মোটরসাইকেল নিয়ে খরদুংলা ভ্রমন ও মৃত্যুর কাছাকাছি

This page was last updated on 03-Jan-2023 12:06pm , By Saleh Bangla

মানুষ মরে যাবার আগে কি ভাবে? অনেকে বলে সে তার পুরো জীবনের স্ন্যাপশট দেখে। গত বছর একবার মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছিল। আমার তখন মনে হচ্ছিল আমার আব্বা আম্মা আর বোনের কথা, আর কারো কথাই মাথায় আসে নাই। তাদের সাথে শেষ দেখা টা হল না। মনে হচ্ছিল, যে কোন কিছুর বিনিময়ে যদি তাদের সাথে শেষ দেখা টা করা যেত। আমার জীবনের সবচেয়ে ঘটনাবহুল দিন ছিল যেদিন আমি নুব্রা ভ্যালি খরদুংলা থেকে লেহ ফেরত আসি। নিজে মরতে মরতে বেঁচে আসলেও আমার পিছনে থাকা ২ জন বাইকার সেদিন মারা যায়, খারাপ আবহাওয়ায়।

মোটরসাইকেল নিয়ে খরদুংলা ভ্রমন ও মৃত্যুর কাছাকাছি

 khardungla motorcycle tour ২০১৭ সালের ২৯ জুন। স্থান খরদুংলা, বিতর্কিত ভাবে তৎকালীন পৃথিবীর উচ্চতম রাস্তা। সময় হবে সকাল ১০ টা, বা এর আশে পাশে কিছু একটা। তাপমাত্রা শুন্যেরও ৭ ৮ ডিগ্রী নিচে। যারা শীতপ্রধান দেশে থাকে, তাদের কাছে এইটা হয়তো কিছুই না। কিন্তু সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৮৫০০ ফিট উপরে অক্সিজেন সল্পতা, ঝড়ো বাতাস আর সাথে তুষার ঝড়, এইটাই আমাদের (আমি আর আদিল নওশাদ ভাই) আধমরা করে ফেলার জন্য যথেষ্ট। আমরা ঠিক খরদুংলা তখনো পৌছাই নাই, ১ কিমি পিছনে ছিলাম। সামনে এভালাঞ্চ ( তুষার ধ্বস ) হয়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। আমি তাই খোলা বাতাসে ঠান্ডার মধ্যে বসে আছি। ঠান্ডায় হাতের আঙ্গুল অবশ হয়ে যাবার জোগাড়। বাইক চালানোর গ্লাভস ঠান্ডার কিছুই আটকাতে পারছে না। 

