কক্সবাজার ট্যুর টিম সাওয়ারি - শেষ পর্ব

This page was last updated on 05-Oct-2023 10:53am , By Saleh Bangla

খুব ভোরে ঘুম ভেঙে গেলো। উঠে ফ্রেশ হয়ে দেখলাম বাকী কয়জনও উঠে পড়েছে। কিন্তু বারান্দায় এসেই দমে গেলাম। বাইরে প্রচন্ড কুয়াশা। এমনকি পাশের লাগোয়া হোটেলটাও দেখা যাচ্ছেনা।  এই অবস্থায় রাইড করা এক প্রকার অসম্ভব। অপেক্ষা করতে থাকলাম কুয়াশা কমার। কিন্তু সকাল ৭ টা বেজে গেলেও যখন কুয়াশা তেমন একটা কমলোনা তখন আমরা বের হবার সিদ্ধান্ত নিলাম। আগে বের তো হই পরে নাহয় অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেয়া যাবে! আকাশ,মেহেদী আর হাসিব ভাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমি,খালিদ,আতিক আর ইমরান বের হয়ে পড়লাম। শুরু হল আমাদের কক্সবাজার টু খুলনা যাত্রা।

কক্সবাজার ট্যুর টিম সাওয়ারি - শেষ পর্ব 

কক্সবাজার

কিন্তু এই প্রচন্ড কুয়াশায় বাইক চালানো অনেক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাড়ালো।একে তো ঠিকমত কিছু দেখতে পারছিলাম না তার উপর বিপরীত দিক থেকে বাস আর ট্রাক বেপরোয়া গতিতে আসছিলো। তাই আমরা ২-৪ কিলোমিটার যেয়ে অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেই । একটু পর সূর্যের আলো বাড়ার সাথে সাথে কুয়াশাও কমতে থাকে। আমরা নাস্তা করে মোটামুটি ৮ টার পর পর কক্সবাজার থেকে যাত্রা আবার স্টার্ট করলাম। নিরপত্তা বজায় রেখে ৮৫-৯০ স্পিডে চালাতে থাকলাম। দুই একটা ছোটখাটো বিরতি নিয়ে দুপুর ১২ টার ভেতর আমরা চট্টগ্রাম পৌছে গেলাম।

Also Read: ওরা ১১ জন! মোটর বাইকে ঢাকা থেকে বান্দরবান-রাঙ্গামাটি-ঢাকা

এর পর-ই পড়লাম অসহনীয় যানজটের কবলে।যাই হোক চিটাগাং শহর পার হয়ে হাইওয়েতে উঠতে উঠতে আমাদের প্রায় দেড়টা বেজে গেলো। এর পর আমরা কিছু সময়ের জন্য বিরতি নেই। পনেরো মিনিটের মত বিরতি নিয়ে আমরা গতি বাড়াতে থাকি তবে সেটা অবশ্যই আয়ত্তের ভেতরে থেকে। আমাদের এখানে সর্বোচ্চ গতি ছিলো ৯০-১১৫। এর ভেতর বিকাল ৪ টার পর পর আমরা কুমিল্লা পৌছে কুমিল্লার বিখ্যাত নূরজাহান হোটেলে একটা লম্বা বিরতি নেয়ার সিদ্ধান্ত নেই। সবার-ই পেটে মোটামুটি ছুচোর নাচন চলছে। আর সবচেয়ে বড় কথা কুমিল্লা এসে যদি বিখ্যাত নূর জাহান হোটেলেই না খেলাম তাহলে কিভাবে হয়? যে যার মত ফ্রেশ হয়ে আবারো চিকেন বিরিয়ানির অর্ডার দিলাম। সত্যি-ই অসাধারণ ছিলো সেই স্বাদ। এর পর আরো কিছুক্ষণ বিশ্রাম করলাম সবাই। এখানেই কেটে গেলো ঘন্টাখানেকের বেশি। এর পর আবারো শুরু হলো আমাদের ঢাকা অভিমুখে যাত্রা। কক্সবাজার নূরজাহানঢাকা ঢোকার আগে এবং কাচপুরের কুখ্যাত,অসহনীয় যানজট ঠেলে যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার পৌছাতে পৌছাতে আমাদের প্রায় রাত ৭:৩০ বেজে গেলো। আমরা মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে বিরতি নেই। এর পর আমি কল করি আমার দীর্ঘ দিনের পরিচিত বাইকার ভাই তোফাজ্জেল হোসাইন নিশাত ভাইকে। তার বাসা আবার ধোলাইপাড়ের মোড়েই। ভাই জানালেন তিনি দশ মিনিটের ভেতরেই আসছেন। সত্যি-ই তিনি তার আগেই চলে আসলেন। প্রায় ৫ বছরের সম্পর্ক ফেসবুকে কিন্তু এই প্রথমবার দেখা। চলল ধুমসে আড্ডাবাজী। রাত ৯ টা বেজে গেলো এখানেই। তারপর আমরা নিশাত ভাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মাওয়া ঘাটের পথ ধরি।

