ওরা ১১ জন! মোটর বাইকে ঢাকা থেকে বান্দরবান-রাঙ্গামাটি-ঢাকা

This page was last updated on 29-Nov-2022 11:16am , By Saleh Bangla

ওরা ১১ জন- আদর, প্রিন্স, জিয়া, রাসিক, মাহিন, হাসান, জসিম, রতন, রকি, আহাদ, মনি। ১১ টা মোটর সাইকেল। তারা চিন্তা করে ঢাকা থেকে এ মোটর সাইকেল করেই তারা ছুটে যাবে দুই পাহাড়ী কন্যা বান্দরবান ও রাঙ্গামাটিতে। মিটিংয়ের পর মিটিং, কখনও বা অনলাইনে কখনওবা অফলাইনে। দিনক্ষণ ঠিক হয়। ২৮ সেপ্টেম্বর নির্দিষ্ট দিনে সবাই উপস্থিত বুয়েট ভিসি চত্বরে। একদিকে ব্যাপক বৃষ্টি অন্য দিকে সবার মনে উত্তেজনা, এতটা পথ তাও আবার নিজে চালিয়ে নেবে মোটর সাইকেলে। পাহাড়ী ওই উচু রাস্তাগুলোতে নিজেই রাইড করবে! খুব সহজেই যে ঘর থেকে তারা অনুমতি পেয়েছে তাও না। এ দলের মাজেদুল হক মনি-র কথাই ধরা যাক। ব্যাংকে জব করেন। এত বৃষ্টিতে বাসা থেকে বের হচ্ছে দেখে তার মা জিজ্ঞেস করেন, তোরা কতজন যাচ্ছিস?

ওরা ১১ জন! মোটর বাইকে ঢাকা থেকে বান্দরবান-রাঙ্গামাটি-ঢাকা

ওরা ১১ জন মাজেদ উত্তর দেয়, ১১/১২ জন। মা এর আগে মানা করার চেষ্টা করেছেন। খুব লাভ হয়নি। এবার তা শুনে বললেন, “ওদের কারো কি মা বাবা ভাই বোন নেই? মায়ের প্রশ্নের উত্তরে মাজেদুল বলে, বউ বাচ্চাও আছে কারও কারও। হতাশ মা বলেন, তোর মত পাথরের ছেলে আরও কেউ কেউ জন্ম দিয়েছে তাহলে এ দুনিয়ায়, যা তবে সাবধানে থাকিস, সবার খেয়াল রাখিস। মায়ের দোয়া নিয়ে বের হন মাজেদুল। 

তুমুল বৃষ্টিতে বেশ কিছু রাস্তায় পানি জমে যায়। বৃষ্টির কারণে তিন ঘন্টা দেরিতে শুরু হয় তাদের যাত্রা। রাত দশটায় মোটর সাইকেলগুলোর ইঞ্জিন চালু হলো। পানি জমা রাস্তা দিয়ে পার হতে থাকে তাদের গাড়িগুলো। মাঝে মাঝে বৃষ্টি পড়ছে। এতগুলো মোটর সাইকেল ছুটে চলছে। রাতের খাবারটা গ্রহণ করে কুমিল্লায়। তারা যখন ২৬৪ কি.মি দূরের চট্টগ্রাম পৌঁছে তখন চট্টগ্রামে আলো ফুটে নি। কিছুক্ষণ পর মুয়াজ্জিন আযান দিবে। সারাদিনের ব্যস্ত চঞ্চল চিটাগাংটা তখন ঘুমাচ্ছিলো। ক্লান্তি ধরে আসা বাইকারদের শরীরে পানির প্রলেপ। 