আর তুষার পাত হয়ে গ্লোভস, জ্যাকেট, প্যান্ট সব ভিজে চপ চপ করছে। আদিল ভাই বাতাসের তোড় টিকতে না পেরে এক ট্রাকের চাকার পাশে যেয়ে আশ্রয় নিল। আমাদের পিছনে আমাদের মতো আরো প্রায় কয়েকশ গাড়ি আটকা পড়ে আছে। আমি ভাবছিলাম যে আর কিছুক্ষণের মধ্যে রাস্তা পরিস্কার হয়ে যাবে। ঘন্টা দুই এর মধ্যে লেহ পৌছায় যাব আর হোটেলে উঠে গরম কম্বলের নীচে একটা ঘুম দিব। তখনো যদি জানতাম যে সামনে কপালে কি আছে। khardungla bike tourএকটু আগের কাহিনী বলে নেই। আমরা এর আগের দিন, মানে ২৮ জুন, লেহ থেকে বাইকে করে খরদুংলা পাড়ি দিয়ে নুবরা ভ্যালি আসি। পরের দিনের প্ল্যান ছিল নুবরা থেকে যাব প্যাংঅং লেক। কিন্তু ঐদিন হটাৎ করে আবহাওয়া খুব খারাপ হয়ে যায়, মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছিল। আমার জ্যাকেট ওয়াটারপ্রুফ হলেও অনবরত বৃষ্টিতে সেইটাও খুব সুবিধা করতে পারল না। অতি বৃষ্টিতে প্যাংঅং যাবার রাস্তা ডুবে যায়, তাই কর্তৃপক্ষ রাস্তা বন্ধ করে দেয়। তাই আমাদের হাতে দুটো উপায় ছিল, খরদুংলা পার হয়ে লেহ তে যাওয়া, অথবা নুব্রা ভ্যালি তে বসে আবহাওয়া ঠিক হবার জন্য অপেক্ষা করা। কিন্তু শিউডিউলের সাথে তাল রাখার জন্য আমরা লেহ যাবার সিদ্ধান্ত নেই। আগের দিন খরদুংলা পার হয়ে, আমি আর আদিল ভাই বলাবলি করছিলাম যে কোটি টাকা দিলেও আর এই রাস্তায় যাবনা, কে জানত পরের দিনই ভাগ্য আমাদের আবার সেখানেই নিয়ে যাবে। highest motorable road in the world আমার লেহ যেয়ে গরম কম্বলের নিচে শুয়ে থাকার আশায় গুড়েবালি পড়ল। কারণ দুই ঘন্টা পার হয়ে গেছে, আমরা ঠায় আগের যায়গা তেই দাঁড়িয়ে আছি। সামনে কি হচ্ছে বুঝার উপায় নাই, ঘন তুষার পাতের কারনে। চারিদিক শুধু সাদা আর সাদা। এতো বাজে আবহাওয়া হলে সাধারণত এই রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়। এদিন আসলে এতো দ্রুত তুষার পাত শুরু হয়, যে তারাও বুঝে উঠে রাস্তা বন্ধ করার আগে আমরা ঢুকে পড়ি, সাথে আরো দুর্ভাগা কয়েকশ গাড়ি। সকাল সকাল কিছু খেয়েও বের হই নাই, তাড়াতাড়ি পৌছাব ভেবে কোন নাস্তাও সাথে রাখি নাই, ছিল শুধু এক বোতল পানি, যেইটা শুধু বরফ হইতে বাকি আছে। আমার হাত পা প্রচন্ড ঠান্ডায় কাপতে লাগল। পাশে এক বাইকার আমার অবস্থা দেখে কয়েকটা এনার্জি বার দিল। খেয়ে কোন লাভ হল কিনা বুঝতে পারলাম না। এইভাবে ৩ ঘন্টা কেটে গেল। আমরা বুঝলাম এইভাবে ঠান্ডায়, বাতাসের মাঝে ভিজা কাপড় পড়ে দাড়ায় থাকলে বেঁচে ফিরতে পারব না। motorcycle road tour তাই একটা ট্যুরিস্ট বাস এর পাশে যেয়ে অনুরোধ করলাম যাতে আমাদের ভিতরে একটু জায়গা দেয়। বাসের ভিতরে ঢুকে মনে হল যেন স্বর্গে আসলাম। খুবি ছোট বাস, আমি আর আদিল ভাই তার ফ্লোরে বসে পড়লাম। কিছুক্ষন পর দেখলাম আস্তে আস্তে গাড়ি আগাচ্ছে, তাই আবার নেমে যাওয়া লাগল বাইক সামনে আগানোর জন্য। আদিল ভাই কে বললাম বাসের ভিতরে বসে থাকার জন্য। কে জানি বুদ্ধি দিছিল যে হাত ঠান্ডা হয়ে গেলে ইঞ্জিনে হাত দিয়ে রাখতে। গ্লাভস পড়ে ইঞ্জিনে হাত দিলাম, নরমাল সময় এই কাজ করলে মুহূর্তের মধ্যে হাত পুড়ে যেত। কিন্তু তখন কিছু টের ই পেলাম না। কাজ টা যে কতবড় বোকামি ছিল টের পেলাম কিছুক্ষণ পর। হাতের আঙ্গুল নীল হয়ে ফুলে ডাবল সাইজ হয়ে গেল, আর সাথে অসম্ভব ব্যাথা। আঙ্গুল ভাজ করার উপায় নাই। highst motorable roadপ্রত্যেক বার বাইকের এক্সিলারেটর ঘুরানোর আগে ককিয়ে উঠছিলাম। আর সাথে শুরু হল শ্বাসকষ্ট। এমনিতে খরদুংলা তে ট্যুরিস্ট রা আসলে প্রায় ই অনেকে অক্সিজেনের অভাবে মাথা ঘুরে পড়ে যায়। আমরা তার আগে ৭ দিন ধরে কাশ্মীরের উচু রাস্তা পার হয়ে আসাতে শরীর অনেক টাই উচ্চতার সাথে মানিয়ে নিয়েছিল। তাই তখনো শরীর খুব একটা খারাপ করে নাই। প্রচন্ড কর্দমাক্ত রাস্তা আর বরফের মধ্যে বাইক চালিয়ে ইতোমধ্যে এনার্জি সবশেষ। বরফের মধ্যে বাইক চালানোর চেয়ে কষ্টকর আর ভয়ঙ্কর এর মতো কিছু নাই। প্রচন্ড পিচ্ছিল রাস্তা। একটা ভুল মুভ, সাথে সাথে চলে যাইতে হবে হাজার হাজার ফুট নীচে। এতো পরিশ্রম করে উপরে উঠে এসে আমার হালকা শ্বাসকষ্টের মতো হতে লাগল। আর আমার মানসিক শক্তি চলে গেল একদম শুন্যে। আমি আম্মার নাম নিয়ে বাচ্চাদের মতো কাদতে লাগলাম, যে আর পারছিনা। আম্মা বাচাও।

