সেলস রেকর্ডের দিক দিয়ে বাংলাদেশের সবচাইতে বড় মোটরসাইকেল কোম্পানি হচ্ছে বাজাজ। এবং এরপরেই আসে বাজাজ পালসার এর নাম, যেটা ১৫০ সিসি সেগমেন্টে সবচাইতে বেশি বিক্রি হওয়া মোটরসাইকেল। বাংলাদেশের মানুষের বাজাজ পালসার এর প্রতি একটি সফট কর্নার রয়েছে মূলত এর ডিজাইন এর কারনে, এবং সারা দেশব্যাপি বাজাজ এর ১৫০টিরও বেশি ডিলার পয়েন্ট থাকার কারনে বাইকটি চালাতে কখনোই কোন হ্যাসল নিতে হয় না। আজ আমরা রিভিউ করবো বাজাজ এর নতুন বাইক – বাজাজ পালসার এনএস১৬০ টেস্ট রাইড রিভিউ বাই টীম বাইকবিডি।
এটা বাজাজ এর পক্ষ থেকে একটি নতুন বাইক। তারা বাইকটির বড়ভাই বাজাজ পালসার ২০০এনএস এর থেকে প্রচুর জিনিস ব্যবহার করেছে এবং বাইকটিতে একটি নতুন ইঞ্জিন ব্যবহার করেছে এবং বাইকটিকে একটি ইউজার ফ্রেন্ডলি এবং রেগুলার রাইডের উপযোগী মোটরসাইকেল হিসেবে তৈরী করেছে। বাইকটির বর্তমান বিক্রয়মূল্য হচ্ছে ১,৯৯,৫০০ টাকা।
বাজাজ পালসার এনএস১৬০ টেস্ট রাইড রিভিউ – ইঞ্জিন এবং পারফর্মেন্স
বাইকটিকে তারা একটি সম্পূর্ন নতুন ইঞ্জিন ব্যবহার করেছে। বাইকটির নতুন ১৬০ সিসি ইঞ্জিনটি ৮৫০০ আরপিএমে ১৫.৩ বিএইচপি শক্তি এবং ৬৫০০ আরপিএমে ১৪.৬ নিউটন মিটার টর্ক উতপন্ন করে। এতে ৪টি ভালভ এবং টুইন স্পার্ক প্লাগ রয়েছে। বর্তমানে ১৫০-১৬৫ সিসি এয়ার কুলড ইঞ্জিনগুলোর মধ্যে এটাই সবচাইতে শক্তিশালি ইঞ্জিন। এটা ইঞ্জিনের এই শক্তিকে একটি ৫ স্পীড গিয়ারবক্স এর মাধ্যমে পেছনের চাকায় ডেলিভার করে।
বাইকটির ইঞ্জিনের একোটি কী ফিচার হচ্ছে এটার অয়েল কুলড সিস্টেম। এনএস১৬০ সেগমেন্টের একমাত্র বাইক যেটাতে অয়েল কুলিং রয়েছে। এই সিস্টেমে ইঞ্জিনটি ইঞ্জিন অয়েলকে কুল্যান্ট হসেবে ব্যবহার করে যা ইঞ্জিনের চারপাশে সার্কুলেট করে।
অয়েলটুকু অতিরিক্ত হীট শুষে নেয় এবং কুলিং রেডিয়েটর এর মধ্য দিয়ে পাস হবার সময় এই হীট ত্যাগ করে। যদি আপনি ভালোভাবে লক্ষ্য করেন তবে দেখতে পাবেন যে বাইকটির ফুয়েল ট্যাংকের নিচেই একটি ছোটত রেডিয়েটর রয়েছে। বাইকটি চলার সময় রেডিয়েটরটি বাতাসের ফ্লো কাজে লাগিয়ে ইঞ্জিনকে ঠান্ডা রাখে।
অয়েল কুলড টেকনোলজি বাজাজ এনএস১৬০ এর ইঞ্জিনকে বাংলাদেশি প্রচন্ড গরম আবহাওয়াতেও ঠান্ডা থাকতে সাহায্য করবে।
ইঞ্জিনটি খুবই রিফাইন্ড। যারা বাজাজ পালসার ১৫০ এর ইঞ্জিনের রিফাইনমেন্ট ন্যে অভিযোগ জানান, তাদের উচিত বাজাজ এর বর্তমান সময়ের এই উন্নতিকে দেখা।
বাইকটির ইঞ্জিন ৬৫০০-৭০০০ আরপিএম এর দিকে ভাইব্রেট করে, এবং এটা ফুটপেগে ফিল করা যায়। ভাইব্রেশন খুবই কম, এবং এটা কোনপ্রকার সমস্যা করে না। বাইকটির ইঞ্জিন খুবই ভালো লো এবং মিড রেঞ্জ টর্ক দেয়, এবং তাতক্ষনিক এক্সেলেরেশন খুবই ভালো এবং স্মুথ। তবে, যখনই বাইকটি ৮০ কিমি/ঘন্টা স্পীড ক্রস করে, তখন এর এক্সেলেরেশন কিছুটা স্লো হয়ে যায়। বাইকটির এক্সহস্ট নট এভারেজ, এবং আমার খুব একটা পছন্দ হয়নি।