প্রায় পুরা রাস্তাতেই বৃষ্টির সাথে সখ্যতা করে গাড়ি চালাতে হয়েছে। তাই কিছুক্ষণ বিরতি নিল চট্টগ্রামের ইস্পাহানি মোড়ে। এরপর তাদের যাত্রা শুরু হলো বান্দরবানের উদ্দেশ্যে। চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবানের দূরত্ব ৭৮ কি.মি। গাড়িগুলো ছুটে চলছে। গাড়ির না হয় তেল আছে খাবার হিসেবে। কিন্তু গাড়িগুলো যারা চালাচ্ছে তাদেরও তো খাবারের দরকার! একথাটা মনে হতেই গাড়িগুলো ইঞ্জিন থামল পটিয়াতে। সেখানে প্রথম দফা সকালের নাস্তা সারল। খাওয়ার পর আয়েশী ভাব সবার মাঝে। আয়েশি ভাব হলে যা হয়, গাড়িগুলোর গতি কমে গেল যেন। 

সকাল সাড়ে আটটায় বান্দরবানের বাস স্টেশন এলাকায় অবস্থিত হোটেল হিলভিউয়ের সামনে গাড়িগুলো পার্ক করা হলো। বান্দরবানে আকাশটা রোদাটে, এখানে এসে নীল আকাশের দেখা পেল সবাই। এরমধ্যে ফ্রেশ হয়ে রুপসী বাংলায় দ্বিতীয় দফা সকালের নাস্তা সারল সবাই। নীলাচলে দুপুরের দিকে নীলাচলের পথে এগিয়ে যায়  মোটর সাইকেলগুলো। দুপুরের দিক, তাই অনেকটাই ফাঁকা মেঘের রাজ্য নীলাচল। 

তেমন ভীড় না থাকলেও মায়া ধরানো গলায় প্রতিদিনের মত গেয়ে যাচ্ছিল ঢোল নিয়ে গান গাওয়া অন্ধ ব্যক্তিটি। পুরা নীলাচলই যেন নিজেদের। শুরু হলো ফটোশ্যুট। কে কত বেশি ছবি তুলতে পারে তার প্রতিযোগিতা যেন! এসময় সবাই যখন নিজে নিজের ছবি তুলতে ব্যস্ত তখন মেহেদী হাসান আদর মনে করিয়ে দিলেন, নিজেদের ছবি তুললে স্মৃতিগুলো একা থাকবে। গ্রুপ ছবি তোলা দরকার। এবার সবাই দাঁড়িয়ে একসাথে গ্রুপ ছবি তুলতে লাগল। thanchi hoteln ওরা ১১ জনথানছির উদ্দেশ্যে যাত্রা : বান্দরবান গেলে মনে হয় ছোট্ট একটি শহর। ছোট একটি জেলা। কিন্তু জেলাটি যে কত বড় তা এর উপজেলাগুলোর দূরত্ব দেখলে বোঝা যায়। বান্দরবান শহর থেকে থানছির দূরত্ব প্রায় ৮২ কি.মি। সাধারণ ৮২ কিলোমিটার দূরত্বের সাথে এর ঢের ফারাক আছে। কতটা উঁচু ও খাড়া হওয়া যায় তারই যেন নমুনা রাস্তার পরতে পরতে, আবার কোথাও কোথাও এতটাই ঢালু ব্রেক ধরলেও বুক কাঁপে। আর রাস্তার পাশের খা দেখলেতো রীতিমত মাথা ঘুরায় সেগুলোর গভীরতা দেখে। 

ভুলটা হলো ওয়াই জাংশন গিয়ে। এখানে দু্ইটা রাস্তা ভাগ হয়েছে। একটা বায়ে অন্যটা ডানে। সবার সামনে প্রিন্স। তার পেছনে সবাই। সে সোজা চলে গেল বায়ের রাস্তাটা ধরে। পেছনে সবাই ছুটছে। মনের আনন্দে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ টানা চলার পর রাস্তাগুলো বেশিই অপরিচিত মনে হতে থাকলো। সন্দেহ জাগল প্রথমে মনিরের। রাস্তায় ভেঙ্গে পড়া গাছ অপসারণের কাজ করছিল আর্মির একটি টিম। সেখানের এক আর্মি সদস্যের কাছে জিজ্ঞেস করে, ভাই থানছির রাস্তা এটা? 