ঘাটে আমরা দশটার ভেতরেই পৌছে যাই। পৌছেই যাওয়ার দিন যেই হোটেলের অবস্থান করেছিলাম সেই হোটেলের সামনেই বাইক পার্ক করলাম। খালিদ আর আমার চোখেচোখে কথা হয়ে গেলো। অর্থাৎ দুজনেই আরেকটা ইলিশ ভোজনের ব্যাপারে সায় দিলাম। আগেই বলেছি আমরা সবাই-ই মোটামুটি ভোজনরসিক। ভাবলাম যে বাড়ি ফেরার পথে আরেকটা ইলিশ বিলাশ না হলে সম্পূর্ন ভ্রমণটাই অপূর্ন থেকে যাবে। এবারের ভোজনটা আগেরবারের চেয়ে বেশি হলো। সবাই দুই টুকরো করে ইলিশ,ইলিশের ডিম,ডিম মামলেট,বেগুন ভাজি,ডাল,ভাত দিয়ে আরেকটা ঐতিহাসিক ভোজনপর্ব সারলাম।এরপর চলল নদীর পাড়ে বসে আড্ডা,গল্প। ঘাটে কোনো যানজট ছিলোনা আর ফেরীও পর্যাপ্ত ছিলো আর যেহেতু বাইকের কোনো সিরিয়াল লাগেনা তাই ভাবলাম এখানে কিছু সময় কাটিয়ে পরে ফেরীতে উঠব। কক্সবাজার খাবারমোটামুটি রাত ১২:৩০ এর দিকে আমরা ফেরীতে উঠলাম আর ওপার পার হতে হতে রাত ২ টা। পার হয়েই আমরা চালানো শুরু করলাম। কিন্তু ১০-১৫ কিলো যাওয়ার পরেই আমরা আবারো ভয়াবহ কুয়াশার কবলে পড়লাম। একে তো ঘুটঘুটে অন্ধকার রাত তার উপর এমন তীব্র কুয়াশা যে একহাত দূরের কিছুই দেখা যাচ্ছিলোনা। তাই বাধ্যতামূলক ভাবে আমরা একটি পেট্রোল পাম্পে বিরতি নেই। কিন্তু কুয়াশা কমার কোনো লক্ষন-ই দেখা যাচ্ছিলোনা। বরঞ্চ সময়ের সাথে সাথে যেনো কুয়াশার তীব্রতাও বাড়ছিলো। অগত্যা আমরা পাম্পের নামাযের স্থানে অবস্থান নেই। সারাদিনের ক্লান্তিকর ভ্রমনের কারণে খালিদ আর আতিক শুয়েই ঘুমিয়ে পড়লো। আর এদিকে আমি আর ইমরান গল্প গুজব করে,মশা তাড়িয়ে আর আমাদের বাইক পাহাড়া দিয়েই সারারাত কাটিয়ে দিলাম।

