করোনাভাইরাস এখন অনেক বড় একটা সমস্যা। আমরা বাইকাররা দিনের অধিকাংশ সময় বাইরে থাকি তাই আমাদের অনেক বেশি সচেতন থাকা প্রয়োজন। তবে এই ভাইরাস থেকে বাচতে শুধু বাইকাররা না সচেতন হতে হবে আমাদের সবার।
করোনাভাইরাস সাধারণত প্রাণী থেকে প্রাণীতে ছড়ায়। তবে এখন মানুষের দেহ থেকে মানুষের দেহেও ছড়াচ্ছে। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দ্রুত ছড়াচ্ছে এটি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভাইরাসটি হয়তো মানুষের দেহ কোষের ভেতরে ইতোমধ্যে গঠন পরিবর্তন করে নতুন রূপ নিচ্ছে এবং সংখ্যাবৃদ্ধি করছে। ফলে এটি আরও বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। সবার আগে আমাদের জানতে হবে করোনাভাইরাস কি সে সম্পর্কে।
করোনাভাইরাস কি?
করোনাভাইরাস এমন একটি সংক্রামক ভাইরাস, যা এর আগে কখনো মানুষের মধ্যে ছড়ায়নি। ভাইরাসটির আরেক নাম ২০১৯ – এনসিওভি বা নভেল করোনাভাইরাস। এটি এক ধরণের করোনাভাইরাস। করোনাভাইরাসের অনেক রকম প্রজাতি আছে, কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ছয়টি মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে। তবে নতুন ধরণের ভাইরাসের কারণে সেই সংখ্যা এখন হবে সাতটি।
কোথা থেকে এলো করোনাভাইরাস?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ধারণা ভাইরাসটি উৎস কোনো প্রাণী। যতটুকু জানা যায়, মানুষের আক্রান্ত হবার ঘটনাটি ঘটেছে চীনের উহান শহরে সামুদ্রিক মাছ পাইকারি বিক্রি হয় এমন একটি বাজারে।
কোন কোন প্রাণী থেকে করোনাভাইরাস ছড়াচ্ছে?
করোনাভাইরাসের সঙ্গে সম্পর্ক আছে চীনের উহায়ের দক্ষিণ সমুদ্রের খাবারের পাইকারি বাজারের সঙ্গে। যদিও বেশ কিছু সামুদ্রিক প্রাণী করোনাভাইরাস বহন করতে পারে (যেমন বেলুগা তিমি), ওই বাজারটিতে অনেক জীবন্ত প্রাণীও থাকে, যেমন মুরগি, বাদুর, খরগোশ, সাপ- এসব প্রাণী করোনাভাইরাসের উৎস হতে পারে। গবেষকরা বলছেন, চীনের হর্সশু নামের এক প্রকার বাদুরের সঙ্গে এই ভাইরাসের ঘনিষ্ঠ মিল রয়েছে।
করোনাভাইরাসের লক্ষণঃ
সবার প্রথমে আমাদের করোনাভাইরাসের লক্ষণ সম্পর্কে জানতে জানতে হবে। করোনা ভাইরাসটি শরীরে ঢোকার পর সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিতে প্রায় পাঁচ দিন লাগে। প্রথম লক্ষণ হচ্ছে জ্বর, তারপর দেখা দেয় শুকনো কাশি, এক সপ্তাহের মধ্যে দেখা দেয় শ্বাসকষ্ট।
১. করোনা ভাইরাস সংক্রমণের প্রধান লক্ষণ হলো শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া।
২. এর সঙ্গে সঙ্গে থাকে জ্বর এবং কাশি।
৩. অরগ্যান ফেইলিওর বা দেহের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়া।
৪. নিউমোনিয়া হতে পারে।
প্রতিরোধে করনীয়ঃ
এই ভাইরাসটি মানুষের দেহ থেকে মানুষের দেহে ছড়ায়। এর জন্য যে সকল স্থানে করোনা ভাইরাস দেখা দিয়েছে সেসব স্থান এড়িয়ে চলতে হবে। নতুন এই ভাইরাসের কোন টিকা আবিস্কার হয়নি এখনো। করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে আমাদের সবার। সমস্যা অনুভব করলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আপনার পরিচিত কেউ আক্রান্ত মনে হলে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