বাইকটির মাইলেজ ভালো। আমাদের টেস্ট রাইডিং এর সময় আমরা শহরে বাইকটির মাইলেজ পেয়েছি ৩৮-৪০ কিমি/লিটার, এবং হাইওয়েতে আমরা পেয়েছি ৪২+ কিমি/লিটার। বাইকটির ফুয়েল ট্যাংকে ১২ লিটার তেল ধরে। আমরা বাইকটিতে ১২৬ কিমি/ঘন্টা এর টপ স্পীড পেয়েছি।
হাইওয়েতে বাইকটি রাইড করা খুবই আনন্দদায়ক মূলত এর সাসপেনশন এর কারনে। বাইকটি ৮০ কিমি/ঘন্টা গতির আশেপাশে সবচাইতে বেশি ইঞ্জয় করা যায়। ১০০ কিমি/ঘন্টা গতি তোলার সময় বাইকের সামনে হ্যান্ডেলবার থেকে হালকা ভাইব্রেশন আসে। শহরে বাইকটি রাইড করা খুবই ইঞ্জয়েবল। বাইকটির ইঞ্জিন ০ থেকে ৬০ কিমি পর্যন্ত খুবই ভালো একটা গর্জন দেয়।
বাজাজ পালসার এনএস১৬০ টেস্ট রাইড রিভিউ – স্টাইল এবং ডিজাইন
স্টাইলিং এর দিক থেকে এনএস১৬০ নিজের বড়োভাই এনএস২০০ এর দিক থেকে অনেককিছুই ধার করেছে। আমার মতে, এই সেগমেন্টে এটা সবচাইতে প্রিমিয়াম লুকিং বাইক। বাইকটির পার্কিং লাইট এর কারনে বাইকটিকে একটি শিকারীর মতো দেখায় এবং রাতের অন্ধকারে সম্পূর্ন কিলার এর মতো দেখায়। বাইকটি দেখতে খুবই মাস্কুলার।
বাইকটির ফিনিশিং কোয়ালিটি এবং বিল্ড কোয়ালিটি খুবই ভালো। বাজাজ বাইকটিতে অনেক সময় এবং পরিশ্রম দিয়েছে। এরপরেই আসে বাইকটির চেইনের কথা, এবং বাজাজ এই বাইকটিতে সেগমেন্টের সেরা চেইনটি ব্যবহার করেছে। এটা কোনরকম বিরক্তিকর শব্দ করে না, এবং কিছুদিন পরপর চেইন টাইট করতে হয় না। বাইকটির স্পিডোমিটারে একটি এনালগ আরপিএম কাউন্টার এবং একটি ডিজিটাল স্পিডোমিটার রয়েছে যেখানে স্পীড কাউন্টার, ফুয়েল গজ, এবং ওয়ার্নিং লাইট রয়েছে।
আমি বাজাজকে ধন্যবাদ দিতে চাই বাইকটিতে মাডগার্ড ব্যবহার করার জন্য। বাইকটির পেছনের এক্সটেন্ডেড মাডগার্ড খুবই উপকারী। বাইকটির ওজন ১৪২ কিলোগ্রাম এবং এটা কিছুটা উচু, যা ৫.২ ফিট এর চাইতে খাটো মানুষের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। তবে, যেহেতু এটা উচু, কাজেই আন্ডারবেলী এক্সহস্ট থাকার পরেও বাইকটি নিয়ে কোন স্পিডব্রেকার পার হতে আমাদের কখনোই কোন সমস্যা হয়নি।
বাইকটির অন্যতম ভালো একটি দিক হচ্ছে বাইকটির সুইচ গিয়ারস। এগুলো খুবই ভালোমানের, এবং রাতেরবেলা সুইচ গিয়ারগুলো জ্বলে থাকে, ফলে অপারেট করতে সুবিধা হয়।
বাজাজ পালসার এনএস১৬০ টেস্ট রাইড রিভিউ – সাসপেনশন এবং ব্রেকস
বাজাজ পালসার এনএস১৬০ বাইকটিতে পেরিমিটার ফ্রেম রয়েছে। এই ফ্রেম এবং সাসপেনশন মিলে বাইকটিকে সেগমেন্টের অন্যতম সেরা হ্যান্ডলিং প্রদান করে। বাইকটির সামনে রয়েছে টেলিস্কোপিক ফর্ক, এবং পেছনে রয়েছে ক্যানিস্টার সহ নিট্রোক্স মনোশক সাসপেনশন।
