তিন পার্বত্য জেলা বাইক ভ্রমণ এর গল্প - শুভ মিঞা

This page was last updated on 16-Oct-2022 03:59pm , By Shuvo Bangla

পাহাড় সমুদ্র পছন্দ করেনা এমন মানুষ খুজে পাওয়া যাবে কিনা আমি জানিনা । সুযোগ হয়েছিল একত্রে বাংলাদেশের তিন পার্বত্য জেলা ভ্রমণ করার । 

তিন পার্বত্য জেলা বাইক ভ্রমণ এর গল্প

বাংলাদেশে তিনটি পার্বত্য জেলা রয়েছে । বাইক নিয়ে ভ্রমণ করার ইচ্ছেটা সেই ছোট বেলা থেকেই । আর পাহাড়ে বাইক রাইড করার মধ্যে সে তো অন্যরকম এক আনন্দ । এই আনন্দ আসলে লিখে প্রকাশ করা যায়না । প্রকৃতি উপভোগ করতে হলে তো প্রকৃতির মুখোমুখি গিয়ে দাড়াতে হবে । আজ আপনাদের সাথে প্রিয় বাংলাদেশটির তিন পার্বত্য জেলা বাইক নিয়ে ভ্রমণ করার গল্পটি শেয়ার করবো ।

আমাদের এবারের ভ্রমণ এর প্রধান আকর্ষন ছিল সিন্দুকছড়ি রোড । আমাদের যাত্রা শুরু হয় ঢাকা থেকে । 

১৩ আগস্ট সকাল ৬ ঘটিকায় আমরা ঢাকা থেকে সিন্দুকছড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হই । যদিও আমাদের রওনা হওয়ার কথা ছিল রাত ৪ টায় কিন্তু প্রচুর বৃষ্টি থাকার কারনে আমরা অপেক্ষা করতেছিলাম কিন্তু অপেক্ষা করে কাজ হচ্ছিলনা বৃষ্টি কমতেছিলনা সকাল ৬ টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে বৃষ্টির মধ্যেই আমরা আমাদের রাইড শুরু করলাম । পূর্বের প্লান অনুযায়ী আমার ইচ্ছে ছিল কুমিল্লা গিয়ে নাস্তা করার , বলে রাখা ভালো আমি আমার প্রতিটা ট্যুরেই আগে একটা প্লান সাজাই এবং সেই প্লানটার মধ্যে কোথায় যাবো কত কিলোমিটার পর কোথায় ব্রেক নিবো কি কি স্থান দেখবো কখন কোথায় খাবারের ব্রেক দিবো এর সব কিছুই বিস্তারিত থাকে ।  তো আমার প্লান অনুযায়ী আমাদের সকালের নাস্তা আমরা কুমিল্লা এসে করি । ততক্ষনে সবাই বৃষ্টিতে ভিজে খুব খারাপ অবস্থা । প্রচুর বৃষ্টির কারনে বাইক চালাতেও সমস্যা হচ্ছিল । তবুও আস্থে আস্থে সামনে যাচ্ছিলাম । তবে সকালের নাস্তাটা সবাইকে আবার সতেজ করে দেয় । এর কারন ছিল সকালের নাস্তা আইটেম গরম খিচুরি এবং গরুর মাংশ এবং শেষে ফালুদা ।

ততক্ষনে সবার কাপড় কিছুটা শুকিয়ে গিয়েছে আর বৃষ্টিও কমে গিয়েছে । যদিও সবাই রেইন কোর্ট পড়া ছিলাম কিন্তু যে পরিমান বৃষ্টি হচ্ছিল তাতে জুতো গ্লাভস ভিজে রেইন কোর্ট এর মধ্যেও হালকা হালকা পানি ঢুকা শুরু করেছিল । আবার যাত্রা শুরু করলাম । প্লান অনুযায়ী পরবর্তী চায়ের ব্রেক বারাইয়ারহাট । 

