TVS Stryker 125 বাইক নিয়ে রাইডিং অভিজ্ঞতা - শোভন

This page was last updated on 24-Jul-2023 09:34am , By Shuvo Bangla

আমি সাদী মোহাম্মদ শোভন । জীবনের প্রথম বাইক TVS Stryker 125 আমার কেনা প্রথম বাইক। এর আগে বন্ধুদের কিছু বাইক চালিয়েছিলাম যার মধ্যে Hero Glamour, Runner Turbo ছিলো। নিজের কেনা বাইক ছাড়া অন্যের বাইকে উঠার আগ্রহ কম ছিলো।

বাইকিং ভালবাসার কারণ -

আগে সাইক্লিস্ট ছিলাম। দুই চাকায় দেশের অনেক জায়গায় কম খরচে ঘুরে বেড়িয়েছি। চাকরি জীবনে প্রবেশ করার পর সাইক্লিং কমে যায় অনেক। কিন্তু ঘুরাঘুরির জন্য বাইকের বিকল্প খুজে পাচ্ছিলাম না কারণ গাড়ি ভাড়ার অতিরিক্ত দামের কারণে অবসরে কোথাও ঘুরতে যাওয়াটা অনেক বেশি কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। পরে বাইক কিনি এবং স্বল্প খরচে নিজের মর্জিমত যেকোনো জায়গায় অনায়সে ঘুরতে যেতে পারি। হঠাৎ পরিকল্পনায় এই বাইক আমাকে যেকোনো জায়গায় নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে যার কারণে সাইক্লিং এর পর বাইকিং এর উপর ভালবাসা জন্মায়।

আমার বাইকটি বেছে নেওয়ার কারণ - 

কম দামের মধ্যে ভাল পাওয়ারের বাইক খুজছিলাম। প্রথম পছন্দ ছিলো Bajaj Discover দাম বেশি হওয়ার কারণে নেওয়া সম্ভব হচ্ছিলোনা। যেহেতু নিজের টাকায় কেনা বাইক তাই অতটুকু সামর্থ্যের মধ্যে TVS Stryker পছন্দের লিস্টে ছিলো পাওয়ারের জন্য। ইন্সট্যান্ট পিকাপ অন্যান্য ১২৫ সিসি বাইকের চেয়ে এটি এগিয়ে আছে মনে হয় আমার কাছে। পরে বাজেট এবং পারফরম্যান্স সব দিকে মিলিয়ে এই TVS Stryker বেছে নিই।

বাইকটির দাম এবং বাইকটি কোথা থেকে কিনেছিলাম -

বাইকটির বর্তমান বাজার মূল্য ১,৪৪,৯৯০ টাকা। কিন্তু আমি সেকেন্ড হ্যান্ড কিনেছিলাম ৮৫,০০০ টাকায়। এক পরিচিত বড় ভাই দেশের বাইরে চলে যাচ্ছিলো তাই ওনার বাইকটি প্রায় নতুন অবস্থায় আমি ক্রয় করে নিই ৷ যখন নিয়েছিলাম তখন এটি মাত্র ৮০০০ কিলোমিটার চলেছিল।

বাইক কিনতে যাবার দিনের ঘটনাবলী -

২০২৩ এর মার্চ মাসে রোজার ঠিক ১ সপ্তাহ আগে আমি বাইকটি কিনতে গিয়েছিলাম ৷ এর আগে বেশ কয়েকবার গিয়েছিলাম অভিজ্ঞ ফ্রেন্ডদের নিয়ে বাইকের অবস্থা যাচাই করার জন্য। সবার থেকে গ্রিন সিগন্যাল পাওয়ার পর একদিন শুক্রবার জুমার নামাজ পড়ে রওনা দিই। নিজের টাকায় কেনা প্রথম বাইক অনুভূতি ছিলো অন্য পর্যায়ের ৷

স্থানে পৌছানোর পর আমি বাইকটি আরো কয়েকবার চালিয়ে দেখি ৷ বাজেট অনুযায়ী সবদিকে ফিট হওয়ায় আমি বেশিক্ষণ সময় না কাটিয়ে বাইক নিয়ে চলে আসি। নিজের হাতে যখন প্রথম কেনা বাইক চালাচ্ছিলাম তখনও বিশ্বাস হচ্ছিলোনা আমি ফাইনালি বাইক কিনে ফেলেছি। গিয়ার শিফটিং ভালোমত পারতাম না তাই পিছনে আমার এক ছোট ভাই আমাকে গাইড করছিলো তখন। এরপর ফুয়েল পাম্পে ঢুকে ফুল টাংকি করে এরপর ফেরত আসি বাসায়।