বাইকটির সবচাইতে বড় শক্তি হচ্ছে বাইকটির চ্যাসিস এবং সাসপেনশন। বাইকটির পেছনে ১১০ সাইজের টায়ার থাকার ফলে হয়তো মনে হয়ে পারে যে বাইকটির কন্ট্রোলিং এবং ব্যালেন্সিং হয়তো ভালো হবে না, কিন্তু বাস্তবে সাসপেনশন এবং চ্যাসিস মিলে একত্রে বাইকটির কন্ট্রোলিং এর সময় বেশ ভালো ফিডব্যাক দেয়। এছাড়াও বাইকটির আন্ডারবেলী এক্সহস্ট বাইকটিকে আরো বেশি স্ট্যাবিলিটি এবং ব্যালেন্স প্রদান করে।
হাই স্পীড কর্নারিং এর ক্ষেত্রে বাইকটির লীনিং এঙ্গেল খুব বেশি অসাধারন না হলেও বাইকটি রোডের মধ্যে আটকে ছিলো এবং এটা নার্ভাস ছিলো না। যদিও বাইকের সামনের ডিস্ক ব্রেকটি খুবই ভালো পারফর্ম করে, বাইকটির পেছনের ড্রাম ব্রেকটি কিছুটা দুর্বল।
আরেকটা জিনিস আমি খেয়াল করেছি যে, বাইকটির সামনের ডিস্ক ব্রেকের সাইজ হচ্ছে ২৪০ মিলিমিটার, যা প্রিমিওয়াম সেগমেন্টের বেশিরভাগ বাইকের থেকে ছোট। প্রতিযোগীদের সাথে কমপ্যারিজনে বাইকটির ব্রেকিং কিছুটা কম মনে হতে পারে।
সবমিলিয়ে বাইকটি শহরে এবং হাইওয়েতে রাইড করার জন্য খুবই আরামদায়ক। বাইকটির টাঋং রেডিয়াস কিছুটা কম, যার দলে ইউ টার্ন নেবার সময় হয়তো একটু সমস্যা হতে পারে। লম্বা দুরত্বে রাইডের সময় কোনপ্রকার ব্যাকপেইন হবার সম্ভাবনা খুবই কম কিন্তু বাইকটির সীটটি বেশ শক্ত হবার ফলে রাইডার কিছুটা বিরক্ত হতে পারেন।
<<<Bajaj Pulsar NS160 Review – First Impression>>>
সবমিলিয়ে আমার কাছে বাইকটি দেখতে অসাধারন, এবং সত্যি বলতে কি পেছনের টায়ার বাদে আমার আর খুব বেশি অভিযোগ নেই। যদিও চিকন টায়ার মাইলেজ এবং স্পিডের জন্য অনেক উপকারী, কিন্তু আমার কাছে গুরুত্বপূর্ন একটি বিষয় হচ্ছে একটি বাইক কর্নারে কতটা দ্রুত যেতে পারে, এবং এটা আরো অনেক ভালো হতো যদি বাইকটির পেছনে একটি ১২০ বা ১৩০ সাইজের টায়ার থাকতো।
বাজাজ পালসার এনএস১৬০ টেস্ট রাইড রিভিউ
ভালো দিকসমূহঃ
- ভালো বিল্ড কোয়ালিটি এবং ফিনিশিং
- রিফাইন্ড ইঞ্জিন
- সেগমেন্টের সবচাইতে শক্তিশালি ইঞ্জিন
- ভালো এক্সেলেরেশন
- সেগমেন্টের সবচাইতে সেরা লুকিং বাইক
- সাসপেনশন এর ফিডব্যাক অসাধারন
- চিকন হওয়া সত্ত্বেও বাইকটির পেছনের টায়ার ভালো গ্রিপ দেয়।
- ডিসি অপারেটেড হেডলাইট বাংলাদেশি হাইওয়ে এর জন্য বেশ ভালো।
খারাপ দিকসমূহঃ
- পেছনের টায়ার ওয়াইড হবার দরকার ছিলো
- স্যাডল হাইট একটু উচু, ফলে শর্ট হাইট এর মানুষেরা
- ব্রেকিং ভালো, তবে সেগমেন্টের সেরা নয়।
Bajaj Pulsar NS160 Review ইংরেজিতে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
দিনশেষে বাইকটি ২৫০০ কিলোমিটার টেস্ট রাইড করার পরে আমার মনে হয়েছে যে, বাজাজ তাদের পালসার এএস ১৫০ বাইকটির সকল ভুল এবং সমস্যা শুধরে নিয়ে এই বাইকটিকে যতটা সম্ভব ভালো করে ডিজাইন করার চেষ্টা করেছে। অন্যান্য সকল বাইকের মতো এই বাইকেরও ভালো এবং খারাপ দিক রয়েছে, তবে বাইকটি সাসপেনশন এবং বিল্ড কোয়ালিটি এর কারনে অন্যান্য বাইক থেকে এগিয়ে থাকবে।
আমি একটা বাজাজ এন এস নিতে চাই ৬ মাস এর কিস্তিতে আমার ফোন নাম্বার 01626121962
4v vs ns .. Video chai