Lifan KPT150 4V ১৩০০ কিলোমিটার মালিকানা রিভিউ - এনামুল
Published On 18-Oct-2022 12:12pm , By Shuvo Bangla
আমি এনামুল হাসান খান । আপনাদের সাথে আমার Lifan KPT150 4V বাইকের সাথে ১৩০০ কিলোমিটার রাইডিং অভিজ্ঞতায় মালিকানা রিভিউ শেয়ার করবো ।
আমার বাইক কেনা সবসময় হুটহাট করেই হয় । KPR 150 কেনাও ছিল একদম On Spot Decision , তখন বাইকটার সম্পর্কে কোনো রকম ধারণা তো দূরের কথা! লিফান বাইকের মডেল নাম ও জানা ছিলোনা। প্রথম দেখায় ভালো লাগায় কেনা এবং পরবর্তীতে ভালোবাসায় পরিনত হয়।
৫ বছরের বেশি সময় নিয়ে তার সাথে পথ চলা এবং মোটামুটি সবাই তাকে #Nasta_Bik নামেই চেনেন। এবার আসি আমার #Nasta_Bik 2.0 এর প্রসঙ্গে ।
যারা আমার খুবই ঘনিষ্ঠ তারা যানে যে KPT NB1 & NBF2 আমার তেমন পছন্দ না এবং ঐ মডেল দুটো আমি নিজে কিনে ব্যাবহার করবো তা কোন দিন চিন্তাও করিনি। কিন্তু KPT 4V KPro ভার্সনটা দেখে আমি রিতিমত Impressed ছিলাম কিন্তু নিজে কিনে ব্যবহার করবো এমনটা তখনো ভাবিনি।
কিন্তু একদিন সকালে হঠাৎ শুভ মিয়া আমাকে কল করে বললো "ভাইয়া আসবেন নাকি সানাড়পার লিফানের শোরুম এ ? শুভ্র দাদা নতুন KPT 4V নিচ্ছেন।" আমার বাসা কাছাকাছি থাকায় আমিও গেলাম সেখানে। বাইকটা ডেলিভারি নিয়ে শুভ্র সেন দাদা প্রথমেই আমার হাতে চাবি দিয়ে বলেন "চালিয়ে আসেন, দেখেন কেমন লাগে"!!
আমি তখন খুবই Honored Feel করি এবং বাইকটা চালানো শুরু করি। প্রথম Throttle Twist করা থেকেই আমি এর প্রেমে পরে যাই। অনুভব করতে পারি যে "নাহ! এই বাইকটা আমার সাথে Connect করেছে, এটা আগের দুই ভার্শন থেকে Totally Different কিছু"!!
এর পর কিছুদিনের মধ্যে আমি বাইকটা প্রি বুকি করি। এবং মাস খানিকের মধ্যে বাইকটা নিয়ে নেই। সুচনা শেষ করে এবার আসি রিভিউতে -
Lifan KPT150 4V বাইকের কিছু ভালো দিক -
- বাইকের ইঞ্জিন পাওয়ার অনেক ভালো , যেটা বুঝা যায় হাইওয়ে এবং অফ রোডে গেলে। এর বেশি কিছু লিখে বুঝানো সম্ভব না, বুঝতে হলে বাইকটা চালাতে হবে ।
- বাইকটার ব্যালেন্স খুবই সুন্দর, এরকম Well Balanced বাইক বাংলাদেশে খুব কমই আছে আমার মতে। পিলিয়ন সহ লং রাইড করলেও শরীরে তে কোন কষ্ট অনুভব হয়না।
- এর থ্রটল রেস্পন্স খুবই ভালো, Acceleration খুবই চমৎকার। আমি আমার 105KG ওজন নিয়ে 0-60KMPH স্পিড পেয়েছি 4.4 সেকেন্ডে ।
- এবার আসি বাইকের মাইলেজ এর ব্যাপারে , যদিও আমি মাইলেজ চেক করে বাইক চালানোর লোক না। তবুও ট্যাংক ফুল - ফুল হিসেবে আমার বাইকের মাইলেজ থাকছে 38-45 KMPL এর মধ্যে।
- এই বাইকের Front Suspension (USD Shock Absorber) আগের ভার্শন গুলোর মতই ভালো। তবে পেছনের Mono Shock Absorber নিয়ে যেই Complain ছিল সেটাকে সমাধান করা হয়েছে। KPT 4V এর Mono Shock Absorber এর আগের ভার্শন গুলো থেকে অনেক Upgraded.
- এর Cooling Efficiency অনেক বাড়ানো হয়েছে , বড় রেডিয়েটর এবং মোটা হোস পাইপ দিয়ে। নতুন অবস্থায় প্রথম ২০০-৩০০ কিলোমিটার তুলনামূলক একটু বেশি গরম হলেও এর পরে তেমন হিটিং ইস্যু আর পাইনি।
- ব্রেকিং এর দিক থেকে এর ABS যথেষ্ট ভালো করেছে। Braking Time & Distance যথেষ্ট কম যা Emergency Braking এর জন্য Vital.
