তেতুলিয়া তামাবিল টেকনাফ একটানা বাইক রাইডিং TTT - রাকিব
Published On 01-Dec-2021 08:32pm , By Raihan Opu Bangla
মহান আল্লাহ পাকের অশেষ রহমতে এবং আপনাদের দোয়ায় গত ১৯ শে নভেম্বর, ২০২১ তারিখ দুপুর ৩ টায় তেঁতুলিয়া জিরো পয়েন্ট থেকে রাইড শুরু করে ২০ শে নভেম্বর, ২০২১ তারিখ সন্ধ্যা ৭টায় তামাবিল হয়ে ২১ শে নভেম্বর, ২০২১ তারিখ রাত ১১টায় টেকনাফ জিরো পয়েন্ট এ এসে ১৪৯৫ কিলোমিটার এর একটানা Tour_Triple_T রাইডিং শেষ করি।
তেতুলিয়া তামাবিল টেকনাফ একটানা বাইক রাইডিং TTT

মূলত এই রাইডটা আমরা ৭ জনের একটি টিম নিয়ে শুরু করি এবং আমি সহ আরও ৩ জন টিম মেম্বার ১৮ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ১২ টার দিকে তেঁতুলিয়া পৌঁছাই। বাকি ৩ জন টিম মেম্বার ১৯ শে নভেম্বর, ২০২১ ভোর ৪ টার দিকে তেঁতুলিয়া এসে পৌঁছায়।
তেতুলিয়া_তামাবিল_টেকনাফ একটানা রাইডিং এ আমার অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ বিস্তারিত বর্ণনা করার চেষ্টা করছি -
ট্যুরের প্রস্তুতি -
- বাইক ভালো ভাবে সার্ভিসিং করে নিয়েছিলাম এরং ইঞ্জিন অয়েল, অয়েল ফিল্টার, স্পার্ক প্লাগ, ফ্রন্ট ও রেয়ার ব্রেক প্যাড পরিবর্তন করে নিয়েছিলাম।
- সাথে এক্সট্রা স্পেয়ার পার্টস নিয়েছিলাম।
- আইডল টায়ার প্রেসারো চেক করে নিয়েছিলাম।
- আমার বাইকের ২টি চাকাতেই টায়ার সিলেন্ট দেয়া ছিলো।
- বাইকের হেড লাইটের আলো পর্যাপ্ত ছিলোনা তাই ফগ লাইট ইন্সটল করে নিয়েছিলাম।
- কুয়াশায় ভালো দেখার জন্য ইয়োলো ক্যাপ ব্যাবহার করতে পারেন।
- ফাস্ট এইড বক্স ও প্রয়োজনীয় মেডিসিন।
- পাওয়ার ব্যাংক এবং মোবাইল ও কমিউনিকেটর চার্জার।
- হেলমেট ভাইজর ক্লিনার ও ফেস টিস্যু।
- কিছু শুকনো খাবার (বিস্কুট, স্নিকার্স) ও পানি রাইডিং এর সময় হাতের কাছেই বহন করবেন।
ট্যুরে আমি ব্যবহার করেছি -
বাইক- Yamaha MT15 Bs6
হেলমেট- KYT TT Course
গ্লাভস - Suomy (Mash Fabric)
রাইডিং জ্যাকেট - Riding Tribe (1st level)
নি-গার্ড - Pro biker
কমিউনিকেটর - Blue Rider M1s Evo
ঢাকা টু তেঁতুলিয়া রুট প্ল্যানিং ছিল -
ঢাকা - গাজীপুর - টাঙ্গাইল - সিরাজগঞ্জে (সায়দাবাদ - কাঠের পুল মোর - পানগাসি - সিরাজগঞ্জ চান্দিকোনা রোড দিয়ে ধানঘাড়া রোড দিয়ে - ঢাকা রংপুর হাইওয়ে দিয়ে - শেরপুর হয়ে - বগুড়া - গোবিন্দগঞ্জ - ঘোরাঘাট - বিরামপুর - দিনাজপুর - বীরগঞ্জ - ঠাকুরগাঁও - পঞ্চগড় - তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো
যমুনা সেতু টু তামাবিল রুট প্ল্যানিং-
যমুনা সেতু থেকে নেমে - টাঙ্গাইল (এলেঙ্গা - ঘাটাইল - মধুপুর) - ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা - ময়মনসিংহ - ত্রিশাল - নান্দাইল - কিশোরগঞ্জ - ভৈরব বাজার - সিলেট (মাধবপুর - শায়েস্তাগঞ্জ - লালা বাজার - হুমায়ূন রশীদ চত্বর - পীর হাবিবুর রহমান চত্বর - বিশ্বরোড - সুরমাগেট পয়েন্ট - হরিপুর - জৈন্তাপুর - তামাবিল ল্যান্ড পোর্ট)

তামাবিল টু টেকনাফ রুট প্ল্যানিং -
