ঘুরে এলাম খাগড়াছড়ি

This page was last updated on 11-Dec-2022 01:19pm , By Shuvo Bangla

একদম ছোটবেলায় diary লিখতাম, মামনি লুকিয়ে পড়ত, তাই একদিন সব ছিঁড়ে পুড়িয়ে দেই। এছাড়া জীবনে আমি কোনদিন কিছু লিখিনি। কিভাবে কি লিখব, কিচ্ছু জানিনা, তবুও লিখছি, যেন কিছু লিখতে হবেই!

ঘুরে এলাম খাগড়াছড়ি

ঘুরে এলাম খাগড়াছড়ি 

ছোট বেলায় বাবা ও তার বন্ধুদের সাথে মাছ ধরতে যেতাম, ৫ টা ৭ টা ফেরী পার হয়ে। ট্যুরিং মাথায় ঢুকে যায় তখন থেকেই। এভাবে ৫০ টার বেশি জেলায় ঘোরা হয়ে গেছে অনেক আগেই! রাত ২ টায় বিঁড়ি টানতে বের হয়ে কোন কিছু চিন্তা না করে আমি আর রনি, আলী হাসানকে নিয়ে কুয়াকাটা চলে গেছি, এটা ২০০৫, বেশিদিন আগের কথা না, তখনও বারিশাল থাকতাম। এই মাত্র কিছুদিন আগে খাগড়াছড়ি দিয়ে ঘুরে আসলাম ১৪ টা বাইক নিয়ে । 

১৪টা বাইকে ১৪ জন, অতিরিক্ত কেউ নেই, অনেক দুরের পথ, তাই সবাই একটু বেশিই সাবধান ছিলাম।  ৩ টা আর ১৫, ৩টা ফেযার, ২টা হাঙ্ক, ১টা এফজি,  ১টা আরটিআর, ১টা পালছার, ১টা মেগিলি, ১টা  'নিঞ্জা ৬৫০' ও ১ টা 'রয়াল এনফিল্ড ৫০০। এই ট্যুরটা কিরকম বলতে গেলে অনেকটা এমনই, যে আমিও কিছু লিখছি ! ঈদের পরের দিন সকাল ৫ টায় শাহবাগ থাকার কথা । আগের দিন সবাই মিলে গিয়ে তেল ভরে নিয়ে এসেছি । ঈদের দিন কোথাও যাই নি, সারারাত ঘুমাতেও পারিনি, যদি ঘুম না ভাঙে, আমার ঘুমের আবার ভাল নাম আছে ! রিয়ায ভাই আর আমি রাত ৩ টায় ও স্কাইপ করি, ঘুম আসেনা বলে। নিধি রিয়ায ভাইয়ের বাসায়, আমার ও যাবার কথা, বাবা-মামনি মন খারাপ করে, তাই বাসায় থাকতে অনেক্টা বাধ্য হই । সবার সাথে কথা শেষে ফজরের নামাযটা পরেই বের হই । 

হাসান রুটি বানিয়ে খাবার অপেক্ষায়, নাইম সিলেট থেকে কুমিল্লার পথে বেরিয়ে গেছে । শাহবাগ গিয়ে দেখি আমার আগেও সাইদ ও মিলন ভাই হাজির । একে একে ১০ জন, ফুয়াদ আসছে দিনাজপুর থেকে, ওর জন্য একটু অপেক্ষা করতে হয়, নির্ঝর চলে আসে। আমাদের সাথে সাগরের যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারে দেখা হবার কথা, যথারীতি তার কোনই খবর নেই। আসিফের বাসায় জানেই না, ও বাইক নিয়ে যায়, তাই আগের দিন সে সাগরের সাথে ছিল। ওরা আসলে আমরা কুমিল্লার পথে খুব নিরিবিরি এক সারিতে যাত্রা শুরু করি। ওখানে ছিল আরিয়ান ভাই ও আমার প্রিয় বন্ধু 'কুপি-কাইত জিতু' ওরফে কামরুল ভাই। 

নাইম কুমিল্লা দিয়ে চলে আসে, আমরা নাশতা খেয়েই কুমিল্লা থেকে যাত্রা শুরু করি, কোন রকম বাঁধা বিপত্তি ছাড়াই আমরা ফেণী চলে যাই,  চা-বিঁড়ি খেয়ে একটু পরেই পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তায় ঢুঁকে যাই, আমি তো তখনই নিশ্চিত হয়ে গেছি রোলার কোস্টার কনসেপ্টটা আসলে কোথা থেকে এসেছে ! প্রথমে একটু অসুবিধা হলেও সবাই খুব তারাতারি সুন্দর গুছিয়ে ফেলে। এভাবেই চলে যাই, একটা রাবার বাগানের মধ্যে। ওখানেও বিরতি মেলে, কেউ ছবি তোলে আর কেউ কেউ আসিফের ডুকাটি(মেগেলি) নিয়ে হাসাহাসি করে। আসিফ দৃঢ়তার সাথে সব মোকাবিলা করে। ওর মত ছেলেই হয়না, ওর বউ ইনশাল্লাহ অনেক ভাগ্যবান হবে। 