khardungla tour এভাবে বেজে গেল বিকাল ৩ টা। আমরা ঠায় দাড়িয়ে আছি তখনো। ইতোমধ্যে সবট্যাক্সির ড্রাইভার রা গাড়ি থেকে শাবল নিয়ে বের হয়ে গেলে বরফ কেটে রাস্তা পরিষ্কার করবে বলে। অনেক খানি কাটার পর, প্রথম গাড়ি টাকে যাইতে বলা হল। বেটা ফুল স্পিডে টান দিয়ে বরফের মধ্যে যেয়ে গেল আটকে। বরফের চাকা স্কিড করতে লাগ্ল। এইভাবে একটা গাড়ি যায়, আর ঐটাকে ছুটাইতে লাগে, আধা ঘন্টা। আধা ঘন্টা মানে আসলে আধা ঘন্টা। এদিকে আমি সহ অন্যান্য বাইকার দের অবস্থা মরা মরা। তার যেয়ে বলল গাড়ির আগে যাতে বাইক গুলো কে যেতে দেয়, কারণ বাইকার রা ওপেন এয়ারে দাড়ায় আছে। তারা রাজি হয় না। অনেক ঝামেলার পর সন্ধ্যা ৭ টার দিকে বাইকার রা যাওয়া শুরু করল। adventurous road in the worldএখন শুরু হলো নতুন চ্যালেঞ্জ। ২ ফুট উচুজমে থাকা বরফের মধ্যে, রাতের অন্ধকারে খরদুংলা থেকে নামতে হবে। এই রাস্তায় স্বাভাবিক আবহাওয়া তে স্থানীয় ড্রাইভার রা রাতে আসার দুঃসাহস দেখায় না, আর্মি রাও না। বরফের মধ্যে বাইক কোনভাবেই কন্ট্রোল করা যচ্ছে না। কোন প্রকার ট্রাকশন ই নাই চাকার, রাস্তার সাথে। কন্ট্রোল করব কি। কতবার যে পিছালাম পড়লাম বাইক নিয়ে তার ঠিক নাই। এমনিতে শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল, তার উপর এই পরিশ্রমের কারনে প্রচন্ড বুক ব্যাথা শুরু করল, হঠাত করে আমি খেয়াল করলাম যে আমি শ্বাস নিতে পারতেছিনা। বাইক রাস্তায় ফেলে দিয়ে আমি মাটিতে বরফের উপরে শুয়ে পড়লাম। ইশারায় আদিল ভাই কে বুঝালাম যে পানি খাব। khardongla passকিন্তু আমাদের সাথে থাকা পানি শেষ। আমার দৃষ্টি ও ঝাপসা হয়ে আসছিল। আবছা ভাবে দেখলাম আদিল ভাই পাশ দিয়ে যাওয়া বাইকার দের থামানোর চেষ্টা করছেন, একটু পানির জন্য। কেও দাড়াচ্ছে না। আমি কারো দোষ দেই না। কারন তাদের অবস্থাও সুবিধার না। আমি ভাবছিলাম যে আজকেই আমার শেষ দিন। দম বন্ধ হয়ে আছে, শ্বাস নিতে পারছিলাম না, সাথে অসম্ভব রকম বুক ব্যাথা। আব্বা আম্মার, বোনের জন্য অনেক মন খারাপ হচ্ছিল। ফ্যামিলি কি জিনিস সেদিন অনেক ভালো ভাবে অনুধাবন করি। হটাত দেখলাম আদিল ভাই কার কাছ থেকে যেন এক বোতল পানি এনে দিল। ঐটা খাওয়ার পরই কিনা কে জানে, আস্তে আস্তে শ্বাস নিতে পারলাম। এরপর কিছুক্ষন রেস্ট নিয়ে আবার যাওয়া শুরু করি। এবার যাই অনেক আস্তে, বুক ব্যাথা তখনো ছিল। একটু বাড়তে নিলেই বাইক দাড়া করিয়ে রেস্ট নেই। আর ওইদিকে ডান হাতের আঙ্গুল গুলো মনে হচ্ছিল যে ফেটে যাবে। ফুলে ঢোল সাইজ, আর ব্যাথায় তখন চোখে পানি। road to khardungla