আর্মি ভদ্রলোক বললেন, না ভাই। আপনারা ভুল রাস্তায় আসছেন। এটা রুমার দিকে গেছে। থানছি যেতে হলে আপনাদের পেছনে যেতে হবে। এবার পেছন পথের যাত্রা। আবার সে ওয়াই জাংশন ডানপাশের রাস্তা ধরে এগিয়ে চলা। যেখানেই সুন্দর লাগে সেখানেই গাড়িগুলো দাঁড়িয়ে যায়। ছবির পর ছবি তোলা হয়। মাঝপথে আর্মির সাজানো গোছানো এক ক্যান্টিন চোখে পড়ে। সেখানে বসে হালকা নাস্তা গ্রহণ। আবার গাড়ির যাত্রা। এম্পু পাড়ায় থামে গাড়ি, পাহাড়ি পাড়া। নিচে বিশাল বিস্তীর্ণ আকাশ। পাহাড় আর আকাশ মিলে মিশে বন্ধুত্ব পেতেছে।

পিচঢালা রাজপথে যখন মেঘরা আসে নামে! নীলগিরি তখনও কিছুটা দূরে। সময়টা বিকেল। ছবির মত সাজানো আঁকা বাঁকা পথগুলোতে ছুটে চলা গাড়িগুলোতে বসে থাকা মানুষগুলো তখন বিস্মিত। কেউ কেউ তো বিস্ময়ে চিৎকার দিয়ে উঠে! এইকি! চারদিকে তো মেঘ!! হাতে মেঘ, মুখে মেঘ ছুয়ে দিচ্ছে। পিচঢালা রাস্তায় তখন মেঘ নেমে এসেছে। মেঘ ছুটে বেড়াচ্ছে। গাড়িগুলো থামে। মেঘের সাথে নিজেদের ছবিতে বন্দী করে। সন্ধ্যায় নীলগিরি রাস্তায় রাস্তায় দাঁড়ানো, কিছুটা ভুল পথ মাড়ানো এতসব ঘটনার পর নীলগিরি পৌঁছতে পৌঁছতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। 

এদিকে আবার বলি পাড়ায় সন্ধ্যার পর গাড়ি চলতে নিষেধাজ্ঞা আছে। তাই নীলগিরি সৌন্দর্য অবলোকন না করেই চালাতে হয়েছে গাড়ি। সাড়ে সাতটার দিকে গাড়িগুলো বলিপাড়া বিজিপি ক্যাম্পে গাড়িগুলো রিপোর্ট করতে দাঁড়ায়। বলিপাড়া থেকে ১৫ কি. মি এর মত। সন্ধ্যায় ওই রাস্তায় গাড়ি চালানো নিষেধ। নিস্তব্ধ থাকে রাস্তাগুলো। প্রথমে মানা করা হলো। যেতে না পারলে বিপদ হবে। যখন জানানো হলো, থানছি হোটেল ঠিক করে রাখা হয়েছে, এখন বান্দরবান ফিরে আবার রাত কাটানোও কঠিন। বিষয়টি বুঝিয়ে বলার পর নিরাপত্তা চৌকিতে থাকা বিজিবি সদস্যর মন কিছুটা গলল। তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে বেশি কিছুক্ষণ কথা বললেন। 

পরে সবুজ সিগন্যাল পাওয়া গেল। থানছিতে যে হোটেলটিতে থাকার জন্য ঠিক করা হয়েছে সেটাতে যাওয়া এক চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার হয়ে দাঁড়ালো। বৃষ্টিতে পিচ্ছিল ঢালাই করা রাস্তা। প্রথমে ঢালাই করা রাস্তা, পরে ওপরে উঠার অনেকগুলো সিড়ি। এসব পার হয়ে হোটেলে যেতে হবে। একা যেতে হলে খুব একটা সমস্যা না। সাথে যে মোটর সাইকেলগুলোও নিয়ে যেতে হবে। প্রথম প্রিন্স। যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই স্লিপ খেল তার গাড়ি। গাড়ি পড়ে গেল রাস্তায়। এরপর মাজেদুল। তিনি কিছুটা সতর্ক প্রিন্সের পড়ে যাওয়া দেখে। তবে খুব একটা লাভ হলো না। রাস্তা যে এত বন্ধু না। তিনিও পড়লেন পিচ্ছিলতার ফাঁদে। 