বাইকটি প্রথমবার চালানোর অনুভুতি - 

অনুভূতি খুবই অন্য পর্যায়ের ছিলো ৷ এটি ক্র‍য়ের পর আমি প্রায় প্রতিদিনই এটি নিয়ে বের হতাম।

বাইকটি চালাবার পেছনের মূল কারণ - 

১২৫ সিসি রেঞ্জে এটি খুব ভালো পাওয়ার সাপ্লাই করতে পারে সাথে মাইলেজ ও অনেক ভালো পাওয়া যায়। সামনে পিছনে স্টক সাইজের চেয়ে বড় চাকা লাগানোর পরেও শহরে প্রায় ৪৫ এর মত মাইলেজ পাওয়া যেত। হাইওয়ে তে ৫৫-৬০ এর মত মাইলেজ পেয়েছি।

বাইকের ফিচার - 

আমারটা ২০১৯ মডেল। ১২৫ সিসিতে বেশিরভাগ বাইকেই এনালগ মিটার থাকে। কিন্তু এটিতে ফুল ডিজিটাল মিটার দেওয়া যেটি আমার কাছে ভালো লেগেছে অনেক৷ এটি ১২৫ সিসি হলেও এক্সট্রা কিট লাগিয়ে জন্য কোম্পানি এটিকে একটি সুন্দর লুক দিয়েছে৷ নতুন মডেলগুলোতে সিকিউরিটি এলার্ম ও এড করেছে এরা৷

বাইক কতবার সার্ভিস করিয়েছি এবং কোথা থেকে বা কিভাবে সার্ভিস সেবিষয়ে বিস্তারিত - 

বাইক প্রায়সময় চেকাপের উপর রাখি। সার্ভিস তেমন প্রয়োজন পড়ে না। শুধু কিছুদিন পর পর চেইন টাইট দেওয়া লাগে এই একটা প্রব্লেম এই বাইকের৷ আমি তিন জায়গা থেকে সার্ভিস নিই। আরাফাত বাইক কেয়ার, হালিশহর, চট্রগ্রাম। ইয়াসিন বাইক শপ, ফিরিংগি বাজার, চট্রগ্রাম। বাইকার গ্যারেজ বিডি, শিল্পকলা, চট্রগ্রাম।

প্রথম দুইটি শপ থেকে বেশি সার্ভিস নিয়ে থাকি আমি। মেজর সার্ভিসের মধ্যে এয়ার ফিল্টার চেক, কার্বোরেটর এডযাস্ট, ট্যাপেড এডযাস্ট, টাইমিং চেইন এডযাস্ট এসব করিয়েছি। ওভারল সবকিছুর জন্য আরাফাত বাইক কেয়ার সবচেয়ে ভালো সার্ভিস দেয়।

মোট ২৫০০ কিলোমিটার পূর্বে ও পরে বাইকের মাইলেজ - 

যখন কিনেছি তখন ৮০০০ কিলোমিটার ছিলো মিটারে। এখন ১৩,০০০ কিলোমিটার রানিং। মেজর সার্ভিসগুলোর পর বাইকের মাইলেজ সিটিতে ৪২-৪৫ এবং হাইওয়ে তে ৫৫-৬০ পাই।

কিভাবে বাইকের যত্ন ও মেইনটেন্যান্স করি সে বিষয়ে বিস্তারিত - 

বাইক ময়লা কম করি। আর ময়লা হলেও ওয়াশ করে ফেলি। পাশাপাশি চেইন লুব করা আছে কিনা, টায়ার প্রেশার ওকে আছে কিনা, চাকা সহজে ঘুরছে কিনা এসব চেক করি প্রতিদিন।

বাইকে ব্যবহার করা ইঞ্জিন অয়েলের নাম , গ্রেড , দাম , এবং ধরন সম্পর্কে বিস্তারিত- 

বর্তমানে Shell Advance 10w30 full synthetic ব্যবহার করছি ৷ লোকাল বাজার থেকে না নিয়ে Ranks Petroleum থেকে অনলাইনে অর্ডার করি। ১ লিটার ৮২০ টাকা নেয় সাথে ডেলিভারি ফ্রি। ৩-৪ দিন সময় নেয় আসতে কিন্তু জিনিস অথেনটিক থাকে।