পরের দিন ভোরের দিকে খালিদ আর আতিক কে ডেকে তুললাম। আর কুয়াশা কমলে সকাল ৭ টার দিকে খুলনা অভিমুখে আমাদের যাত্রা শুরু করলাম। কিন্তু আতিক বার বার ঘুমে ঝিমিয়ে পড়ছিলো তাই একটু পর পর থেমে ওর চোখেমুখে পানি দিতে হচ্ছিলো। ছোটমানুষ তাই এত বড় ভ্রমনের ধকল সামলাতে পারেনি। ভাটিয়াপাড়ার কাছাকাছি এসে আমরা সবাই লাল চা খাই যার কারণে আতিকের ঘুম ঘুম ভাব কেটে যায়। রাস্তা একেবারেই ফাকা ছিলো আর যারা খুলনা-মাওয়া হাইওয়ে চেনেন তারা তো জানেন-ই এখানকার রাস্তা কত সুন্দর। আমরা বাইক গড়ে ৯০-১০০ স্পিডে রেখে আর বিরতি না নিয়ে সকাল ৯:৩০ এর ভেতর আমাদের প্রিয় রুপসা ব্রীজে পৌছে যাই। কক্সবাজার টেকনাফইমরানের বাড়ি কাটাখালির মোড় তাই সে সেখান থেকেই বিদায় নিয়ে চলে যায়।আর খালিদও ব্রীজ থেকে বিদায় নিয়ে ওর বাসার পথ ধরে। আর আমি আর আতিক ব্রীজ এলাকায় কিছুক্ষণ ঘোরাফেরা করে ১০ টার ভেতর মহান আল্লাহর রহমতে বাসায় পৌছে যাই। আতিকের বাসা আমার বাসার পাশেই সেও বিদায় নিয়ে চলে যায়।

Also Read: দ্যা অ্যাডভেঞ্চার অফ বান্টিং, মালয়েশিয়া

এভাবেই শেষ হয় আমাদের ৭ তারিখ রাত হতে ১৩ তারিখ সকাল পর্যন্ত দীর্ঘ ভ্রমনটি। আমাদের টিম সাওয়ারির প্রত্যেক সদস্যকে জানাই মন থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে ট্যুরটাকে সফল করার জন্য। আর সব শেষে শুকরিয়া জানাই মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীনকে যার রহমতে কোনোরকম দূর্ঘটনা ছাড়াই আমরা ট্যুরটা শেষ করতে পেরেছি।

নোট:সম্পূর্ন ট্যুরে আমি মোট ১৫৮৫ কিলো রাইড করেছি।আমার ৩৭-৩৮ লিটার অকটেন লেগেছে।আমি সব সময় মতুল 5100 10w30 ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার করি তাই আমার বাড়তি কোনো ইঞ্জিন ওয়েল লাগেনি। ধন্যবাদ। (সমাপ্ত)

লিখেছেনঃ মঞ্জুরুল আল হাসান মুন্না

Best Bikes

Honda CB Hornet 160R

Honda CB Hornet 160R

Price: 169800.00

Honda CB Hornet 160R ABS

Honda CB Hornet 160R ABS

Price: 255000.00

Honda CB Hornet 160R CBS

Honda CB Hornet 160R CBS

Price: 212000.00

View all Best Bikes

Latest Bikes

Cyborg Avant

Cyborg Avant

Price: 0.00

Cyborg Armour

Cyborg Armour

Price: 0.00

View all Sports Bikes

Upcoming Bikes

CF Moto 250CL-C

CF Moto 250CL-C

Price: 429999.00

AIMA AM-Snow Leopard

AIMA AM-Snow Leopard

Price: 0.00

AIMA AM-MINE

AIMA AM-MINE

Price: 0.00

View all Upcoming Bikes