সবাই মহা টেনশনে! যারা গুরু (এক্সপার্ট) তাদের যদি এমন অবস্থা হয় তাহলে অন্যরা কি করবে? কারো কারো মনে ভয় ঢুকে গেল। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল হোটেলে গিয়ে রাখার দরকার নেই। মসজিদ কিংবা স্থানীয় কোন বাসায় রাখা যায়। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হলো প্রতি মোটর সাইকেল তিন জনে ধরে ধরে উঠাবে। এরপর আসল সিঁড়ি। সিঁড়ির পাশে রাস্তা আছে গাড়ি তোলার। কিন্তু বৃষ্টিতে সে রাস্তা আর রাস্তা নেই হয়ে গেছে স্লিপার কোন রাইড। তাই সিড়িগুলো দিয়েই গাড়ি তুলতে হলো। এর আগে আরেকটু ঘটনা ঘটল। এ টিম আসছে দেখে ঢাকা থেকে দুই জন আলাদাভাবে এসে যুক্ত হয় থানছিতে। ওরা এগারজনও তাদের আন্তরিকভাবে স্বাগত জানায়। কিন্তু যখন দেখল এভাবে মোটর সাইকেল নিতে গিয়ে পড়ে যাচ্ছে, পিচ্ছিল খাচ্ছে। ভয়ে তারা যে আড়াল হলো, কোথায় গেল তাদের আর পরে খোঁজে পাওয়া যায়নি। jorna ওরা ১১ জন

থানছির হোটেলটি  যে হোটেলে তারা থাকে হোটেলটি কাঠের তৈরি দোতলা হোটেল। ওপরে টিন। পাশে পাহাড়। গাছপালা। সামনে মাঠের মত খোলা জায়গা। সেখানে সারি করে রাখা হলো মোটর সাইকেলগুলো। হোটেলের নাম থানছি কুঠির। হোটেলের ভেতর কাঠের মেঝে। সে মেঝেতে তোশক পাটানো। সেখানেই ঘুমের ব্যবস্থা। থানছি কুঠিরেই রাতের খাবার ব্যবস্থা হয়। পাহাড়ি মুরগীর সাথে ভাজি আর ডাল। সকালের থানছি  রাতের আতঙ্কের সিড়িগুলো দিনের বেলায় আনন্দের উপলক্ষ হিসেবে দেখা দিল।

 সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে মোটর সাইকেল গুলো নামানো। উঠানোর সময় কষ্ট হলেও নামানোর সময় মজাই পাচ্ছিলো বাইকাররা। থানছি থেকে এবার যাত্রা ডিম পাহাড়ের পথে। ডিম পাহাড়টি আলীকদম আর থানছির প্রায় মাঝখানে। ভয়ংকর পাহাড় কেটে রাস্তা করা হয়েছে থানছি আর আলীকদমের মধ্যে। ডিম পাহাড়ের রাস্তাটি বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু রাস্তা হিসেবে বলা হয়ে থাকে। আগে থানছি থেকে বান্দরবান হয়ে তারপর আলীকদম যেতে হয়। থানছি-আলীকদম মধ্যকার সড়কটি হওয়ার পর এখন থেকে থানছি থেকেই আলীকদম যাওয়া যায়। আলীকদমের ২৬ কি.মি আগে এ ডিম পাহাড়।

