কার্বুরেটর নাকি ফুয়েল ইঞ্জেকশন—কোনটি বেশি ভালো?

This page was last updated on 20-Nov-2023 11:28am , By Shuvo Bangla

অধিকাংশ বাইকারই সাধরণত তাদের বাইকে কার্বুরেটর এর কাজ কী সে সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন, কিংবা তাদের হয়তো সে বিষয়ে জানার কোনো আগ্রহও কাজ করে না। কিন্তু এ বিষয়ে সামান্য জানাশোনা থাকলেও আপনার বাইক চালানোর ধরনটাই পাল্টে যেতে পারে! তাই আজ আমরা বাইকে জ্বালানি সরবরাহ বিষয়ে সামান্য আলোকপাত করবো। আজকের দিনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, প্রায় সব পারফরমিং বাইকেই কেনো কার্বুরেটরের বদলে ফুয়েল ইঞ্জেকশন পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে? তাহলে চলুন কার্বুরেটর বনাম ফুয়েল ইঞ্জেকশন নিয়ে আলোচনা শুরু করি—সংক্ষিপ্ত আলোচনা। 

কার্বুরেটর নাকি ফুয়েল ইঞ্জেকশন—কোনটি বেশি ভালো?

মোটরসাইকেলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রগুলোর একটি হচ্ছে কার্বুরেটর। সব ইঞ্জিনেই অন্তর্দহন বা কমবাশনের জন্য জ্বালানি ও বায়ুর যথাযথ মিশ্রণ প্রয়োজন। আর যে যন্ত্রটি এই গুরুত্বপূর্ণ কাজ অর্থাৎ জ্বালানি ও বায়ুর অনুপাত নিয়ন্ত্রণ করে সেটাই হলো কার্বুরেটর।

ব্যাপারটি শুনতে তেমন জটিল মনে না হলেও, ভালো আউটপুট দেওয়ার জন্য এর ভিতরের সবগুলো অংশকেই যথাযথভাবে কাজ করতে হয়। কার্বুরেটরের ভিতরে অনেকগুলো যন্ত্রাংশ রয়েছে যেগুলো ঠিক মতো সেট না করা হলে কপাল ভালো হলে, ভালোভাবে বাইক চলার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করবে, আর কপাল বেশি খারাপ হলে বাইক চলবেই না! কারণ ইঞ্জিন ঠিক ভাবে চলার জন্য জ্বালানি ও বায়ুর মিশ্রণের সঠিক অনুপাত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

কার্বুরেটর

কার্বুরেটর – কীভাবে এটি কাজ করে

এয়ার ইনটেক বা এয়ার ফিল্টারের মাঝ দিয়ে কার্বুরেটরের ভিতর বায়ু প্রবেশ করে। আর কার্বুরেটরের ভিতর দিকের দেয়াল ক্রমশ সরু হয়ে যাওয়ায় এর ভিতরে বায়ুর চাপের কারণে গতিও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। থ্রটল স্লাইডের—থ্রটল ক্যাবলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত একটি ভাল্ব—সঙ্গে আড়াআড়ি দিকে বায়ু প্রবাহিত হয়। থ্রটল টানলে এটা খুলে যায়, ক্যাবলটি কার্বুরেটরের বডিতে বসানো থ্রটল স্লাইডকে সারিয়ে দেয়। স্লাইড সরে গেলে দ্রুত গতির বাতাস ফ্লোট চেম্বার থেকে মেইন জেটে জ্বালানি টেনে নেয়।

এটা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই হয়, কারণ উচ্চ চাপের (ফ্লোট চেম্বার) জায়গা থেকে জ্বালানি সহজেই নিম্ন চাপের (কার্বুরেটর বডি) এলাকায় প্রবাহিত হয়। সেখানে জ্বালানি বায়ুর সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে ইঞ্জিনের ভিতর প্রবেশ করে। আর এক্ষেত্রে কতোখানি জ্বালানি প্রবাহিত হবে তা নির্ভর করে নিডল ভাল্বের অবস্থান ও আকার, মেইন জেটের আকার এবং ফ্লোট চেম্বারে জ্বালানি তেলের উচ্চতা তথা চাপের ওপর।