কিন্তু সেই সুযোগ আর বেশিক্ষনের জন্য স্থায়ী হলোনা । কারন ২৫ কিলোমিটার রাইড করার পরে প্রচুর বৃষ্টি শুরু হলো , এত পরিমান বৃষ্টি ছিল যে রাইড করার সুযোগ ছিলনা । বাধ্য হয়ে একটি চায়ের দোকানে আমাদের বিরিতি দিতে হলো । সেখানে আমরা চা কফি খেলাম । দোকানদার ভাই আমাদের শুকনো কাপড়, গামছা দিলো এবং আমাদের ব্যাগ যাতে না ভিজে সে ব্যবস্থার জন্য অনেক গুলো পলি দিলো । আমাদের পলির খুব প্রয়োজন ছিল । 

এবার আমরা হালকা বৃষ্টির মধ্যেই আবার আমাদের যাত্রা শুরু করলাম । সরাসরি চলে গেলাম বরাইয়ার হাট । বরাইয়ার হাট যখন পৌছালাম তখনও হালকা বৃষ্টি হচ্ছিল । কয়েকটা ছিবি তুলে পরবর্তি গন্তব্য রামগড় এর উদ্দেশ্যে রওনা হলাম ।

শুরু হলো পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা । যেটা আমার খুব পছন্দের । এবারের ট্যুরে আমার ২ ছোট ভাই আমার সাথে ছিল শোভন এবং মারুফ । ওরা এর আগে কখনো পাহাড়ে আসেনি । মারুফ ছিল আমার বাইকের পিলিয়ন । আর শোভন ওর বাইক রাইড করতেছিল । পাহাড়ি রাস্তায় বাইক চালাচ্ছিলাম ভালো লাগতেছিল তবে মনে মনে কিছুটা ভয় কাজ করতেছিল কারন শোভন এই প্রথম পাহাড়ে রাইড করতেছে ওকে নিয়ে আমি কিছুটা ভয় পাচ্ছিলাম । এদিকে আমার পিলিয়ন মারুফ ও পাহাড়ে এই প্রথম । ও কি পিলিয়ন হয়ে ওর ব্যালেন্স রেখে বসতে পারবে কিনা এসব চিন্তা করতে করতে সামনের দিকে আগাতে থাকলাম ।

  

বাকি ২ বাইকের রাইডার ছিল ইমরান ভাই এবং অনিক ভাই , তাদের রাইডিং স্কিল নিয়ে আমার চিন্তা কম ছিল কারন তারা আগেও পাহাড়ে এসেছে । ইমরান ভাইয়ের পিলিয়ন নাসির ভাই অসাধারন এক মানুষ আমাদের ট্যুরের বিনোদন এর মাধ্যম । তার মজার মজার জোকস গুলো শুনে কেউ না হেসে পারবেনা । আর অনিক ভাইয়ের পিলিয়ন ছিল যে তার নামও ইমরান । রাইড করতেছিলাম আর লুকিং গ্লাস দেখতেছিলাম শোভন কি ঠিক ভাবে আসতে পারতেছে কিনা । ২৫-৩০ কিলোমিটার রাইড করার পরে আমার ভয় সম্পূর্ন কেটে গেল । শোভন বেশ ভালো রাইড করতেছে এবং আমার পিলিয়ন হয়ে মারুফ ও যথেষ্ট ভালো ভাবে ব্যালেন্স রাখতে পারতেছে । অর ব্যালেন্স এর কারনে আমিও কর্নারিং এ কনফিডেন্স পাচ্ছিলাম । 

চলে গেলাম রামগড় চা বাগানে । বামে ইন্ডিয়ার বর্ডার বেশ ভালো লাগতেছিল । এবারের উদ্দেশ্য সিন্দুকছড়ি নতুন রাস্তা । সিন্দুকছড়ি নতুন রাস্তার গেটে যেতেই অন্যরকম একটা আনন্দ লাগতেছিল । সবাই থামলাম কিছু ছবি তুললাম , আশেপাশের জায়গা গুলো দেখলাম । এবারে সামনের দিকে অগ্রসর হবো ।


