Review Overview
বর্তমানে বাংলাদেশের মোটরসাইকেল ইন্ডাস্ট্রি একটি বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যা আমাদের দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত লাভজনক। সরকারের সমর্থনে বড়ো বড়ো বাইক কোম্পানি বাংলাদেশে মোটরসাইকেল প্রস্তুত করা শুরু করবে এবং এর ফলে অধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। পাশাপাশি মোটরসাইকেল আরো বেশি সহজলভ্য হবে। এখন পর্যন্ত মাত্র দুটি কোম্পানি তাদের মোটরসাইকেলের দাম কমিয়েছে এবং প্রশ্ন রয়েই যায়, যে বাকিরাও কি এই পথ অনুসরণ করবে কি না!
এখন পর্যন্ত কেবলমাত্র দুটি কোম্পানি তাদের মোটরসাইকেলের দাম কমিয়েছে। তারা হচ্ছে হোন্ডা এবং সুজুকি (সম্প্রতি হিরো-ও ক্যাশ ব্যাক অফার দিচ্ছে) তবে, সকলের মনে গত ২-৩ সপ্তাহ ধরে যেই প্রশ্নটি ঘুরপাক খাচ্ছে, সেটি হলো, অন্যান্য কোম্পানিগুলো তাদের মোটরসাইকেলের দাম কবে কমাবে? দুঃখজনকভাবে, নিয়মকানুনগুলো একটু বেশিই জটিল, এবং এগুলোকে আমি যতটা সম্ভব সহজভাবে বোঝানোর চেষ্টা করবো।
বর্তমানে বাংলাদেশে কেবল ৫০ সিসি থেকে ১৫৫ সিসি বাইক আমদানি করা সম্ভব এবং মোটরসাইকেল আমদানি করা যায় “সিবিইউ” এবং “সিকেডি” পদ্ধতিতে, যা নিচে ব্যাখ্যা করা হলো :
সিবিইউ (CBU = Complete Build Unit)
এই পদ্ধতিতে বাইকটি বাইরের ফ্যাক্টরি থেকে প্রায় তৈরি অবস্থায় একটি বক্সে করে দেশে আমদানি করা হয় এবং এর পরে শুধু লুকিং গ্লাস, ইন্ডিকেটর-এর মতো কিছু পার্টস বাইকে সংযুক্ত করা হয়। এছাড়া বাকি বাইকটি সম্পূর্ণ প্রস্তুত অবস্থায় থাকে। যেমন : হোন্ডা সিবিআর১৫০আর, হোন্ডা ওয়েভ আলফা, এসিআই মোটরস-এর সকল ইয়ামাহা মোটরসাইকেল ইত্যাদি। সিবিইউ পদ্ধতিতে মোটরসাইকেলের আমদানি শুল্ক ১৫১%।
সিকেডি (CKD = Complete Knock Down)
এই পদ্ধতিতে বাইক বিভিন্ন খুচরো যন্ত্রাংশে বিভক্ত হয়ে আসে, শুধু চেসিস ও ইঞ্জিনটি বাংলাদেশের বাইরের ফ্যাক্টরি থেকে প্রস্তুত হয়ে আসে এবং বাকি সম্পূর্ণ বাইক এখানে সংযোজন করে তৈরি করা হয়। তাই, সেখানে সংযোজনের সময় আন্তর্জাতিক নীতিমালা ও কোয়ালিটি কন্ট্রোল মেনেই জোড়া দেয়া হয়। এ রকম কিছু বাইক হচ্ছে হোন্ডা সিবি শাইন, সিবি ট্রিগার, বাজাজ পালসার ১৫০ এএস, সুজুকি জিক্সার এবং ৫০ থেকে ১৫৫ সিসির অধিকাংশ মোটরসাইকেল। এই পদ্ধতিতে মোটরসাইকেলের আমদানি শুল্ক হচ্ছে ১৩১%।
পিএম (PM = Progressive Manufacturing) : এটি বাংলাদেশ সরকারের ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের বাজেটে করা একটি নতুন নিয়ম, যেখানে কোনো কোম্পানি যদি বাংলাদেশে প্রগতিশীল উৎপাদন পরিকল্পনা গ্রহণ করে এবং প্রশাসন থেকে সেটার অনুমোদন গ্রহণ করতে পারে, তবে তারা অনুমোদনের তারিখ হতে পরের দুই বছর পর্যন্ত হ্রাসকৃত আমদানি করে মোটরসাইকেল আমদানি করতে পারবে। দ্বিতীয় বছরে আমদানিকারককে মোটরসাইকেরের মোট পার্টস-এর ১০% বাংলাদেশে নিজস্বভাবে প্রস্তুত করতে হবে এবং তা মোটরসাইকেলে সংযুক্ত করতে হবে। এভাবে প্রতিবছরে আমদানিকারককে আরো ১০% করে যন্ত্রাংশ মোটরসাইকেলে সংযুক্ত করে যেতে হবে ৫ম বছর পর্যন্ত, যখন মোটরসাইকেলের স্থানীয়ভাবে প্রস্তুতকৃত মানসম্মত যন্ত্রাংশের পরিমাণ ৫০% হবে।
গত ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে সরকার বাংলাদেশে প্রগতিশীল উৎপাদনকে উৎসাহিত করার সিদ্ধান্ত নেয়, তাই তারা [SRO NO: 155-AIN/2016/17/Customs Date June 2 2016(SRO 155)] নামে একটি নতুন পলিসি তৈরি করে। এই পলিসির মাধ্যমে কোনো মোটরসাইকেল কোম্পানি যদি বাংলাদেশে প্রগতিশীল উৎপাদন শুরু করার অনুমতি লাভ করে, তবে তারা তাদের মোটরসাইকেলে ২০%-৪৫% আমদানি কর প্রদান করবে, যা সিকেডি প্রোগ্রেসিভ ম্যানুফ্যাকচারার্সদের জন্য ২৫% কম।