এভাবেই আমরা আমাদের গন্তব্য খাগড়াছড়ি পৌঁছে যাই। পর্যটনে আমাদের রুম বুকিং দেয়া ছিল, একটা সই দিয়ে গোসল করে খেয়ে ঘুমানোর পায়তারা করার আগেই সবাই বের হয়ে পরে, আর বের হতে না হতেই আমি হা হয়ে যাই, এ আমি কোথায় ? এতো সুন্দর আমাদের দেশ, সত্যি নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হয় ! আঁকা বাঁকা রাস্তায় আমি ফুয়াদ, জিতু, সাঈদ তো পাগল হয়ে যাই, সেই রকম করনারিং, কিন্তু ওরা কাউকে সামনে দেখলেই পাগলের মত করে, তাই টানতেও ভয় লাগে, আবার অচেনা রাস্তা, এই অনুভুতি ভাষায় প্রকাশের মত না। 

আমাদের বিডিএম-এর ওখানকার প্রতিনিধি সোহেল, বিকাশ ও নাম না জানা আরও অনেকে পুরো শহরটা ঘুরিয়ে আলুটিলা গুহার মধ্যে  দিয়ে নিয়ে চলে, নিধিতো যাবেই না, জোর করে নিয়ে যাই, সারারাত না ঘুমিয়া এত বড় জার্নি করে মশাল হাতে আমারতো পুরাই জনি ডেপ অনুভুতি, অসাধারণ কিছু মুহূর্ত, শুরুতেই সাগরের একটা আছাড়, জিতুর অসামান্য পাগলামি এবং শ্রুতিমধুর বাজে আলাপ সবকিছুকে আরও অনেক অনেক উপভোগ্য করে তোলে। এরপরে শুনি অনেক উঁচু কোথাও যেতে হবে, ওখানকার লোকাল ছেলেরাও নাকি সকাল-সন্ধ্যা ডিগবাজী দেয়। ভয়কে জয় করে আলুটিলার হেলিপ্যাডে আড্ডা, পুরো শহরটা ওখান থেকে দেখা যায়, আর মেঘের দল একটু পরে পরে এসে সব ঢেকে দিয়ে যায়। 

ওই রাতেতো ফয়সাল ভাই এত উঁচু ভেবে নিঞ্জা নিয়ে উঠেন-ই নাই! এরপরে কোথায় যেন চা খেতে গেলাম, ৩/৪ কাপের কম মনে হয় কেউ খায়নি! রাতের বেলায় খেতে গেলাম 'সিস্টেম' নামের অদ্ভুত এক খাবার হোটেলে, এখানকার ঘটনাও আমার পক্ষে ব্যাখ্যা করা সম্ভব না, জানতে হলে আপনাকে ওখানে জেতেই হবে ! এরপরে রুমে এসে এক সিলেটী দম্পতি ও দুইটা ছেলেমেয়ে আমাদের সাথে পরিচিত হয়ে অনেক গল্প করেন, ছোটো শিশুরা নিষ্সাপ, এই বলে সাগর তাদের ছোটো ছেলেটাকে বলে, বাবু বল তো কন বাইকটা তোমার সবচেয়ে পছন্দও ? বাবু আমার বাইক তা দেখিয়ে দিলে আমার না অনেক খুশিই লাগে। কোন কথা ছাড়াই গোসল করে আমি ঘুম দেই, কে যেন উঠিয়ে দিলে দেখি সবাই ট্যাঙগও খায়, আমি খাবার পরে সব ঘুম ! 