তখনো কিন্তু হালকা বৃষ্টির ফোটা পরতেছে । তবে এই বৃষ্টি যে আমাদের জন্য শুভাকাঙ্ক্ষী হবে তা বুঝতে পেরেছিলাম কিছুক্ষন রাইড করার পরে । চলতে চলতে সবাই থেমে গেলাম । আর এই থেমে যাওয়ার কারন ছিল সামনে রাস্তার উপরে মেঘ ! আমরা তখন পাহাড়ের উপরে বৃষ্টি তখন মাত্র শেষ হয়েছে । তাই ভাগ্যক্রমে মেঘের দেখা মিলে গেল । 


প্রকৃতির সৌন্দর্যের বর্ননা আসলে লিখে প্রকাশ করা সম্ভব না । মেঘের মধ্যে বাইক নিয়ে যাচ্ছি একটা ঠান্ডা বাতাস অনুভব করতেছি । মেঘের কনা গুলো গায়ে এসে লাগতেছে ইচ্ছে করতেছিল বাইক রেখে ওখানেই বসে থাকি ।কিন্তু বেশিক্ষন থাকার সুযোগ ছিলনা কারন আমাদের প্লান অনুযায়ী আমরা রাতে বান্দারবান থাকবো । সিন্দুকছড়ির নতুন রোড ধরে খাগড়াছড়ি থেকে রাঙ্গামাটির দিকে অগ্রসর হচ্ছিলাম । 

পাহাড় কেটে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এই রাস্তাটি বানিয়েছে । আমার চোখে দেখা বাংলাদেশের সব থেকে সুন্দর পাহাড়ি রাস্তা । ইউটিউবে সবসময় ইন্ডিয়ার কিছু রাস্তা দেখতাম পাহাড় কেটে রাস্তা বানানো হয় মেঘের মধ্যে থেকে রাস্তা গুলো একে বেকে বয়ে যাচ্ছে । সিন্দুকছড়ির রোডে বাইক চালাচ্ছিলাম আর মনে হচ্ছিল আমাদের দেশেও কত সুন্দর রাস্তা তৈরি হয়েছে ঠিক যেমন ইউটিউবে বাইরের দেশ গুলোকে দেখি । 

সিন্দুকছড়ি রাস্তা শেষ হওয়ার পরে মানিকছড়ির দিকে যাত্রা শুরু করলাম পূনরায় বৃষ্টি শুরু । ভিজতে ভিজতে মানিকছড়ি গেলাম সেখানে একটা চায়ের ব্রেক দিয়ে কাপ্তাই রোড ধরে লিচুবাগানের দিকে যাত্রা ।


কাপ্তাইয়ের আঁকাবাঁকা রাস্তা উপভোগ করতে করতে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছি । মনের মধ্যে একটা টেনশন কাজ করতেছে সন্ধ্যা হওয়ার আগে বান্দরবান চেক পোস্ট অতিক্রম করতে হবে । লিচুবাগান ফেরীঘাট আসতেই ভাগ্যক্রমে ফেরী পেয়ে যাই এবং খুব দ্রুত ফেরী ছেড়ে দেয় । বান্দরবান এর দিকে যাত্রা শুরু সন্ধার কিছু সময় আগে আমরা বান্দরবান চেক পোস্ট এর কাছে চলে আসি চেক পোস্ট এর পুলিশ আমাদের জিজ্ঞাস করে কোথা থেকে এসেছি কই যাবো জাতীয় পরিচয় পত্র সাথে আছে কিনা । 