তাই, যে সকল কোম্পানি এই পলিসি অনুসরণ করবে, তারা তাদের মোটরসাইকেলের ওপর এই কর হ্রাসের সুবিধা ভোগ করবে। বাজেট ঘোষণার ৬ মাস পরে সর্বপ্রথম এই পলিসি অনুসরণ করে নিজেদের বাইকের মূল্য হ্রাস করার ঘোষণা দেয় হোন্ডা বাংলাদেশ এবং এর পরপরই একই ঘোষণা দেয় সুজুকি বাংলাদেশ (র্যাংকন মোটরস)।
আরো বেশকিছু মোটরসাইকেল কোম্পানি এই পলিসি অনুসরণ করে প্রগতিশীল উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে এবং বর্তমানে সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এই পলিসির একটি অংশে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে যে, কোনো কোম্পনি যদি প্রগতিশীল উৎপাদনের অনুমতি নিয়ে পরবর্তী সময়ে পলিসি অনুযায়ী সকল নিয়ম মেনে চলতে ও লক্ষ্য পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, তবে সেই কোম্পানিকে সরকারকে বিশাল অংকের জরিমানা দিতে হবে, এবং কিছু কিছু কোম্পানির ক্ষেত্রে সেই জরিমানা এতোটাই বিশালাকার হবে যে হয়তো তাদের এদেশে ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হতে পারে।
বর্তমানে অন্যতম বড়ো একটি প্রশ্ন হচ্ছে, এ সকল বিষয়ের মাঝে ইয়ামাহার অবস্থান কী? আমরা যতদূর জানি, ইয়ামাহা বাংলাদেশে পুনর্জন্ম নিয়েছে এসিআই মোটরস-এর মধ্য দিয়ে, এবং অন্যান্য সকল কোম্পানির মতোই তারা তাদের যাত্রা শুরু করেছে সিবিইউ পদ্ধতিতে বাইক আমদানির মধ্য দিয়ে। এসিআই মোটরস-এর সকল মোটরসাইকেল ভারত থেকে সিবিইউ পদ্ধতিতে ১৫১% কর দিয়ে এদেশে আমদানি করা হয়। ফলে ক্রেতা তার মোটরসাইকেলে সেরা ফিনিশিং পান এবং বাইকের মান অক্ষুণ্ন থাকে।
সিবিইউ পদ্ধতির অন্যতম বড়ো সুবিধা হচ্ছে বাইকগুলোর মান সম্পূর্ণ অক্ষুণ্ন এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকে। যারা প্রথম লটের পালসার ১৫০এএস বা সুজুকি জিক্সার কিনেছেন সেগুলো সিবিইউ পদ্ধতিতে আমদানি হয়েছিলো ভারত থেকে, তারা ভালোমতোই জানেন যে বাইকগুলোর মান পরে সিকেডি পদ্ধতিতে আমদানি হওয়া বাইকের থেকে অনেকখানি ওপরে। এছাড়াও, ইয়ামাহা বর্তমানে অন্যান্য অধিকাংশ কোম্পানির চাইতে বেশি কর দিয়েও বাইকের বিক্রয়মূল্য প্রতিযোগিতামূলক রাখছে এবং আগের চাইতে ভালো সার্ভিস দিয়ে সকলের কাছে জনপ্রিয়তা বাড়াচ্ছে।
যদিও ইয়ামাহাপ্রেমীদের জন্য বিষয়টা কিছুটা দুঃখজনক। তবে মোটরসাইকেল উৎপাদন বিষয়টি এমন নয় যে একটি কারখানা তৈরি করে তাতে উৎপাদন শুরু করে দেয়া হলো, বরং মোটরসাইকেল উতপাদনের ক্ষেত্রে অগ্রগতির জন্য সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি ধাপে ধাপে শুরু করতে হয়। ভারত, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড-এর মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো একদিনে মোটরসাইকেলের খনি হয়নি, বরং ধীরে ধীরে ধাপে ধাপে এগিয়েছে, এবং ভারতের মতো দেশেরও এই পর্যায়ে আসতে ৩০ বছরের মতো সময় লেগেছে। বাংলাদেশে মূল বাধা হচ্ছে কাঁচামালের মানের ওঠানামা, বিদ্যুৎ, এবং লোকবল।
বাংলাদেশে মোটরসাইকেলের প্রগতিশীল উৎপাদন উৎসাহিত করা ছিলো সরকারের অন্যতম অসাধারণ সিদ্ধান্ত, যা বাংলাদেশের সকল মানুষকে বর্তমানের চাইতে অনেক সুলভে বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ডের মানসম্পন্ন মোটরসাইকেল ব্যবহারের সুযোগ প্রদান করবে।
honda hornet 160cc bike tar price ki budget a kombe?otoba eidul azha te kono offer thakbe ki na aktu janan