আর ফ্লোট চেম্বারে জ্বালানির উচ্চতা ফ্লোট দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তাই কার্বুরেটরের ভিতরে সঠিকভাবে ফ্লোটগুলো অ্যাডজাস্ট করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া গাড়ির বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইঞ্জিনের ভিতরে ব্যবহৃত ভ্যাকুয়াম লাইনে এয়ার লিক দেখা দিতে পারে। এসব লিকের কারণে ইনটেকের ভিতর অধিক হারে বায়ু ঢুকতে পারে। এর ফলে বায়ু-জ্বালানির মিশ্রণের ভারসাম্য নষ্ট হয়। আর ইনটেক সিস্টেমে অধিক বায়ু ও কম জ্বালানি মিশ্রণ ব্যবহার করলে অন্তর্দহন প্রকোষ্ঠের তাপমাত্রা প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পায়।

কার্বুরেটর মূলত নির্ভর করে বায়ু-জ্বালানির সঠিক অনুপাতে মিশ্রণ তৈরিতে ইঞ্জিনের ভিতর কোন গতিতে বায়ু ঢুকছে তার ওপর। পাশাপাশি জ্বালানির প্রবাহও ঠিক রাখে এটি। আর যদিও বর্তমানে অধিকাংশ হাই পারফরমেন্স বাইকে ফুয়েল ইঞ্জেকশন ব্যবহার করা হয়, তবুও প্রচুর বাইকে এখনো কিন্তু কার্বুরেটরই ব্যবহৃত হচ্ছে।

ফ্লোট চেম্বারের যন্ত্রাংশ

নিডল ভাল্ব অ্যাসেম্বলি ফ্লোটসমূহ ফ্লোট পিভট রড চেম্বার ও গাসকেট ড্রেইন প্লাগ

ফ্লোট চেম্বার মূলত জ্বালানি রিজার্ভ করে এবং অন্যান্য সকল কার্যকরী যন্ত্রাংশগুলোকে ধারণ করে রাখে। অধিকাংশ ফ্লোটেই মেইনটেন্যান্সের জন্য ড্রেইন রাখা হয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটাকে জ্বালানির সঠিক উচ্চতা পরিমাপের জন্যও ব্যবহার করা হয়।

কার্বুরেটর থেকে অল্প কিছু জ্বালানি বাষ্পীভূতও হয়ে যায়। কারণ এটা উন্মুক্ত থাকে। বাইক যখন বন্ধ থাকে তখন এয়ার ইনটেক কিন্তু বন্ধ থাকে না! কার্বে জমা হওয়া জ্বালানির কিছুটা উবে যায়। অবশ্য সারাজীবনে এভাবে যতোটুকু জ্বালানি বাষ্পীভূত হয় তা পরিমাণে খুবই সামান্য। তবে সবচেয়ে বড়ো সমস্যা হচ্ছে ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় কার্বুরেটর ইঞ্জিন স্টার্ট নিতে ঝামেলা করে। এমনকি ধাক্কা দিয়েও অনেক সময় কাজ হয় না!

ইলেকট্রনিক ফুয়েল ইঞ্জেকশন—ইএফআই

ইদানীং অধিকাংশ বাইকারই ইগনিশনে চাবি দিয়ে বাইকে চড়ে বসে কোনো ঝামেলা ছাড়াই টান দেন—এটা সম্ভব হয়েছে ফুয়েল ইঞ্জেকশন ইঞ্জিনের ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা দূর হওয়ায়। অবশ্য টেকনিকালি ব্যাখ্যা করতে গেলে বিষয়টি বেশ জটিল। প্রথমত, এক্ষেত্রে জ্বালানি ট্যাঙ্কের ভিতর একটি পাম্প থাকে, আরো থাকে একটি ইলেকট্রনিক ইঞ্জিন কন্ট্রোলার ও বেশকিছু সেন্সর।

ফুয়েল ইঞ্জেকশন সিস্টেমকে একটি কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত জ্বালানি সরবরাহ সিস্টেম দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এক্ষেত্রে ইসিইউ বিভিন্ন সেন্সর থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এবং সেই তথ্যের ভিত্তিতে ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহ করে। অন্য সেন্সরগুলো আরপিএম, ইঞ্জিনের তাপমাত্রা, থ্রটল পজিশন ও ক্র্যাঙ্কশ্যাফট পজিশন নিয়ন্ত্রণ করে।