সিলেটের মাধবপুর ক্রস করে - জাতীয় বীর আব্দুল কুদ্দুস চত্বর থেকে - ব্রাক্ষ্মনবাড়ীয়া - কুমিল্লা - ফেনী - চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী লিংক রোড দিয়ে - পটিয়া বাইপাস পয়েন্ট থেকে কক্সবাজার রোড দিয়ে - সাতকানিয়া - লোহাগাড়া - চকরিয়া - কক্সবাজার ডলফিন মোড় থেকে - মেরিন ড্রাইভ রোড দিয়ে - টেকনাফ জেঠিঘাটের রোড।
রোড কন্ডিশন -
সিরাজগঞ্জ থেকে গোবিন্দগঞ্জ পর্যন্ত রোড এই ভালো এই খারাপ । কিন্তু দিনাজপুর থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত রাস্তা ভালো।
এলেঙ্গা থেকে ভৈরব বাজার পর্যন্ত খুবই ভালো। এরপর থেকে রোড এভারেজ লেভেলের ভালো। তবে তামাবিল এর আগের ১০-১২ কিলো রাস্তা মনোমুগ্ধকর।
ব্রাক্ষ্মমবাড়ীয়া - কুমিল্লা - চিটাগাং পর্যন্ত রাস্তা খুবই উঁচু নিচু টিউমার যুক্ত। স্পিড লিমিট এ রেখে রাইড করাই উত্তম।
চট্টগ্রাম সিটি থেকে কক্সবাজার ভালো রাস্তা তবে পটিয়া পয়েন্ট থেকে চকরিয়া পর্যন্ত রাস্তা একটু স্লিপারি।
চেস্টা করবেন যেই পয়েন্ট থেকেই রাইড শুরু করবেন সেই পয়েন্ট এ একদিন আগেই চলে যাওয়ার। যাতে রাতে খুব ভালো একটা ঘুম দিয়ে সকালে ফ্রেশ মুডে রাইড শুরু করতে পারেন।
শুধু TTT রাইড এর ইচ্ছে থাকলে তেঁতুলিয়া-তামাবিল-টেকনাফ অথবা টেকনাফ-তামাবিল-তেতুলিয়া এভাবে শুরু করতে পারেন। আর TTT ও TT রাইড একসাথে করতে চাইলে তামাবিল-টেকনাফ-তেতুলিয়া অথবা তামাবিল-তেতুলিয়া-টেকনাফ এই ভাবে শুরু করতে পারেন।
নাইট স্টে কোথায় করবেন এবং কোথায় খাবেন ?
তেঁতুলিয়া - স্বপ্ন গেস্ট হাউস । রুম রেন্ট ১০০০-১২০০ টাকা নিবে। বাইক পার্কিং ব্যবস্থা আছে। নুরজাহান রেস্টুরেন্টে অবশ্যই বিফ এবং ডেজার্ট অবশ্যই ট্রাই করবেন।
তামাবিল- ল্যান্ড পোর্ট থেকে কয়েক কিলোমিটার এগিয়ে আসলে কিছু আবাসিক হোটেল পাবেন। এখানে বলে রাখা ভালো যে তামাবিল এ আমার কোনো আবাসিক হোটেল এ নাইট স্টে করা হয়নি এই রাইড এ। খাবার হোটেলে বসেই রেস্ট নিয়েছিলাম।
টেকনাফ - আলো রিসোর্ট। রুম রেন্ট ৩০০০-৩৫০০টাকা। অনেক ভালো মানের আবাসিক হোটেল। কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্ট হিসেবে পরোটা, মুগডাল, ডিম ও কলা দিবে। বাইক পার্কিং ব্যবস্থা আছে। খাবারের হোটেল রিসোর্ট এর আসে পাশে পেয়ে যাবেন।
কক্সবাজার - হোটেলের অভাব নাই। যেখানে খুশি নাইট স্টে করতে পারেন আপনার বাজেট অনুযায়ী। তবে আমি হোটেল Sea Breeze এ থেকেছি। রুম রেন্ট ১৫০০ টাকা এসি সহ। আমরা এক রুমে ২টা ডাবল বেড ও এটা অতিরিক্ত ফ্লোরিং বেড এ ৬ জন থেকেছি ১৬০০টাকা দিয়ে। বাইক পার্কিং ব্যবস্থা আছে। পানসি ও ঝাউ বাগান রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া করেছি। হোটেল থেকে বের হয়ে হালকা বামে গিয়ে সোজা হাটা ধরলেই কলাতলী বিচ।
সবশেষে বলবো, আমাদের দেশটা অনেক সুন্দর এবং ঘুরে দেখার মতো অনেক জায়গায় আছে। তাই সময় নিয়ে রাইড করুন এবং সুন্দর জায়গা গুলো ঘুরে আসুন। একটানা রাইডিং এ শুধু রাইডিং ই হবে কিন্তু কিছুই ঘুরে দেখা হবে না কিংবা ঘুরার মতো এনার্জি থাকবেনা। কারন ঘুম আর ক্লান্তি আপনাকে গ্ৰাস করবে।
ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি। ধন্যবাদ ।
লিখেছেনঃ মোঃ রাকিব হোসেইন
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।