ডিম পাহাড়ে নিরাপত্তার জন্য সেনা চৌকি আছে। সেখানে রিপোর্ট করতে হয়। এক সেনা সদস্য বললেন, কিছুদিন আগে এমন একটা বাইক রাইডার টিম আসছিল। তাদের একজনের ব্যাগে মাদক দ্রব্য পাওয়া গিয়েছিল। আদর বলল, ভাই আমাদের ব্যাগগুলোও চেক করেন। তখন ওই সেনা সদস্য বললেন, না না। আপনাদের বিশ্বাস করে ছেড়ে দিচ্ছি। হেলমেট ড্যান্স ডিম পাহাড়ের থেকে যে রাস্তা নেমে গেছে সেটা দেখে মুগ্ধ হবেন যে যে কেউ। নিচে রাস্তা নামতেই আছে আর সেখানে মেঘের স্তর স্তর ঘুরে বেড়ানো, আকাশের নেমে আসার দৃশ্যটা সারা জীবনের মুগ্ধকর স্মৃতি হিসেবে থাকবে। এমন দৃশ্য দেখে শান্ত থাকা কিছুটা কঠিন।

সে কঠিন কাজ করতে সফলও হলো না টিমের সদস্যরা। তারা খুশীতে হেলমেট ডান্স শুরু করলো। এরপর দুপুর তিনটা পৌঁছায় আলীকদম। সবার পেটে ক্ষিধে। হোটেলের খোঁজ এবার। নাহ খাওয়ার মত হোটেল দেখা মিলল না। এদিকে কড়া বৃষ্টি। কড়া বৃষ্টিতে কড়া চা বিস্কুট খাওয়া হলো। এসময় স্থানীয় এক ছেলের সাথে গ্রুপের সদস্যদের গল্প হলো। এমন তুমুল বৃষ্টি, গায়ে ফোলা রেইন কোট, হাতে গার্ট, মাথায় হেলমেট। 

ছেলেটি এসব দেখে জিজ্ঞেস করল, ভাই আপনারা মানুষ না এলিয়ন। তখন একজন উত্তর দিল, আমরা মানুষই, তবে আমাদের বাইকগুলো এলিয়ন। দুপুরের খাবারটা গ্রহণ করে বান্দরবানের আরেক উপজেলা লামার কুটুম বাড়িতে। সেদিকের একমাত্র অভিজাত হোটেল এটি। লামা থেকে বের হয়ে সিদ্ধান্ত হয় চট্টগ্রাম হয়ে রাঙ্গামাটি যাবে। পথিমধ্যে সিদ্ধান্ত পরির্তন হয়। নতুন সিদ্ধান্ত লামা-কেয়াজুপাড়া রাস্তা ধরা। এ রাস্তার অন্য দিকে লামার বিখ্যাত কোয়ান্টাম মেথডের মূল দপ্তর। লামা-কেয়াজুপাড়ার রাস্তার দৈর্ঘ্য ৬৫ কি.মি। রাস্তাটা ভালই ভয়ংকর। যদিও সন্ধ্যা, আলো কম থাকায় অনেকে বুঝতে পারেনি এই রাস্তায় বিপদজনক সময় মোড় আর উঁচু নিচুর গল্প!

 আবার বান্দরবান সন্ধ্যা সাতটায় আবার বান্দরবান। এবার যাত্রা রাঙ্গামাটি। বান্দরবানের ভেতর দিয়ে বালাঘাটা হয়ে স্বর্ণ মন্দিরের সামনে দিয়ে যে রাস্তাটা গেছে। রাস্তাটা ভয়ংকর ও অনিরাপদ হিসবে পরিচিত। বিশেষ করে রাতে এ রাস্তায় যান চলাচল করে না বলেই চলে। বেশ কিছু ছিনতাই, সন্ত্রাসী ঘটনা ওই রাস্তায় হয়েছে। এদিকে এ রাস্তা দিয়ে রাঙ্গামাটি যেতে হলে ফেরি ধরতে হবে। আবার সন্ধ্যার পর ফেরী চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সিদ্ধান্ত হলো রাত বেশি হওয়ার আগেই দ্রুত গাড়ি চালিয়ে সে ফেরী ঘাটে পৌঁছতে হবে। ওই বিপদজনক রাস্তায় ৬০/৭০ কি.মি সা সা করে গাড়ি ছুটতে লাগল। 