১. সারা বিশ্ব যখন করোনা ভাইরাস নিয়ে চিন্তিত তখন আমরা মাস্ক নিয়ে এখনো উদাসীণ। আমাদের সবার ঘরের বাইরে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
২. করোনা ভাইরাস একজনের কাছ থেকে আরেকজনের কাছে ছড়ায়, তাই গণপরিবহন এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
৩. প্রচুর ফলের রস এবং পর্যাপ্ত পানি পান করুন। তবে বাইরের খোলা জায়গার ঠান্ডা পানি অথবা শরবত খাওয়া থেকে বিরত থাকুন, এতে আপনার পেটের সমস্যা হতে পারে।
৪. ঘরে ফিরে হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে নিন।
৫. কিছু খাওয়া কিংবা রান্না করার আগে ভালো করে ধুয়ে নিন।
৬. ডিম কিংবা মাংস রান্নার সময় ভালো করে সেদ্ধ করুন।
৭. আমরা সবাই জানি বাইক চালালে কাপড় দ্রুত ময়লা হয়। ময়লা কাপড় দ্রুত ধুয়ে ফেলুন। নিজে পরিষ্কার থাকুন এবং অন্যকে পরিষ্কার থাকতে উৎসাহিত করুন।
৮. নিয়মিত থাকার ঘর এবং কাজের জায়গা পরিষ্কার করুন।
৯. সুরক্ষিত থাকতে অবশ্যই আপনার কাছের মানুষকে মাস্ক ব্যবহারে উৎসাহিত করুন।
১০.আমরা অনেকেই নিয়মিত হেলমেট পরিষ্কার করি না, কিন্তু এখন এই বিষয় নিয়ে সচেতন হউন। কিছুদিন পর পর হেলমেটের প্যাডিং পরিষ্কার করুন।
১১. মাস্ক ব্যবহারে সচেতন থাকুন, এক মাস্ক একটানা বেশি দিন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। মাস্ক ধুয়ে পরিষ্কার রাখুন।
১২. আমরা যারা বাইক নিয়ে বাইরে থাকি তাদের পানি পান করা কম হয়, কিন্তু এখন বেশি বেশি পানি পান করার চেষ্টা করুন। গলা শুকিয়ে যাওয়ার আগে পানি পান করে নিন। যখন সুযোগ হবে হাত মুখ ধুয়ে নিতে ভুলবেন না।
১৩. ঠাণ্ডা জাতীয় খাবারগুলো পরিহার করুন, চেষ্টা করুন কুসুম গরম পানি পান করার।
১৪. ধূলাবালিযুক্ত রাস্তাগুলো পরিহার করুন। আমরা যারা বাইক নিয়ে ট্যুরে যায় আপাতত বাইক ট্যুর দেয়া থেকে বিরত থাকুন।
১৫. নিজের ইমিউন সিস্টেম ঠিক রাখতে বেশি বেশি ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন, যেমনঃ লেবু,মাল্টা ইত্যাদি।
আমরা বাইকাররা খুব আন্তরিক, একে অপরের সাথে দেখা হলে সবার আগে হাত মিলায় তারপর কোলাকুলি করি। কিন্তু আপাতত এই কাজগুলো না করা ভালো। যদি কেউ আপনার সাথে হাত না মিলাতে না চায় তাহলে এটা নিয়ে কেউ মন খারাপ করবেন না।
পরিশেষে বলতে চাই নিজে নিরাপদ থাকুন এবং অন্যকে সচেতন করে তুলুন।
করোনাভাইরাস থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে জানতে নিচের ভিডিওগুলো দেখতে পারেনঃ
নিজের অথবা পরিবারের কারো করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষন দেখা দিলে” ইনস্টিটিউট অব এপিডেমোলোজি ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ” আইইডিসিআরে যোগাযোগ করুন নিচের নম্বর গুলোর মাধ্যমে,
IECDR Hotline
+8801937000011
+8801937110011
+8801927711784
+8801927711785
তথ্য সূত্রঃ BBC NEWS । বাংলা
5 comments
Pingback: করোনার কারনে পিছিয়ে গেল ৬ষ্ঠ ঢাকা বাইক শো ২০২০!
Pingback: দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা ।
Pingback: চীনের মতে জাপানের ওষুধ করোনা সারাতে নিশ্চিতভাবে কার্যকর
Pingback: করোনাভাইরাস - নিয়ে কোনটা সঠিক কোনটা ভুল তথ্য? জানুন বিস্তারিত
Pingback: কাশি মানেই কি করোনাভাইরাস? জানুন বিস্তারিত । বাইকবিডি