 এই অবস্থায় দেখলাম একটা লোক বাইক নিয়ে গর্তে আটকে গেছে, সে অনেক কে সাহায্যের জন্য ডাকছে, কেও দাড়াচ্ছে না। আমিও না দাঁড়িয়ে চলে যাচ্ছিলাম। তখন আদিল ভাই বলল, এই সেই লোক, যে আমাকে পানি দিয়েছিল। সাথে সাথে দাঁড়িয়ে গেলাম, তাকে ধাক্কা দিয়ে সাহায্য করে আসলাম। একটু পর শুরু হল আরেক বিপদ, আমরা ঘন মেঘ এর ভিতর দিয়ে তখন নামছি। প্রচন্ড আকা বাকা রাস্তা। কুয়াশা এতোই ঘন যে মাঝে একবার আদিল ভাই কে নেমে যেয়ে দেখে আসতে হল যে রাস্তা কোনদিকে। তার উপর বিপদ আরো বাড়ানোর জন্য রাস্তার মাঝে পড়ে ছিল ইয়া বড় বড় পাথরের চাই। khardongla pass world highest motorable road সারাদিন বৃষ্টিতে ল্যান্ডস্লাইড হয়ে এগুলো পড়ে আছে। তাই প্রচন্ড সাবধানে চালাতে হচ্ছিল। এভাবে মনে হলো যে অনন্ত কাল পরে লেহ শহরের আলো দেখতে পেলাম। রাত ১০ টায় আমি হোটেল এর সামনে এসে বাইক টা রেখে জাস্ট মাটিতে শুয়ে পড়লাম। আমার শরীরে আর বিন্দুমাত্র শক্তি অবশিষ্ট ছিলনা। ঐদিন আমি ছিলাম গাড়ির সারিতে সবার সামনে। পিছনের গাড়ি গুলো জানি না কিভাবে নেমেছিল। নাকি ঐদিন সারা রাত উপরেই ছিল। পরে জানতে পারি আমাদের পিছনে থাকা দুই জন বাইকার ঐদিন ঠান্ডায় মারা যায়। কি বিপদ থেকে যে উদ্ধার পেলাম বুঝতে পারি। বাসায় আসার পর আরো ৬ ৭ মাস ঠিক মতো আঙ্গুল নাড়া তে পারতাম না।   

লিখেছেনঃ আলম আশরাফুল

Best Bikes

Honda CB Hornet 160R

Honda CB Hornet 160R

Price: 169800.00

Honda CB Hornet 160R ABS

Honda CB Hornet 160R ABS

Price: 255000.00

Honda CB Hornet 160R CBS

Honda CB Hornet 160R CBS

Price: 212000.00

View all Best Bikes

Latest Bikes

Kinetic Luna 50

Kinetic Luna 50

Price: 0.00

Yezdi Roadking 250

Yezdi Roadking 250

Price: 0.00

Bajaj Vespa 150

Bajaj Vespa 150

Price: 0.00

View all Sports Bikes

Upcoming Bikes

Bajaj Pulsar NS150

Bajaj Pulsar NS150

Price: 0.00

Bajaj Pulsar 400

Bajaj Pulsar 400

Price: 0.00

CFMoto 300SS

CFMoto 300SS

Price: 510000.00

View all Upcoming Bikes