ফেরীঘাটে যখন গাড়ি গুলো পৌছে তখন সময় রাত সাড়ে নয়টা। ফেরী নেই। স্থানীয় কয়েকজন প্রথমে পরামর্শ দিল নৌকা করে মটর সাইকেলগুলো পার করতে। কিন্তু এত এত ভারী মোটর সাইকেলগুলো নৌকা করে পার করা বেশ কঠিন। ফেরীর চালককে ফোন দেয়া হলো। সে ইতোমধ্যে বাসায় চলে গেছে। পরে বুঝিয়ে বলার পর এবং বাড়তি টাকা দেয়া হবে বলা হলে সে ফেরী নিয়ে আসতে রাজি হয়। রাত দশটার দিকে ফেরীর ইঞ্জিনের শব্দ শোনা যায়। সবাই খুশী। প্রস্তুতি নেয় গাড়ি সহ ফেরী উঠার। ফেরী চলতে শুরু করে। এদিকে ঝটপট এক মিটিং হয়ে যায়। এসময় মাজেদুল অন্যদের সতর্ক করে দেয় যে সবার শেষে তার হাতে একটা লাঠি থাকবে। 

পেছন থেকে কেউ আক্রমণ করলে বা থামাতে বললে সাথে সাথে ওই লাঠি নিয়ে হামলা করে বসবে। সবাই প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। যেকোন অনাকাঙ্খিত ঘটনার সঠিকভাবে মুখোমুখি হতে। বরই ছড়ি এলাকাটা আগে থেকেই খারাপ কিছু ঘটনার স্পট হিসেবে চিহ্নিত। এখানে বড় বড় অপহরণের ঘটনার কথাও শোনা যায়। সবাই সর্বোচ্চ সতর্ক। বরইছড়ি রাস্তাটা বেশ ভয়ংকর। কিছু রাস্তা পাহাড়ী মাটি পড়ে রাস্তায় গাড়ি স্লিপ খাচ্ছিল। দ্রুত চালানো যাচ্ছিলো না। এদিকে রাতের অন্ধকার। আবীরের গাড়িটা স্লিপ খেল। তার ঠিক পেছনের গাড়িটা ছিল আহাদের। সে সামনে পড়া গাড়িটার ওপর দিয়ে চালিয়ে যায়, পরের গাড়িটা হাসানের ছিল। সে কোনমতে সামলাতে পারে। সব গাড়ি থেমে যায়। 

এসময় স্থানীয় এক লোককে আসতে দেখা যায়। সবাই সতর্ক। একটু বেশিই সতর্ক হতে দেখা যায় মাজেদকে। সে রীতিমত নিজের কাছে থাকা ছুরিটি বের করে রাখে। যাতে কোন আক্রমণ হলেই প্রতিহত করা যায়। পরে দেখা যায় ওই ভদ্রলোক আসলে সাহায্য করতেই এসেছেন। আবীর আহত অবস্থায় আবার গাড়ি চালাতে সক্ষম হয়। এরপর সবাই অল্প গতিতে গাড়ি চালানো শুরু করে। যাতে আবার নতুন করে কোন দুর্ঘটনা না ঘটে। রাঙ্গামাটি থেকে ১৮ কি.মি আগে আর্মির আরেকটি ক্যাম্প। ভাগ্য ভালো ক্যাম্প সদস্যরা টের পায়নি বাইক রাইডারদের। এসময় ছোট্ট মিটিংয়ের আয়োজন হয়। মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, কেউ হর্ণ বাজাবে না। গাড়ি খুব আস্তে চালানো হবে। 

যেহেতু সামনে যেকোন সময় হাতি কিংবা অন্য কোন প্রাণী এসে পড়তে পারে। সে অনুযায়ী গাড়ি চালানো শুরু হয়। সাপের কামড় রাতের আধার ভেদ করে দুই পাশের পাহাড়ের ভেতর দিয়ে গাড়ির ছুটে চলা। এরমধ্যে হঠাৎ করে ছন্দ পতন। বহরের শেষের আগেরজন হঠাৎ করে চিৎকার দিলেন। তিনি দেখেন তার একটু সামনেই রাস্তার পাশে বড় একটা সাপ ফোস ধরে আছে। কিছু খাবার অপেক্ষায়। এটা দেখে তিনি পা তুলে ফেললেন। সাপ খাবার মনে করে ঠিকই ঠোকর দিল। তবে ভাগ্য ভালো। ঠোকর পড়ল গাড়ির বডিতে। নতুন সিদ্ধান্ত হলো। গাড়ি রাস্তার ঠিক মাঝখান ধরে চলবে। যেহেতু রাস্তার পাশে সাপ থাকতে পারে। সবার মনে ভয়। 

