূলক কম তেমন প্রায় প্রত্যেক জায়গায় এভেইলেবল ও বটে। 

পাশাপাশি এই ধরনের বাইকগুলো আহামরি জটিল ভাবে বানানো না হওয়ায় যে কোন মেকানিক খুবই সহজে এই বাইকগুলো সার্ভিসিং করতে পারেন। অনেক সময় প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বাইকার নিজেও সহজে এই বাইকগুলোর টুকটাক কাজ করতে পারেন বাইকে দেওয়া টুলবক্সের মাধ্যমে। 

পরিবার নিয়ে সহজে যাতায়াত- অধিকাংশ ৮০-১২৫ সিসি বাইক যেহেতু কম্যুটিং এর কথা চিন্তা করে বানানো হয়েছে ফলে কমফোর্টের দিকে বিশেষভাবে নজর দেওয়া হয়েছে। এই বাইকগুলোর সিট সমান এবং পর্যাপ্ত চওড়া হওয়ার কারনে পরিবার নিয়ে সহজেই আরামদায়ক রাইড করা সম্ভব। ক্ষেত্রবিশেষে স্বামী-স্ত্রী ও ছোট বাচ্চা নিয়ে চলাচল করলেও বেশ আরামে বসা যায়। 

ডেলিভারি ও রাইড শেয়ারিং- যেহেতু এই বাইকগুলোর খরচ কম এবং আরামদায়ক তাই ডেলিভারি ও রাইড শেয়ারিং এর জন্য ৮০-১২৫ সিসি বাইক এর চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। 

সব ধরনের রাস্তায় চলাচলের সক্ষমতা- ৮০-১২৫ সিসি বাইকের বিশেষত্ব হচ্ছে সব ধরনের রোড কন্ডিশনে এই বাইকগুলো আপোষহীন পারফর্মেন্স দিয়ে থাকে। আমরা দেখেছি অনেক পারফর্মেন্স অরিয়েন্টেড বাইক বা স্পোর্টস বাইক নিয়ে যেখানে সব রাস্তায় চলাচল করা সম্ভব হয়না বা দূর্ঘটনায় পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

সেইখানে এই ধরণের বাইকগুলো ওজনে হালকা, পর্যাপ্ত গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স ও কম্যুটিং ডিজাইনের কারনে পাহাড় থেকে সমতল, কিংবা গ্রামের খানাখন্দে ভরা রাস্তা বা কর্দমাক্ত পথ সহজেই পাড়ি দিতে পারে। এইজন্য অনেক এলাকায় ৮০-১২৫ সিসি বাইকগুলো “মাটি কামড়ানো বাইক” নামে ডাকা হয় যা তার সব ধরনের রাস্তায় চলার সক্ষমতার প্রতীক। 

 

শেষকথা- অতএব, সিসি লিমিট বেড়ে যাওয়া টা যেমন বাইকারদের জন্য আনন্দের খবর তাই বলে ভবিষ্যতে কম সিসির বাইক তার গ্রহণযোগ্যতা ও আবেদন সহজে যে হারাবে না তা বোঝাই যাচ্ছে। এছাড়াও বর্তমানে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে টিউবলেস টায়ার, ডিস্ক ব্রেক, ডিজিটাল কনসোল, এফআই, বিএস৬ ইত্যাদি প্রযুক্তি কম সিসির বাইকগুলোতেও ইনপুট করছেন।

এর ফলে একজন কম সিসির বাইকার ও সাধ্যের মধ্যে তার প্রয়োজন অনুযায়ী একটি বাইক বেশ সহজেই ব্যাবহার করে স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করতে পারছেন। যেসকল বাইকাররা শখের পাশাপাশি প্রতিদিন জীবনের প্রয়োজনে বাইক ব্যাবহার করেন তাদের কাছে ৮০-১২৫ সিসি বাইকের আবেদন সবসময় ই রয়ে যাবে। কারন এই বাইকগুলোর একটি আলাদা টার্গেট অডিয়েন্স আছে যাদের কথা মাথায় রেখে কোম্পানিগুলো নিত্যনতুন প্রযুক্তির সাথে কম সিসির বাইক বাজারজাত করবে এবং বিশেষ করে প্রান্তিক বাইকাররাও তা সহজে গ্রহণ করবে।

 

বাইক ও বাইকিং বিষয়ক এরকম আরো আপডেট পেতে বাইকবিডির সাথেই থাকুন।