একা একা সারারাত বিকাশের গলায় গান, ওয়ারফেযের রুপকথা টা ও অনেক অনেক ভাল গায় । এরপরে সকালে নাস্তা করেই দিঘিনালা ঝর্ণায় গোসল । ঝর্নায় যাবার রাস্তাটি ছিল তখন পর্যন্ত যাওয়া সবচেয়ে সুন্দর রাস্তা। নির্ঝর জেতে না জেতেই এক বিরাট বাঁশের বাঁশি হাতে হাযির, ওটা দেখে টেনে দেখার ইচ্ছা, সামলানোর কোন ইচ্চাই আমার ছিলোনা !মাসুম ভাই আমাদের সাথে ওখানেই মিট করেন। জিতু তো ঝর্নার উপরে উঠে লাফ, আমি আর নাইম ও দ্বিধা করি না, না দিলে সত্যি অনেক কিছু মিস হয়ে যেত। সাগর যে সাঁতার জানে না, তা জানতে পারি যখন ও আমাকে টান দিয়ে নিয়ে পাথরের মধ্যে পরে যায়, আমি ওর মাথা টা ধরে ফেলতে পারলে কি হতো জানিনা, ওর মাথা আর পাথরের ফাঁকে পরে আমার হাত অন্ততও ব্যাথা হতো না! এভাবে ৩-৪ ঘণ্টা পানিতে অমানবিক লাফা লাফি ও একদল চাকমা ছেলেমেয়েদের উপস্থিতি আমাদের পাগলামি আরও বাড়িয়ে দেয় ।

 মোটর সাইকেল ভ্রমণ

এরপরে সবাই হেলিপ্যাডে মেঘের মধ্যে বসে আড্ডা সাথে শুকনা খাবার। সেদিন আর ফয়সাল ভাই পাহাড়ে উঠতে একটুও দ্বিধা করেননি। এমন সময় সবাইকে রেখে আমি আর সাগর ডাক্তারের কাছে যাই। পাহাড়ি পথে মূল পাগলা চালানো শুরু করি তখন, যাবার সময় সাগরের পিছনে পিছনে রাস্তা মাপি, ওর সাথে বিকাশ, আমাদের পথ পরিদর্শক। মুখস্থও পাহাড়ি রাস্তায় ওর রাইডিং আমার কাছে ভাল লাগছে। 

আসার সময় ও আমার সাথে ওঠায় আমি সামনে যাবার সুযোগ পাই, আমার বাইক দিয়ে ধোঁয়া বের করে খেন্ত দেই ! বিকাশ আমার বাইক দিয়ে নেমে যায়, ওর নাকি মরার শখ নাই।  রাতে 'সিস্টেম'এ খেতে যেয়ে দেখা হয় টিনা জিআরজি র সাথে, ওরাও সেদিন ওখানে যায় আর আমাদের পরেরদিন রাঙ্গামাটির দাওয়াত দিয়ে যায়, এবং আমরা সবাই যাবার জন্য একমত হই। সবাই ফিরে এলে আমি, জিতু, সাগর, আসিফ, নাইম, নির্ঝর ও মিলন ভাই চা খেতে বের হই, নাইমের পিছনে আমি ১১০একটা মোড় ঘুরি, তাও ওরে ধরতে পারিনি। মিলন ভাই তো ৮০ তে গরু দেখে রাস্তার বাইরে নেমে যান একবার। 

পর্যটনে ফিরে দেখি চাকমাদের বানান গোলাপি আর সবুজ মদ ! খেয়ে তো রিয়ায ভাইয়ের বুদ্ধিতে আমি আর জিতু আসিফের তালা দেয়া, অ্যালার্ম লাগানো বাইক গায়েবও করে ফেলি, একটু পরে মোবাইলও। কারন ও মকর রাশি, ওকে ভুতে ধরেছে, ওর সব কিছু ভুত নিয়ে যাচ্ছে ! এভাবে সব লুকানোর কাজটা মোটামুটি আমি করি, কিন্তু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাই, যখন শুনি আসিফের টাকাও পাওয়া যাচ্ছেনা, কারন ও ব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা ! 

পরে জানতে পারি, নাহ, ওর টাকা ঠিক আছে।সবই ঠিক ছিল, শুধু ওর সারারাত না ঘুমানোটা ছাড়া । মদ খেয়ে ফুয়াদ আমাকে একটা চড় মারে, আমি কিভাবে হজম করেছি, আমি জানিনা ! কিন্তু আসিফের সাথে এমন কাজ না করলে কোনদিনও মেনে নিতে পারতামনা ! আমি রাঙ্গামাটি যাচ্ছি, তা আমার এক্স চাকমা গার্লফ্রেন্ডটা জানতে পেরে ফোনের পরে ফোন দিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু আমি তখনও জানি না যে রাঙ্গামাটি যাওয়া আদৌ হবে কিনা ! 