আবার, ইঞ্জিন লোড ও বিভিন্ন আরপিএমে কী পরিমাণ জ্বালানি প্রয়োজন সেটাও ইসিইউ-এর ফুয়েল ম্যাপে উল্লেখ করা থাকে। ফলে একবার প্রয়োজনীয় জ্বালানির পরিমাণ নির্ধারিত হয়ে গেলে ইসিইউ নিজে থেকেই জ্বালানি ও বায়ুর মিশ্রণের অনুপাত ঠিক করে নেয়। কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত ইলেকট্রনিক ফুয়েল ইঞ্জেকশন সিস্টেমে একটি কম্পিউটার, অক্সিজেন সেন্সর, এক সেট ফুয়েল ইঞ্জেক্টর, ফুয়েল প্রেসার রেগুলেটর ও একটি ইলেকট্রিক ফুয়েল পাম্প থাকে। চাবি দিলেই ইসিইউ চালু হয়ে যায় এবং বাইক চলার জন্য সবকিছু প্রস্তুত করে নেয়।

কার, ট্রাক ও অন্যান্য আধুনিক যানবাহনের ইঞ্জিনের মতো বাইকের ইঞ্জিনের ফুয়েল ইঞ্জেকশনও একইভাবে কাজ করে। ইঞ্জিন কন্ট্রোল ইউনিট বা ইসিইউ হিসেবে পরিচিত একটি ক্ষুদ্র কম্পিউটার বৈদ্যুতিক পদ্ধতিতে ইঞ্জিনের ফুয়েল ইঞ্জেকশন নিয়ন্ত্রণ করে। কম ধোঁয়া উৎপাদন, শক্তির অপচয় কমানো ও অধিক অ্যাক্সিলারেশন নিশ্চিত করতে ইঞ্জিনে কতোখানি ফুয়েল ইঞ্জেক্টর থেকে প্রবেশ করবে সেটা থ্রটল, আরপিএম, বায়ু ও ইঞ্জিনের তাপমাত্রা এবং ক্র্যাঙ্কশ্যাফটের অবস্থান প্রভৃতি ভ্যারিয়েবলের ভিত্তিতে ইসিইউ নির্ধারণ করে।

আধুনিক বাইকগুলোতে ফুয়েল ইঞ্জেক্টরগুলো সেকেন্ডে একাধিক বার খুলতে ও বন্ধ হতে পারে। একভাবে বললে বৈদ্যুতিক ফুয়েল ইঞ্জেকশন চিরাচরিত কার্বুরেটরের চেয়ে অনেক সহজ পদ্ধতিতে কাজ করে। সংক্ষেপে বললে, ইএফআই হচ্ছে একটি নজল যেটা কম্পিউটারের নির্দেশ মতো ইঞ্জিন প্রকোষ্ঠে প্রয়োজন অনুসারে বায়ুতে ফুয়েল স্প্রে করে।

তবে আলাদা করে যদি বলতে হয়, কখন ও কীভাবে কম্পিউটার বুঝে যে এখন এতোটুকু ফুয়েল স্প্রে করতে হবে, সেটা বলাটা একটু জটিল। ফুয়েল ইঞ্জেকশন মূলত উচ্চ চাপে পিস্টন হেডের কাছাকাছি একটি স্থানে জ্বালানি সরবরাহ করার জন্য উচ্চ চাপের পাম্প ব্যবহার করে। এক্ষেত্রে বায়ু শুষ্ক অবস্থায় অর্থাৎ জ্বালানির কোনো সংস্পর্শে না এসেই ইঞ্জিনে প্রবেশ করে এবং সেই বায়ুতে জ্বালানি স্প্রে করা হয়।

আধুনিক ইঞ্জিনগুলো বেশি টেকসই হয়, কারণ এতে ইএফআই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, যা নির্ভুলভাবে বায়ু-জ্বালানির অনুপাত নির্ধারণ করতে পারে। ফলে ইঞ্জিনে কখনো অত্যধিক বেশি বা খুব কম তাপমাত্রা তৈরি হওয়ার সুযোগ পায় না। এর কারণেই মূলত স্পার্ক প্লাগগুলো বেশিদিন টিকে, ভাল্বগুলো পুড়ে না এবং পিস্টন রিংগুলো দ্রুত ঝেরঝেরে হয় না। যার ফলে ইঞ্জিন দীর্ঘস্থায়ী হয়।