বাইকের কি কি পার্টস বদলেয়েছি এবং কেনো বদলেয়েছি - 

বাইক নেওয়ার সময় স্টক টায়ার চেঞ্জ করে ১০ সাইজ বাড়তি টায়ার লাগিয়ে দিয়েছিলো আমাকে। এতে করে রাস্তায় কনফিডেন্স বেড়েছে স্কিড ইস্যু থেকে। পাশাপাশি হ্যান্ডেলবার চেঞ্জ করে পালসারের হ্যান্ডেলবার লাগিয়েছি কমফোর্ট এর জন্য। সামনের ব্রেক বৃষ্টিতে অনেক কম কাজ করে। তাই মাস্টার সিলিন্ডার চেঞ্জ করে হোন্ডা হরনেট এর মাস্টার সিলিন্ডার এবং RCB hose pipe লাগিয়েছি৷

এখন ব্রেকিং এ প্রচুর কনফিডেন্স থাকে। এই বাইকের আরেক সমস্যা চেইন লুজ হয়ে যায়৷ স্টক চেইন চেঞ্জ করে জিক্সারের চেইন লাগিয়েছি এখন প্রব্লেম সলভ। M8 এলইডি লাগিয়েছি হলোজেন চেঞ্জ করে । মোডিফাইয়ের মধ্যে ব্রেক মাস্টার সিলিন্ডার, হোস পাইপ, চেইন এসব মেজর চেঞ্জ করেছি। বাইকটি দিয়ে ৮০ পর্যন্ত স্পিড সহজেই উঠে৷ সর্বোচ্চ স্পিড ১০৫ পর্যন্ত উঠেছে।

TVS Stryker 125 বাইকটির কিছু ভালো দিক -

  • ইন্সট্যাট পিকাপ
  • মাইলেজ ভালো
  • বাইকের লুকস সুন্দর
  • কমফোর্ট সিট
  • ইঞ্জিন সাউন্ড ভালো

TVS Stryker 125 বাইকটির কিছু খারাপ দিক -

  • ভাইব্রেশন বেশি
  • কন্ট্রোলিং বাজে
  • সাইলেন্সার ফূটো হয়ে যায়
  • স্টক চেইন ঘন ঘন লুজ হয়ে যায়
  • স্টক টায়ার খুব শক্ত এবং স্কিডের সম্ভাবনা বেশি থাকে

বাইকটি দিয়ে লম্বা দুরত্বের ভ্রমনের ব্যাপারে সংক্ষেপ -

বাইকটি নিয়ে চট্রগ্রাম থেকে মিরসরাই, ফেনী, খাগড়াছড়ি, ফটিকছড়ি গিয়েছি। লম্বা ভ্রমণের জন্য এটার স্পিড ভালো কিন্তু ভাইব্রেশন প্যারা দিবে। যার কারণে আমি জেল প্যাড কিনেছি যার কারণে লং রাইডে এখন তেমন অসুবিধা হয়না। খাগড়াছড়ি থেকে যাওয়া আসা ৮৫ এভারেজে চালিয়েছি। জেল প্যাড ব্যবহারের কারণে কোনো সমস্যা হয়নি।

১২৫ সিসি হয়েও এটির স্পিড খুবই ভালো পেয়েছি ৷ টায়ার স্টকের মত চিকন থাকলে স্পিড আর মাইলেজ আরো বাড়তো কিন্তু রিস্ক থেকে যেতো স্কিডের।

বাইকটি নিয়ে চূড়ান্ত মতামত ও পরামর্শ বিস্তারিত - 

ভাইব্রেশন এভয়েড করলে ওভারল হিসেবে শর্ট আর লং রাইডের জন্য বাইকটি ভালো। কিন্তু কিছু পার্টস চেঞ্জ করলে বাইকটি ব্যবহার করে আপনি পুরোপুরি মজা পাবেন। স্টক কিছু জিনিস থেকে সরে আমার মত বা আপনার মত করে মোডিফাই করলে আশা করছি এই বাইক আপনাকে হতাশ করবে না। ধন্যবাদ ।

লিখেছেনঃ সাদী মোহাম্মদ শোভন

আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।

Best Bikes

Honda CB Hornet 160R

Honda CB Hornet 160R

Price: 169800.00

Honda CB Hornet 160R ABS

Honda CB Hornet 160R ABS

Price: 255000.00

Honda CB Hornet 160R CBS

Honda CB Hornet 160R CBS

Price: 212000.00

View all Best Bikes

Latest Bikes

Honda XL250 Degree

Honda XL250 Degree

Price: 0.00

Yamaha FZ-S 153

Yamaha FZ-S 153

Price: 0.00

Yamaha YB 100 Deluxe

Yamaha YB 100 Deluxe

Price: 0.00

View all Sports Bikes

Upcoming Bikes

Bajaj Pulsar NS150

Bajaj Pulsar NS150

Price: 0.00

Bajaj Pulsar 400

Bajaj Pulsar 400

Price: 0.00

CFMoto 300SS

CFMoto 300SS

Price: 510000.00

View all Upcoming Bikes