আমার ছোট ভাই শোভন যেহেতু বাংলাদেশ পুলিশ সদস্য সেক্ষেত্রে ওর পরিচয় দেওয়ার কারনে আমাদের সব প্রসেস গুলো দ্রুত শেষ করা সম্ভব হয় । সেখানের সকল প্রসেস শেষ করে আমরা বান্দরবান সদরের দিকে যাত্রা শুরু করলাম । ৮ টার দিকে আমরা বান্দরবান সদরে পৌছে গেলাম । সারাদিন বৃষ্টিতে ভিজে সবাই খুব ক্লান্ত । বেশি সমস্যা হয়েছিল সবার বুট জুতো সম্পূর্ন ভিজে গিয়েছিল । হোটেলে রুম নিয়ে সাথে সাথে সবাই গোছল করে নিলাম । পায়ের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল । সম্পূর্ন দিন ভিজে বুট পরে পা একদম সাদা হয়ে গিয়েছিল ।

ভাবছিলাম সবাই অসুস্থ হয়ে পরবো কিন্তু কিসের কি অসুস্থ গোসল করার পরে সবাই আবার ঘুরতে বের হওয়ার জন্য প্রস্তুত । বের হলাম রাতের খাবার খাওয়ার উদ্দেশ্যে । রাতের খাবার খেয়ে সবাই বান্দারবান সদরে কিছুক্ষন ঘুরাঘুরি করে হোটেলে চলে গেলাম । পরের দিনের ট্যুর প্লান করে কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে রাত ১ টার পরে সবাই ঘুমাতে গেলেও ঘুমাতে ঘুমাতে ২ টা বেজে গেল । 

মাত্র ৩ ঘন্টা ৩০ মিনিট ঘুমানোর পরে ভোরে উঠে সবাই রেডি হয়ে হোটেল থেকে চেক আউট করে বান্দারবান স্বর্ণ মন্দির দেখার জন্য গেলাম । কিন্তু করোনা ইস্যুর কারনে স্বর্ণ মন্দির বন্ধ ছিল । এবার রওনা হলাম নিলাচলের উদ্দেশ্যে কিন্তু দুর্ভাগ্য ক্রমে নিলাচল ও বন্ধ পেলাম । প্লান অনুযায়ী এবার আমরা যাবো কক্সবাজার কিন্তু আমাদের রুট প্লান হচ্ছে মিলনছড়ি, চিম্বুক, নীলগিরি, বলিপাড়া , থানচি , ডিম পাহাড় , আলিকদম , কক্সবাজার । কিন্তু করোনা ইস্যুর জন্য আমরা বলিপাড়া পর্যন্ত যাওয়ার পরে চেক পোস্ট থেকে ফিরে আসতে হলো বিজিবি চেক পোস্ট থেকে জানালো লগ ডাউন শেষ হলেও তারা এখন পর্যন্ত পর্যটক প্রবেশ বন্ধ রেখেছে । 

হতাশ হয়ে প্লান পরিবর্তন করতে হলো । ফিরে গেলাম বান্দারবন । সেখান থেকে সাতকানিয়া হয়ে কক্সবাজার চলে গেলাম । এই ছিল আমাদের তিন পার্বত্য জেলা বাইক ভ্রমন । এর পরে ছিল ২ দিনের কক্সবাজার ভ্রমণ সেটা নিয়ে আলাদা একটি ভ্রমণ কাহিনী লিখবো । ধন্যবাদ ।

লিখেছেনঃ শুভ মিঞা  আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।

Best Bikes

Honda CB Hornet 160R

Honda CB Hornet 160R

Price: 169800.00

Honda CB Hornet 160R ABS

Honda CB Hornet 160R ABS

Price: 255000.00

Honda CB Hornet 160R CBS

Honda CB Hornet 160R CBS

Price: 212000.00

View all Best Bikes

Upcoming Bikes

Bajaj Pulsar NS150

Bajaj Pulsar NS150

Price: 0.00

Bajaj Pulsar 400

Bajaj Pulsar 400

Price: 0.00

CFMoto 300SS

CFMoto 300SS

Price: 510000.00

View all Upcoming Bikes