যেকোন সময় সাপ এসে যদি ঠোকর দেয়!! তার পাশে হাতির ভয়তো আছেই। হঠাৎ যদি রাস্তা আগলে কোন হাতি বা হাতির দল এসে দাঁড়ায়!! পরে আর কোন সমস্যায় পড়তে হলো না। পরের দিন শুরু হওয়ার কয়েক মিনিট আগে রাঙ্গামাটি পৌছে অভিযাত্রী দলটি। হোটেল সুফিয়া ইন্টারন্যাশনাল হোটেলে বুকিং দেয়া হয়েছিল। ইতোমধ্যে হোটেলের মানুষেরা ঘুমিয়ে পড়েছে। তাদের ডেকে তোলা হলো। রাতের আড্ডা, মাছ আর একুরিয়ামের গল্প, কারো বা এক্স গালফ্রেন্ডের জন্য আফসোসের দীর্ঘশ্বাস!! অপরিচিত মানুষগুলোও কতটা আপন মনে হওয়া! কত কত গল্প অবলীলায় শেয়ার করা। hotel ওরা ১১ জন রাঙ্গামাটি শহরটা বিখ্যাত কাপ্তাই লেকের জন্য। পুরা শহরটা ঘেরা কাপ্তাই লেক দিয়ে। গভীর সে লেক, স্বচ্ছ পানি। রাঙ্গামাটি শহরের রাস্তাগুলো বেশিই উচু নিচু। তাই এখানে কোন রিকসা চলাচল করে না। সিএনজি টেক্সী করে যাতায়াত করা যায়। লোকালেই চলে। অল্প টাকা দিয়েই অনেক দূরত্বে যাওয়া যায়। রোববার সকাল। এবার মোটরসাইকেলগুলোকে একটু রেস্ট দেয়ার পালা। সবাই উঠে বসল রিজার্ভ একটা বোটে। পানি কেটে বোট এগিয়ে চলে। পাহাড়ের পাশে এই লেক। 

শুভ লং থেকে ফেরার পথে একটা ঝর্ণা চোখে পড়ে। আর সেখানেই গোসল সারা হয়। লেকের একদিকে উচু পাহাড়। আর সেখানে বেশ সুন্দর একটা রেস্টুরেন্ট করা হয়েছে। চাঙ পাই রেস্টুরেন্টে। পাহাড়ের ওপর ওই রেস্টুরেন্টেই দুপুরের খাবার খায় টিমের সদস্যরা। বিকেলে রাঙ্গামাটি শহরকে বিদায় দিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয় টিমের সদস্যরা। ঢাকায় গিয়ে ভোরে পৌঁছে। এরমধ্যে দিয়ে শেষ হয় বাইকারদের গ্রুপ ক্লাব আরটিআরের (Club RTR) এর প্রায় এক হাজার কিলোমিটারের মোটর বাইক যাত্রা।

Best Bikes

Honda CB Hornet 160R

Honda CB Hornet 160R

Price: 169800.00

Honda CB Hornet 160R ABS

Honda CB Hornet 160R ABS

Price: 255000.00

Honda CB Hornet 160R CBS

Honda CB Hornet 160R CBS

Price: 212000.00

View all Best Bikes

Upcoming Bikes

Bajaj Pulsar NS150

Bajaj Pulsar NS150

Price: 0.00

Bajaj Pulsar 400

Bajaj Pulsar 400

Price: 0.00

CFMoto 300SS

CFMoto 300SS

Price: 510000.00

View all Upcoming Bikes