করোনাভাইরাস এখন গোটা বিশ্বে আতঙ্কের অপর নাম। করোনাভাইরাস এ আক্রান্ত না হয়েও আমরা অনেকেই এখন মানসিকভাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। আমরা অনেকেই এত বেশি আতঙ্কিত যে, সামান্য কাশি হলে আমরা মনে করে নেই আমাদের করোনাভাইরাস হয়েছে। এর অন্যতম প্রধান কারন হচ্ছে আতঙ্ক এবং করোনাভাইরাস সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকা। কাশি হওয়ার মানেই আপনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত না।
আপনি জানেন কি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের ৮১ শতাংশের শরীরে হালকা লক্ষণ দেখা দেয়, যা অন্যান্য ভাইরাস জ্বরের মতো চিকিৎসায় ভালো হয়ে যায়। ১৪ শতাংশের শরীরে মাঝারি লক্ষণ এবং মাত্র ৫ শতাংশ মানুষ গুরুতর অসুস্থ হচ্ছেন, যাঁদের বেশির ভাগই বয়স্ক ও অন্যান্য শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন।
এখন আপনার মনে হতে পারে এই সময়ে আমি কেন কাশিতে আক্রান্ত হলাম? একটু ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করে দেখুন তো আপনি এর আগে কি কখনো কাশিতে আক্রান্ত হন নি? সাবধানতা এই সময় আপনাকে করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা করতে পারে ঠিক তেমনি আতঙ্ক আপনাকে মানসিকভাবে অসুস্থ করে দিতে পারে।
একটু সহজভাবে বিষয়গুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরা যাক। করোনাভাইরাস ছাড়াও আপনি বেশ কিছু কারনে কাশিতে আক্রান্ত হতে পারেন। কারনগুলো হচ্ছেঃ
ধুলাবালু জনিত কাশিঃ
আপনি জানেন কি ধুলাবালু থেকে আপনার কাশি শুরু হতে পারে। শীতকালের পরপর এই সময়টা শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে বায়ুতে ধুলার পরিমাণ অন্য সময়ের তুলনায় বেশি থাকে। সামান্য পরিমান ধূলা কিন্তু আপনার শরীরে কাশির পাশাপাশি আরো অনেক সমস্যা করতে পারে। যেমন আল্যার্জিক রাইনাইটিস, হাঁপানি, চোখ জ্বালাপোড়া, খুসখুসে কাশি, হাঁচি, ইত্যাদি। অ্যালার্জি ও অ্যাজমা হচ্ছে কাশির সাধারণ কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম।
আপনি যদি কিছু বিষয় নিজে লক্ষ্য করেন তাহলে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন আপনার সমস্যা কি। রাতে কাশি বেড়ে যাওয়া, বুকে শব্দ ও পরিবারে হাঁপানির ইতিহাস থাকলে অ্যাজমা হতে পারে। আবার যদি ধুলাবালু, ফুলের রেণু, এসির ঠান্ডা বাতাস ইত্যাদি কারণে কাশির বেড়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে অ্যালার্জি জনিত কাশি।
মানসিক চাপ জনিত কাশিঃ
এই কথাটা অনেকেই হয়তো আজ প্রথম জানলেন। কিন্তু এটা সত্যি, মানসিক চাপ যখন অনেক বেশি থাকে তখন এটি ঠান্ডার স্থায়িত্বকালকে অনেক বাড়াতে পারে। এর ফলে আপনি দীর্ঘদিন কাশিতে ভুগতে পারেন। মানসিক চাপ মুক্ত থাকতে সব সময় প্রচুর পরিমাণে বিশ্রাম নিন, রাতে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমান।
তরল পান না করা জনিত কাশিঃ
বর্তমান সময়ে আমরা হাল্কা ঠাণ্ডায় আক্রান্ত হওয়া মাত্রই করোনাভাইরাস ভেবে এই ঠাণ্ডাকে প্রতিরোধ করতে অনেক বেশি চা এবং কফি পান করে থাকি। কিন্তু যেটা পান করা এই সময় খুব বেশি জরুরী সেটা পান করতে ভুলে যায়, আর সেটা হচ্ছে পানি। আর এই ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় যেমন চা বা কফি শরীরে পানি শূন্যতা তৈরি করে এর ফলে ফলাফল খারাপ হয়। যদি আপনি হাল্কা কাশিতে আক্রান্ত হন তখন প্রচুর পরিমাণে তরল পান করুন। পানি, জুস ও স্যুপ শ্বাসনালি থেকে কফ পরিষ্কার করতে সহায়তা করে।
অ্যাসিডিটি জনিত কাশিঃ
চর্বিযুক্ত খাদ্য খাওয়ার পর বুকে জ্বালাপোড়া বা টক ঢেকুরের সঙ্গে খুক খুক কাশিও হতে পারে। পাকস্থলীর অম্ল খাদ্যনালিতে উঠে এসে এই কাশির সৃষ্টি করে। অনেক সময় ঠান্ডা-সর্দি লাগা থেকে নাকের পেছন দিক থেকে গলায় নিঃসরণের জন্য ইরিটেসন ও শুষ্ক কাশি হয়।
ভুল ওষুধ জনিত কাশিঃ
ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে তীব্র শুকনো কাশি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। যদি এ ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে, তবে চিকিত্সকের পরামর্শ নিন।
Also Read: করোনাভাইরাস – নিয়ে কোনটা সঠিক কোনটা ভুল তথ্য? জানুন বিস্তারিত
এছাড়াও আমাদের নিজেদের কিছু বদ অভ্যাসের কারনে আমাদের কাশি হতে পারে। ধূমপান ও বায়ু দূষণ কাশির একটি অন্যতম। ধূমপান বর্জন করুন।
আপনি নিশ্চয় এখন বুঝতে পারছেন কাশি মানেই করোনাভাইরাস না। করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে সব সময় সচেতন থাকুন কিন্তু কখনো মানসিক ভাবে আতঙ্কিত হবে না। যদি আপনি মানসিক ভাবে আতঙ্কিত হয়ে যান তাহলে করোনাভাইরাস আপনার ক্ষতি করতে না পারলেও আপনি অন্য সমস্যার সম্মুখীন হবেন। করোনাভাইরাস মূলত ফুসফুসে আক্রমণ করে। সাধারণত জ্বরের সঙ্গে শুকনা কাশি দিয়ে শুরু হয়। জ্বর ও কাশির এক সপ্তাহের মাথায় শ্বাসকষ্ট অনুভূত হয়। এসব লক্ষণ দেখা দিলে জরুরী ভিত্তিতে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
তথ্য সূত্রঃ প্রথম আলো