- এবার আসি টায়ার এ, বরাবরই সবাই Lifan এর Provide করা CST টায়ার নিয়ে অভিযোগ দিয়ে আসছে শুরু থেকে। যেটায় Lifan পর্যায় ক্রমে কাজ করে আসছে এবং নতুন নতুন Model এর সাথে নতুন নতুন টায়ার নিয়র আসার চেষ্টা করেছে। এবার KPT 4V তে দিয়েছে CORDIAL টায়ার , যেটার গ্রিপ আমি On Road, Off Road, বৃষ্টি, কাদা, পানি, বালি সব যায়গায় ভালো পেয়েছি।
- বাইকের লুকস , যেটা নিয়ে আলাদা ভাবে না বললেই নয়। KPT4V এর Looks & Appearance সবার নজর কেড়ে নিতে সক্ষম, যেকোনো জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালে বাইকটা হয়ে যায় সবার মধ্যমণি।
সব বাইকের ভালো দিকের সাথে কিছু মন্দ দিক থাকেই, এবার আসি সেই আলোচনায় -
Lifan KPT150 4V বাইকের কিছু খারাপ দিক -
- প্রথমে বলবো এর হেডলাইট নিয়ে। এর হেডলাইট যত সুন্দর এবং আকর্ষণীয়, এর আলোর দিক থেকে ততটাই অসন্তোষজনক। হাইওয়েতে রাইড করার জন্য এই আলো পর্যাপ্ত না। ফগ লাইট ব্যবহার করতেই হবে। তবে এর হাই বিম এর আলো অনেক।
- এর স্টক লুকিং গ্লাস গুলো প্রয়োজনের চেয়ে ছোট তাই ভিউ ভালো পাওয়া যায়না।
- Windshield Vibration হয় অনেক Off-road এ চালালে এবং এর Height আমার জন্য বা আমার চেয়ে লম্বা রাইডার এর জন্য কম, বুকে এবং গলায় Wind Blast হয় হাইওয়েতে। আমার মনে হয়েছে এটার Size তার Purpose Fullfil করছেনা।
- রাইডার সিট লং রাইডের জন্য Uncomfortable, Extra Foam দিয়ে নিজের প্রয়োজনমতো Setup করে নেয়া লাগবে।
- বরাবরের মত লিফান এর স্টক চেইন ভালোনা, এ ব্যাপারে এর বেশি কিছু লিখতে হবেনা I

এই হল আমার KPT 4V KPro এর ১২৪৬ কিলমিটার রাইডিং অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া ভালো এবং খারাপ দিকের মালিকানা রিভিউ । এই ১২৪৬ কিলোমিটার আমি City, Highway, Off Road, Rural Road এ চালিয়েছি (শুধুমাত্র পাহাড়ে যাওয়া হয়নি)। বাইকটা কেনার পর কিছু Aftermarket Modification করছি নিজের প্রয়োজনে, এই Modification করতেই হবে এমন কোন কথা নেই ।
- বাইকে আমি Hand Guard লাগিয়েছি কারন এটা নিয়ে আমার Extreme Off Roading করার ইচ্ছা আছে। Wind Shield এর উপরে Extension লাগিয়েছি Highway তে Wind Blast কমানোর জন্য। Foog Light লাগিয়েছি কারন Headlight এর আলো হাইওয়েতে কম মনে হয়েছে।
- Stock Crash Guard এর জন্য Protector/Slider লাগিয়েছি কারণ দেখতে আরো সুন্দর লাগে।
- Off Roading Footpeg লাগিয়েছি কারণ এর Size বড় এবং Grip Better যা ভাঙ্গা রাস্তায় বা Off Road এ প্রয়োজনে দাড়িয়ে চালাতে সুবিধা হয় (তবে এর একটা সমস্যা হলো জুতার তলা বেশি দিন টিকবেনা )
- NGK Plug Cable & Resistor Cap লাগিয়েছি Plug এ Better Voltage & Spark পাওয়ার জন্য।
- Hornet Monoshock লাগিয়েছি Ground Clearance বাড়ানোর জন্য, নয়তো Stock Monoshock ই থাকতো।
- Rear Carrier লাগিয়েছি বউ সহ ট্যুরে গেলে ব্যাগ নেয়ার সুবিধা হয়।
- 0KM থেকেই GearX Oring Chain লাগিয়েছি কারণ Stock Chain এ্যর Power Output নেয়ার মত ভালো মনে হয়নি।
আরো কিছু Modification মাথায় আছে যেগুলো আস্তে আস্তে করার ইচ্ছা আছে। এই হলো আমার KPT150 4V এর আদ্যোপান্ত। KPR এর সাথে লম্বা পথ পাড়ি দিয়েছি, এবার KPT এর পালা । এত লম্বা লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ সবাইকে ।
লিখেছেনঃ এনামুল হাসান খান
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।