আর কখনো যদি ইঞ্জিনে বড়ো ধরনের সমস্যা দেখা দেয় যেটা কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, তখন মিটারে বসানো ইঞ্জিন লাইট জ্বলে উঠবে। যা থেকে আপনি বুঝতে পারবেন, বাইকটিকে হাসপাতালে (!) নেওয়ার সময় হয়েছে। তাছাড়া ইএফআই এর ফলে ইঞ্জিন পারফরমেন্স ও জ্বালানি সাশ্রয় বৃদ্ধি পায়। থ্রটল রেসপন্সও বেড়ে যায়। এর ভালো উদাহরণ সম্প্রতি বাংলাদেশে বাজারজাত করা ইয়ামাহা এফজি-এফআই।

সাধারণত কার্বুরেটরের প্রায় সব ধরনের সমস্যাই অল্প কিছু যন্ত্রপাতি সঙ্গে থকালে রাস্তায় বসেই ঠিক করে ফেলা যায়। কিন্তু ইএফআই-য়ে কোনো সমস্যা দেখা দিলে নতুন যন্ত্র লাগাতে হয় এবং এটা ব্যয়বহুল। আর ঠিক করা তো আরো বেশি ঝামেলার কাজ! তাছাড়া আধুনক ইএফআইগুলোর সমস্যা যাচাই করার জন্যও কম্পিউটার দরকার পড়ে।

প্রায় নির্দ্বিধায় আশা করা যায় যে, অদূর ভবিষ্যতে সব বাইকেই কার্বুরেটরের পরিবর্তে ইএফআই প্রযুক্তি চলে আসবে। কারণ দিনকে দিন ধোঁয়া নির্গমনের ব্যাপারে দেশগুলো কঠোর সব আইন জারি করছে। তবে এটাও ঠিক যে ইএফআইয়ের দাম অনেক কমে আসলেও অধিকাংশ লোকই কার্বুরেটরই ব্যবহার করতে চাইবে। কারণ ভালো মানের একটি কার্বুরেটর অত্যাধুনিক ইএফআইয়ের চেয়ে সর্বসাকুল্যে ১০ শতাংশ কম শক্তি উৎপাদন করতে পারে। আর ইএফআইয়ের খরচের বিষয়টি মাথায় রাখলে এটা তেমন কোনো ব্যাপারই নয়।

আসলে ইএফআইয়ের সবচেয়ে বড়ো সুবিধা হলো, এটি ইঞ্জিনে বায়ু-জ্বালানির যথাযথ মিশ্রণ তৈরি করতে পারে, যা আবার ইঞ্জিনের দীর্ঘস্থায়িত্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সত্যি কথা বলতে কি, অন্যদের মতো আমরাও কার্বুরেটর ও ইএফআইয়ের মধ্যে কোনটি বেশি ভালো তা নির্ধারণ করতে গিয়ে গলদঘর্ম হয়েছি! আসলে উভয়েরই ভিন্ন ভিন্ন কিছু সুবিধা-অসুবিধা রয়েছে। যার কারণে কোনো একটির ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো একটু কষ্টকরই। সেজন্য বলা যায়, আপনার প্রয়োজন অনুসারে এবং আপনি বাইকের কেমন পারফরমেন্স চান তার উপর নির্ভর করে এ দুটির মধ্য থেকে একটি বেছে নিতে পারেন।

লিখেছেনঃ-  জিয়া সিদ্দিকি

Best Bikes

Honda CB Hornet 160R

Honda CB Hornet 160R

Price: 169800.00

Honda CB Hornet 160R ABS

Honda CB Hornet 160R ABS

Price: 255000.00

Honda CB Hornet 160R CBS

Honda CB Hornet 160R CBS

Price: 212000.00

View all Best Bikes

Latest Bikes

Bajaj Pulsar 400

Bajaj Pulsar 400

Price: 0.00

CFMoto 300SS

CFMoto 300SS

Price: 510000.00

Honda Shine 100

Honda Shine 100

Price: 107000.00

View all Sports Bikes

Upcoming Bikes

Bajaj Pulsar 400

Bajaj Pulsar 400

Price: 0.00

CFMoto 300SS

CFMoto 300SS

Price: 510000.00

Qj motor srk 250

Qj motor srk 250

Price: 0.00

View all Upcoming Bikes