রিয়ায ভাইয়ের ফোন দিয়ে আমি আর নিধি এফবি ঘেঁটে চার্জ শেষ করার সে আমাদের সাথে খুব একটা ভাব ন্যায়, কিন্তু আমার খুবই ভাল লাগে, যখন মনে পরে, আশুলিয়ার খামারবারিতে বারবিকিউর পরে আমার চার্জার রিয়ায ভাই খুলে নিজেরটা দিয়ে রেখেছিল এবং আমার সেল বাসায় আসার অনেক আগেই অফ হয়ে গিয়েছিল। পরের দিন আমার একটা এক্সাম, সবাই নির্ঘুম, ঢাকা ফেরত যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই, কিন্তু রাঙ্গামাটি না যেতে পারার দুঃখটা আমি এখনও ভুলতে পারিনি। আসার পথের রাস্তাটা আমার দেখা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সুন্দর রাস্তা। 

যেখানে মাসুম ভাইকে বিদায় দেই, ওখানে একটা সিঙ্গারা-পুরির দোকানে থামি, যা ছিল, সব খেয়ে ফেলি । মাসুম ভাইকে বিদায় দিয়ে ফেনীর পথে যাত্রা শুরু করি, গন্তব্য সাঈদের বাড়ি । পৌঁছে সাথে সাথে আমি আর নিধি পুকুরে ডুব দেই, এরপরে অবাক করা পাকিস্তানি বিরিয়ানি, বারবিকিউ এবং মিষ্টি। প্রত্যেকটা খাবারের স্বাদ ছিল এক কথায় অপূর্ব। আসার পথে সাইদের বোন আমাদের সাথে আসে। পাগলামি শুরু করেন ফয়সাল ভাই! নির্ঝর আর নাইম খিঁচ লাগায়, দুইজনই খুব ভাল চালায়, দুই টারে ধরতে না ধরতেই দেখি ১৩০কিমি + উঠে যায়, এর মধ্যে পাশে দিয়ে শাঁই, ফয়সাল ভাই যাচ্ছেন ১৭৮ কিমি/ঘণ্টা,  ওই গতিতেও আমার নিজেকে স্থির মনে হতো! নিধি নাকি ১০-১৫ মিনিট ১২০কিমি + এ গিয়েও আমাদের কোন খোঁজ পায় না। 

আমরা চান্দিনা ছেড়ে এসে একটু সবার জন্য অপেক্ষা করি, ডিবি এসে পরে এক বাক্স, কিন্তু কোনই ঝামেলায় পরতে হয়না। নাইমকে বিদায় দিয়ে দেই, ও সিলেট যাবে। এরপরে জিতুকে নিয়ে ফয়সাল ভাই ও কুমিল্লা থেকে যান, আমরা আবার ১০ জন হয়ে যাই। একমাত্র বিচ্ছিন্ন ঘটনা আসিফ এক মহিলাকে ৮০+ গতিতে উড়িয়ে দেয়! আল্লাহের অশেষ রহমতে ওর কিছুই হয়নি। ও বোধহয় বেশ ভয় পেয়েছিল। কিন্তু কোন বাঁধা বিপত্তি ছাড়াই টিএসছি চলে জাই।একে একে সবাইকে বিদায় দিয়ে আমি আর ফুয়াদ আমাদের প্রিয় ঢাকার রাস্তায় তাণ্ডবলীলায় মত্ত হই। 

বিজয়সরণী দিয়ে ওকে বিদায় দিয়ে বনানি গিয়েই দেখি আসিফ টুক টুক করে যাচ্ছে, ওর সাথে নিকুঞ্জও গিয়ে মিল্কশেক খেয়ে আসার পথে একটা ভার্সন ওয়ানের সাথে টানি, মামারে ৩বার বিট করলে নিজের কার্ড দিয়ে যায়। এভাবেই ঘরে ফিরি। এসে সেই এক গোসল দিয়ে ভুরি ভোজ এবং ঘুম । হটাৎ করে সব শেষ হয়ে গেল, কিন্তু অনুভুতিগুলো এখনও সম্পূর্ণ স্পষ্ট ।সবাইকে অনেক ধন্যবাদ। 

লিখেছেন- মুনজেরিন ইশতিয়াক ফেসবুক এ BDMOTORCYCLIST

Best Bikes

Honda CB Hornet 160R

Honda CB Hornet 160R

Price: 169800.00

Honda CB Hornet 160R ABS

Honda CB Hornet 160R ABS

Price: 255000.00

Honda CB Hornet 160R CBS

Honda CB Hornet 160R CBS

Price: 212000.00

View all Best Bikes

Latest Bikes

Aprilia Tuareg 660

Aprilia Tuareg 660

Price: 0.00

Aprilia Tuono 660

Aprilia Tuono 660

Price: 0.00

Aprilia Tuono V4

Aprilia Tuono V4

Price: 0.00

View all Sports Bikes

Upcoming Bikes

Bajaj Pulsar NS400Z

Bajaj Pulsar NS400Z

Price: 460000.00

Bajaj Pulsar NS150

Bajaj Pulsar NS150

Price: 0.00

Bajaj Pulsar 400

Bajaj Pulsar 400

Price: 0.00

View all Upcoming Bikes